শনিবার, ১৪ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
কেমন বাজেট চাই । ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে টালমাটাল বিশ্ববাজার। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি, সার ও খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে আমদানি ব্যয়ে বাড়ছে চাপ। কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। প্রকট হচ্ছে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতি। ডলারের বিপরীতে টাকার মানও কমছে। এ পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করছে অর্থ বিভাগ। কেমন হতে পারে সেই বাজেট? কী ধরনের উদ্যোগই বা থাকবে তাতে? বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, রিজার্ভের ঝুঁকি কমাতে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। বন্ধ করতে হবে অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির পরিমাণ। অর্থনীতির শৃঙ্খলা ধরে রাখতে আর্থিক খাত ও বাজার ব্যবস্থাপনায় তদারকি নিশ্চিত করতে হবে কঠোরভাবে। কী ধরনের পণ্য আমদানি হচ্ছে তাও মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে। ‘কেমন বাজেট চাই’ সম্পর্কে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নরের মতে গত বছর ঘোষিত বাজেটের চেয়েও আগামী জুনে যে বাজেট আসবে তার চ্যালেঞ্জ আরও বেশি। গতবারের   চ্যালেঞ্জ ছিল করোনা মহামারির প্রকোপ সামাল দিয়ে অর্থনীতিকে গতি দেওয়া। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধের অনিশ্চয়তা। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ না হলে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বাড়বে। অর্থনীতির অন্যান্য খাতেও পড়বে এর নেতিবাচক প্রভাব।

ড. সালেহউদ্দিন বলেন, আমদানি ব্যয় কেন বাড়ছে, কী আমদানি হচ্ছে- এসব বিষয় মনিটরিং করা উচিত। বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে নজরদারি চালাতে পারে। তিনি বলেন, করোনা মহামারি ও যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির কারণে বিশ্বব্যাপী এমনিতেই একটি মন্দাভাব চলছে। এ অবস্থায় অভ্যন্তরীণ চাহিদা এমন কিছু বাড়েনি যেটা আমদানি ব্যয়ে এত বেশি চাপ তৈরি করতে পারে। শিল্পের কাঁচামাল আমদানি হচ্ছে না কি অপ্রয়োজনীয়, বিলাসী দ্রব্য আসছে সেটি মনিটরিং করা দরকার। সাবেক গভর্নর বলেন, এবারের বাজেটকে সামনে রেখে এমন কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে, যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ দরকার। আমদানি চাপের কারণে এমনিতেই ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। রিজার্ভ কমে গেলে কী হতে পারে- সেটি আমরা পার্শ্ববর্তী দেশে দেখতে পাচ্ছি। এ পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত হবে বাজেটে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করা। রপ্তানি আয় বাড়াতে তৈরি পোশাক বাদে অন্যান্য সম্ভাবনাময় পণ্যের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এ ছাড়া জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানোর ওপর বাজেটে সুনির্দিষ্ট কৌশল থাকা উচিত। আমরা দেখলাম মালয়েশিয়া লোক নিয়োগের বিষয়ে বেশ হইচই হলো, এখন আবার চুপচাপ। তো যেসব দেশে জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ রয়েছে সেসব দেশে লোক পাঠানোর উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, ডলারের সংকট কেবল আমদানি ব্যয়ের কারণে হয়- এমনটি ভেবে বসে থাকলে চলবে না। কার্ব মার্কেটে ডলার কেনাবেচার ওপরও তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে কি না সেটিও খতিয়ে দেখা উচিত। কারণ ডলারের দাম বাড়লে শিল্পের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। বেড়ে যায় তৈরি পণ্যের দাম। তখন আবার ভোক্তার ওপর চাপ পড়ে। ইউক্রেন যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর বলেন, জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে। ইন্দোনেশিয়া এরই মধ্যে পাম তেলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অনেক দেশেই দাম বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে যেটি সমস্যা হচ্ছে- দাম বাড়ার পরও পণ্যটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে কোনো শৃঙ্খলা নেই। পাইকার-ডিলার-খুচরা ব্যবসায়ী যে যেভাবে পারছে মুনাফা করছে। এর সঙ্গে রয়েছে পরিবহন খাতে সমস্যা, ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি। ফলে এ ক্ষেত্রে শুধু আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর দোষ চাপালে হবে না। আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ খাতে যে সংকট আছে সেদিকে নজরদারি বাড়াতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর