রবিবার, ১৫ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
নিউমার্কেটে সংঘর্ষ

প্রধান সন্দেহভাজন গ্রেফতার হয়নি এক মাসেও

সাখাওয়াত কাওসার

প্রায় এক মাসেও গ্রেফতার হয়নি নিউমার্কেট ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত কুরিয়ার সার্ভিসকর্মী নাহিদ হাসান হত্যা মামলার প্রধান আসামি বাশার ইমন। শনাক্ত হয়নি দোকানকর্মী মোরসালিনের হত্যাকারীও। হত্যাকাণ্ডের সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলেও এত দিনে ইমন গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইমন দেশের একটি সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করছে। অন্যদিকে ২০ এপ্রিল সংঘর্ষের সমঝোতা বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সব পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে ভবিষ্যৎ সংঘর্ষ এড়াতে কোর কমিটি গঠন করার কথা বলা হলেও গতকাল পর্যন্ত সেই কমিটি গঠন হয়নি। এ নিয়েও আতঙ্ক ভর করছে নিউমার্কেট-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে। কারণ ঈদ ছুটি-পরবর্তী সময়ে, বিশেষ করে আগামীকাল থেকে ছাত্রছাত্রীরা পুরোদমে ক্লাসে ফিরছেন।

১৮ এপ্রিল রাতে নিউমার্কেটের দোকান মালিক-কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের প্রথম দফায় সংঘর্ষ বাধে। পরদিন ১৯ এপ্রিলও দিনভর এ সংঘর্ষ চলে। এ ঘটনায় দুজন নিহত হন। তাদের একজন কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী নাহিদ হাসান। অপরজন নিউ সুপারমার্কেটের দোকানকর্মী মোহাম্মদ মোরসালিন। সংঘর্ষে আহত হন দুই শতাধিক।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ওই ঘটনার একপর্যায়ে নাহিদ হাসানকে রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান সিয়াম। নাহিদকে সিয়াম আঘাত করার পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপান আরেক শিক্ষার্থী ইমন। সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচটি মামলা হয়েছে। এতে আসামির সংখ্যা ১ হাজার ৭২৪ জন। এর মধ্যে হত্যা মামলা দুটি তদন্ত করছে ডিবি। অন্য তিনটি মামলা তদন্ত করছে নিউমার্কেট থানা পুলিশ।

এদিকে ২০ এপ্রিল রাতে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের ডিজি অধ্যাপক নেহাল আহমেদ তার বক্তব্যে বলেছিলেন, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে একটি মনিটরিং সেল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই সেলে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা, প্রশাসনের প্রতিনিধি থাকবেন। ছাত্র প্রতিনিধিও থাকবেন সেখানে। শিক্ষার্থীদের মতো দোকানকর্মীদেরও পরিচয়পত্র রাখা বাধ্যতামূলক করার ওপর জোর দেওয়া হয় বৈঠকে। পাশাপাশি ক্রেতাদের সঙ্গে সদাচরণ শেখাতে প্রয়োজনে দোকানকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার কথা বলেন নেহাল আহমেদ। তবে গত ২৫ দিনেও সেই কোর কমিটি গঠন করা হয়নি। এ নিয়ে আবারও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন নিউমার্কেট ও আশপাশের মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, সমঝোতা বৈঠক-পরবর্তী ঘোষিত মনিটরিং সেল গঠন না করার কারণে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। ছাত্রদের একটি পক্ষ উসকানির সুযোগ নিতে পারে আবারও।

এ বিষয়ে নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, ‘ঘোষণা অনুযায়ী একটি কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকে কোনো কিছু এখনো জানানো হয়নি। তবে একবার ঢাকা কলেজের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক শিকদার আমাকে ফোন করে ভবিষ্যতে ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা চেয়েছিলেন। আমিও তাকে আশ্বস্ত করেছি। এর বাইরে আমাদের লাগোয়া অন্যান্য মার্কেট সমিতির লোকজন আমার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। যদিও একটা বিষয় না বললেই নয়, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনার পুরো চিত্র এখনো তুলে ধরা হয়নি।’

ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ টি এম মইনুল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ক্যাম্পাস খুললেও আমাদের ছাত্ররা এখনো পর্যন্ত ওইভাবে হলে ওঠেনি। তারা এলেই আমরা যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়ানোর জন্য একটি কমিটি গঠন করব।’

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে ক্যাপিটাল ও ওয়েলকাম নামে দুটি খাবারের দোকানের কর্মচারীদের বাগ্বিতণ্ডাকে কেন্দ্র করে। সেখানে একটি পক্ষ দুষ্কৃতকারীদের নিয়ে আসে আরেক পক্ষকে শক্তি দেখাতে। সেখান থেকেই ব্যাপক আকারে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সে সংঘর্ষ চলাকালে ইটের আঘাতে চন্দ্রিমা মার্কেটের সামনে লুটিয়ে পড়েন কুরিয়ার সার্ভিসকর্মী নাহিদ। এ সময় তাকে রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান সিয়াম। নাহিদকে সিয়াম আঘাত করার পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপান আরেক শিক্ষার্থী ইমন। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সর্বশেষ মঙ্গলবার ডিবির অভিযানে গ্রেফতার হওয়া দুজন হলেন নিউমার্কেট ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের কর্মচারী কাউসার হোসেন ও মো. বাবু হোসেন। এর সাত দিন আগে এ ঘটনায় মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে সজীব ও মেহেদী হাসান ওরফে বাপ্পি নামের দুই দোকানকর্মীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এর আগে গ্রেফতার হওয়া ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা হলেন মো. আবদুল কাইয়ুম, পলাশ মিয়া, মাহমুদ ইরফান, মো. ফয়সাল ইসলাম, মো. জুনাইদ বোগদাদী ও মাহমুদুল হাসান সিয়াম। এ ছাড়া ঘটনায় পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বাসা থেকে বিএনপি নেতা মকবুল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন ২৩ এপ্রিল এ মামলায় আসামি মকবুলের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মো. সাজ্জাদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আসলে আমাদের মূল ফোকাস হচ্ছে নাশকতা ও পুলিশ অ্যাসল্ট মামলার আসামিদের দিকে। তাদের একজন ওয়েলকাম ফাস্টফুডের দোকানকর্মী মো. মেহেদী হাসান বাপ্পি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এখন ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের কয়েকজনকে আমরা খুঁজছি। তবে হত্যা মামলার আসামিদের দিক থেকেও আমরা দৃষ্টি সরাচ্ছি না।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর