রবিবার, ১৫ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

পার পেয়ে যাচ্ছে অবৈধ মজুদদাররা

♦ মৃত্যুদণ্ডের মতো কঠিন আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই ♦ শুধু জরিমানা করে দেওয়া হচ্ছে দায়সারা শাস্তি

আরাফাত মুন্না

পার পেয়ে যাচ্ছে অবৈধ মজুদদাররা

সারা দেশে গত বৃহস্পতিবার অভিযান চালিয়ে ২ লাখ ৬ হাজার ৬৬৬ লিটার অবৈধভাবে মজুদকৃত সয়াবিন তেল উদ্ধার করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। ওই সময় ১১৪টি প্রতিষ্ঠানকে ১৮ লাখ টাকার বেশি জরিমানাও করা হয়। সয়াবিন তেল অবৈধভাবে মজুদ ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অভিযোগ ওঠার পর সম্প্রতি সারা দেশে বেশকিছু গুদামে হানা দেয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। জব্দ করে কয়েক লাখ লিটার তেল। অবৈধ মজুদের দায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের করা হয় জরিমানা। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়নি। শুধু সয়াবিন তেল নয়, নিত্যপণ্য অবৈধভাবে মজুদদারদের বিচারের কঠিন আইন থাকলেও এর প্রয়োগ নেই।

আইনজ্ঞরা বলেন, আইনে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকলেও শুধু জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়ায় পার পেয়ে যাচ্ছে মজুদদার এসব অসাধু ব্যবসায়ী। অভিযানে গিয়ে আর্থিক জরিমানা করাকে দায়সারা শাস্তি বলছেন তারা। তবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের আইনে মামলা করার সুযোগ না থাকায় বাধ্য হয়েই জরিমানা করতে হচ্ছে। তবে পুলিশ ও অন্য কোনো সংস্থা চাইলে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ফৌজদারি মামলা করতে পারে মজুদদারদের বিরুদ্ধে।

১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২ ধারায় মজুদের সংজ্ঞা উল্লেখ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কর্তৃক যে কোনো সময়ে মজুদ বা মজুদ রাখার অনুমতিপ্রাপ্ত জিনিসের সর্বাধিক পরিমাণের চেয়ে বেশি কিছু মজুদ করা বা সংরক্ষণ করা। একই ধারায় ‘কালো-বাজারে লেনদেন’র সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, নির্ধারিত সর্বোচ্চ মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে কোনো কিছু বিক্রি বা ক্রয় করা। এই আইনটি সয়াবিন তেলের অবৈধ মজুদের ক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রযোজ্য বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

আইনটির ২৫(১)-এ বলা হয়েছে, ‘মজুদদারি অথবা কালোবাজারের কারবারের অপরাধে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা ১৪ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তাকে জরিমানাও করা যাবে। তবে শর্ত থাকে যে, মজুদদারির অপরাধের ক্ষেত্রে, উক্ত অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি প্রমাণ করতে পারেন যে, তিনি আর্থিক বা অন্যবিধ লাভের উদ্দেশ্য ছাড়া মজুদ করেছেন, তবে তিনি তিন মাস পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং তাকে অর্থদণ্ডও করা যাবে।’ একই আইনের ২৫ডি ধারায় বলা আছে, ‘বিশেষ ক্ষমতা আইনে যেসব কাজকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, সেসব কাজ করার চেষ্টা করা বা কাজ করার সহযোগিতা করাও অপরাধ হবে।’

অন্যদিকে ২০০৯ সালের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে কোনো পণ্য গুদামজাত করার অপরাধে কারখানা, দোকান, গুদাম সাময়িক বন্ধ করার, পণ্য যথাযথভাবে বিক্রি ও সরবরাহ না করলে সর্বোচ্চ এক বছরের শাস্তি ও জরিমানার বিধান রয়েছে। এই আইনে মজুদদার ও কালোবাজারি বিষয়ে কিছুই বলা নেই। তাছাড়া আইনে সামান্য শাস্তির ব্যবস্থা থাকলেও তা প্রদানের নজির দেখা যায় না।

জানতে চাইলে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বড় বড় মজুদদারের বিরুদ্ধে আসলে এখন মামলা করার সময় হয়েছে। তাদের ১-২ লাখ টাকা জরিমানা করা আসলে বাদাম খাওয়ার মতো। তাই এ ক্ষেত্রে বিশেষ ক্ষমতা আইনের প্রয়োগ করা যায়। তিনি বলেন, এবার সয়াবিন তেল মজুদের ঘটনায় আসলে সরকারকেই দায়ী করব। কারণ এবার অনেক আগে থেকেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল ঈদের পর সয়াবিন তেলের দাম পুনর্বিবেচনা করা হবে। তাই অনেক ছোট ছোট ব্যবসায়ীও তেল মুজদ করেছেন। এ কারণে সয়াবিন তেল হঠাৎ করেই মার্কেটশূন্য হয়ে গেছে। দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কথা বলার ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেন তিনি।

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মজুদদার ও কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। তবে এই আইনের প্রয়োগ এক্ষেত্রে একেবারেই দেখা যাচ্ছে না। অভিযানে গিয়ে শুধু জরিমানা করা হচ্ছে দায়সারাভাবে। তাই আর বিলম্বের সুযোগ নেই। এখন থেকেই মজুদদার-কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ব্যবহার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর