রবিবার, ১৫ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

ইমোতে সুন্দরী নারীর টোপ

আলী আজম

সুন্দরী নারীদের ছবি ব্যবহার করে ইমো আইডি খুলে টাকার বিনিময়ে অসামাজিক কার্যকলাপ করার প্রলোভন দেওয়া হতো প্রবাসীদের। যারা তাদের ফাঁদে পা দিত, তাদের সঙ্গে বিশেষ অ্যাপস ব্যবহার করে মেয়ে কণ্ঠে কথা বলা এবং বিভিন্ন সুন্দরী নারীদের দিয়ে বানানো ভিডিও দেখানো হতো।

শুধু ইমো নয়, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গ্রুপ খুলে বিশেষ বার্তা পাঠিয়ে প্রবাসীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল চক্রটি। তারা সুন্দরী নারীদের দিয়ে ফাঁদ তৈরি করে প্রবাসীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ছাড়া প্রবাসীদের ইমো হ্যাক করে তাদেরকে ব্ল্যাকমেল এবং স্বজনদের কাছ থেকে বিভিন্ন কৌশলে টাকা হাতিয়েছে।

এভাবে প্রতারণার ফাঁদে পড়া এক ভুক্তভোগী শাহবাগ থানায় করা মামলা করলে প্রতারক চক্রের তিনজন ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। তারা হলেন মো. সাঈদ হাসান সাগর, মো. নয়ন আলী ওরফে নিয়ন আহম্মেদ ও মো. সজল আলী। গত শুক্রবার নাটোরের লালপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছে ছয়টি মোবাইল ফোন ও ১৪টি সিম কার্ড পাওয়া যায়। গ্রেফতার সাঈদ রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং করেছে। নিয়ন রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ছে। দুজনের নামেই আগে থেকে একটি করে মামলা আছে। এ ছাড়া সজল আলী এইচএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করে সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালাত।

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই চক্রটি প্রবাসীদের টার্গেট করে কাজ করত। তারা মূলত সুন্দরী নারীর টোপ দিয়ে ইমো হ্যাক করে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেয়। গত তিন বছর থেকে ইমো হ্যাক করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। একেকজন বছরে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা আয় করে। প্রবাসীদের ফাঁদে ফেলার জন্য তারা প্রবাসীদের বিভিন্ন গ্রুপে কমেন্টের মাধ্যমে জানাত ইমো সেক্স করতে চাইলে এই নম্বরে কল করুন। সুন্দরী মেয়েদের নম্বর ও সুন্দরী মেয়ে লাগলে কল করুন। সুন্দরী মেয়েদের সঙ্গে সেক্স করতে চাইলে ও ভালো মনের বন্ধু চাইলেও যোগাযোগ করার কথা বলে চক্রটি। চক্রটি ইউটিউবে কোনো এক সুন্দরী মেয়ের ছবি দিয়ে চ্যানেল খোলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বিভিন্ন মেয়ের ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করে তার সঙ্গে ভয়েস এডিট করে ইউটিউবে ভিডিও প্রচার করে। ভিডিওতে প্রবাসীদের আকৃষ্ট করার জন্য বিশেষ অ্যাপস ব্যবহার করে প্রতারকরা নারী কণ্ঠে আপত্তিকর কথাবার্তা বলত। তারা প্রবাসীর ইমোতে কল দিয়ে মেয়ে কণ্ঠে কথা বলে তাদের ইমোতে কল দিতে বলত। তাদের ইমোতে কল দিলেই প্রবাসীদের ব্যক্তিগত নম্বর পেয়ে যেত। একপর্যায়ে টার্গেটকৃত প্রবাসীর ইমো অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হতো। একটি অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর কন্টাক্ট লিস্টের কথোপকথন পর্যালোচনা, লেনদেন, পারিবারিক তথ্য, ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও আয়ত্তে নিয়ে ব্ল্যাকমেল করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত। ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের বিভাগের এডিসি আশরাফ উল্লাহ বলেন, চক্রটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে সুন্দরী মেয়েদের ছবি দিয়ে ভিডিও তৈরি করে প্রবাসীদের সঙ্গে ইমোতে প্রতারণা করে আসছিল। এই চক্রে সিম ব্যবসায়ী, বিকাশ, নগদের এজেন্ট এবং আরও কিছু ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তাদেরকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।ইমো, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের পরামর্শ দিয়ে এডিসি আরও বলেন, এ ধরনের অপরাধীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রবাসে যাওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিত। ৪/৬ ডিজিট সংবলিত কোনো ফোন নম্বর হয় না। তাই এরকম ডিজিট কিংবা ওটিপি নিকটতম কাউকে দেওয়া উচিত নয়। এ ছাড়া ফেসবুক কিংবা ইমোর কোনো অ্যাকাউন্টে কেউ অ্যাড করলে তা থেকে লিভ নেওয়া নিরাপদ বলে পরামর্শ দেন তিনি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর