সোমবার, ১৬ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকারে মেয়র তাপস

ডিএসসিসিতে সুশাসন নিশ্চিত করতে পেরেছি

হাসান ইমন

ডিএসসিসিতে সুশাসন নিশ্চিত করতে পেরেছি

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, ডিএসসিসি একটি জবাবদিহি ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এ এলাকার নাগরিকরা কোনো ঝামেলা ও ঘুষ ছাড়াই সেবা পেতে পারে। মানুষ এই আস্থার জায়গায় আসতে পেরেছে। দক্ষিণ সিটিতে আমরা সুশাসন নিশ্চিত করতে পেরেছি। তিনি বলেন, এর বড় প্রমাণ হলো, প্রথম বছরেই ৭০৩ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করেছি। দায়িত্ব যখন নিয়েছি, তখন রাজস্ব ছিল ৫০০ কোটি টাকা। এ বছর আশা করছি ৮০০-৯০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে পারব। কোনো রকম কর বাড়ানো ছাড়াই সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমরা এই সক্ষমতায় পৌঁছাতে পেরেছি। এতেই প্রমাণ হয়, আমরা নগরবাসীর আস্থার জায়গায় পৌঁছেছি। গত বুধবার নগর ভবনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দক্ষিণ সিটির মেয়র এসব কথা বলেন।  আজ (সোমবার) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার দুই বছর পূর্ণ করলেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এই দুই বছরে নির্বাচনী ইশতেহার কতটা বাস্তবায়ন হলো এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানাতে বাংলাদেশ প্রতিদিন সিটি মেয়রের মুখোমুখি হয়। নির্বাচনী ইশতেহারে ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সচল ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা ও উন্নত ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। এর মধ্যে কতটুকু বাস্তবায়ন করেছেন মেয়র? তিনি বলেন, শপথ নেওয়ার পর থেকে কাজ শুরু করেছি। আধুনিক নগরী গড়তে ৩০ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান করছি। এ পরিকল্পনার ভিতর বাসযোগ্য ঢাকার সব উপকরণ থাকছে। এ পরিকল্পনার আলোকে নগরীকে সাজাচ্ছি। রাজধানীর জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রথম থেকে কাজ শুরু করেছি। নগরীতে জলজট হয় এমন ১২৫টি স্থান গত বছর চিহ্নিত করেছি এবং সে আলোকে কাজও করেছি। বিগত বছরের চেয়ে গত বছর জলাবদ্ধতা কম হয়েছে। এবার আরও কম হবে বলে আশা করছি। খালের প্রবাহ নিশ্চিতে ১৩টি খালের বর্জ্য অপসারণ করেছি। বক্স কালভার্ট ও ড্রেন পরিষ্কার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া ৪টি খাল সংস্কারে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে যা আগামী অর্থবছরে কাজ শুরু হবে। আরেকটি বড় প্রতিশ্রুতি ছিল বুড়িগঙ্গা নদীকে দূষণমুক্ত করা, এর নাব্যতা বাড়ানো, উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন। এ প্রসঙ্গে মেয়র জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পর বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেল পুনরুদ্ধার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। স্বল্প মেয়াদি প্রদক্ষেপ হিসেবে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে পলি অপসারণ, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার এবং দুই পাশে সীমানা স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। দীর্ঘ মেয়াদি কাজের অংশ হিসেবে ‘বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেল পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন কাজের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের কার্যক্রম চলছে। পরবর্তীতে বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেল সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণের জন্য ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তবে আদি বুড়িগঙ্গা ও কামরাঙ্গীচরকে নিয়ে আমরা একটি বৃহৎ পরিকল্পনা নিয়েছি। এলাকাটিকে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলব। সেখানে নিজস্ব একটি ৫০তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, ফাইভ স্টার হোটেল, আধুনিক শপিংমলসহ নানান স্থাপনা তৈরি করা হবে। এই এলাকায় ১৩৩৪ একর জমি রয়েছে, যাকে ঘিরে মহাপরিকল্পনা করা হচ্ছে। 

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় শতভাগ বর্জ্য রাস্তায়, নর্দমায় পড়েছিল। খালগুলো বর্জ্য দিয়ে ভরাট ছিল। প্রথম বছরে খালগুলো থেকে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ময়লা অপসারণ করেছি। এবার আমরা ৪ লাখ মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করেছি। ধীরে ধীরে বর্জ্য কমে আসছে। কারণ, মানুষ এখন সচেতন হচ্ছে। একইসঙ্গে আমরাও ৫১টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণ করেছি। আরও কয়েকটি নির্মাণের কাজ চলছে। রাতে বাসাবাড়ি থেকে শৃঙ্খলিতভাবে বর্জ্য সংগ্রহ করে এসটিএসে রাখা হয়। সেখান থেকে রাতে ড্রাম ট্রাকে ল্যান্ডফিল্ডে ফেলা হয়। যত্রতত্র ময়লা ফেলা হয় না। এখন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। ফুটপাথে পথচারী চলাচল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পথচারীবান্ধব শহর গড়ে তুলছি। যখন যেখানে রাস্তা নির্মাণ করছি, সেখানে পর্যাপ্ত ফুটপাথ নির্মাণ করছি। সেখানে ন্যূনতম ৫ ফিট প্রশস্ত ফুটপাথ রাখা হচ্ছে যাতে নগরবাসী স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটাচলা করতে পারে। যানজট প্রসঙ্গে সিটি মেয়র বলেন, আমাদের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের বিষয় যানজটমুক্ত নগরী গড়া। এর জন্য বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওতায় একটি রুটে সার্ভিস চালু করেছি। এটি সফল হওয়ায় নতুন করে আরও তিনটি রুটে চালু করার প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে টার্মিনালগুলো স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। মশা রাজধানীবাসীকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। মশা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে ব্যারিস্টার তাপস বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মশা নিধনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। মশার বংশ বিস্তার রোধে ওয়ার্ডভিত্তিক স্প্রেম্যান বাড়িয়েছি। সকালে লার্ভিসাইডিং করার জন্য সাতজন এবং বিকালে এডাল্টিসাইডিং করতে ছয়জন স্প্রেম্যান কাজ করে প্রতি ওয়ার্ডে। এর দরুন এবার কিউলেক্স মশার উৎপাত খুবই কম ছিল। একইসঙ্গে এডিস মশার বিস্তার রোধে আমরা ওয়ার্ডভিত্তিক ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালু রেখেছি এবং ১০টি অঞ্চলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। পার্ক ও বিনোদনের স্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের ৩১টি পার্ক ও খেলার মাঠের অধিকাংশের সংস্কার করে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। একইসঙ্গে আরও কিছু পার্ক ও মাঠের সংস্কার কাজ চলছে। জাতীয় শিশু পার্কের উন্নয়ন কাজ শুরু করার জন্য একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করি আগামী বছরে আমাদের অংশের কাজ শুরু করতে পারব। তবে এ কাজ শেষ করতে দুই বছর সময় লাগবে।

নতুন ১৮ ওয়ার্ডের উন্নয়ন প্রসঙ্গে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, নতুন ১৮ ওয়ার্ড নিয়ে আমাদের মহাপরিকল্পনার আওতায় রোড নেটওয়ার্ক, মাঠ ও পার্ক, অবকাঠামো উন্নয়নসহ সব পরিকল্পনা অনুযায়ী হবে। তবে ইতোমধ্যে নতুন ওয়ার্ডে যেসব উন্নয়ন হয়েছে সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে কাজ চলছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১ কোটি মানুষের বসবাস। এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে সেবার আওতায় আনা সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা ইতোমধ্যে ধারণ ক্ষমতার শেষের দিকে চলে আসছে। মানুষের ঢাকামুখী স্রোত না কমালে হাজার হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেও লাভ হবে না। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ঢাকার আশপাশের শহরগুলোকে পরিকল্পিত উপায়ে গড়ে তোলা। মানুষকে ঢাকা বিমুখী করা। এখন ঢাকা শহরে দুই কোটি মানুষ বসবাস করছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণে ১ কোটি লোকের বসবাস। আমরা যেসব অবকাঠামো উন্নয়ন করছি, তা শুধু এ নির্দিষ্ট সংখ্যার মানুষের জন্য। এর অতিরিক্ত মানুষকে সেবার আওতায় আনা কঠিন হয়ে যাবে।

সর্বশেষ খবর