বুধবার, ১৮ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
বিশেষজ্ঞ অভিমত । ড. জাহিদ হোসেন

ব্যাংক ও খোলাবাজারের ব্যবধান কমাতে হবে

মানিক মুনতাসির

ব্যাংক ও খোলাবাজারের ব্যবধান কমাতে হবে

ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে সবার আগে ব্যাংক ও খোলাবাজারে (ফরমাল ও ইনফরমাল মার্কেট) রেটের ব্যবধান কমাতে হবে। একই জিনিসের দাম ব্যাংকে এক রেট আর ব্যাংকের বাইরে আরেক রেট। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এখানেই তো বড় ধরনের ফাঁক। সিন্ডিকেট এ সুযোগটাই কাজে লাগায়। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংককে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এর ব্যবধান কমাতে হবে। এক রেট না হলেও সেটা খুবই কাছাকাছি হতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।

এ প্রসঙ্গে গতকাল তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, রিজার্ভ থেকে ডলার এনে তা মার্কেটে বিক্রি করে সাময়িক কিছু উপকার হতে পারে। কিন্তু এটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। স্থায়ী সমাধান করতে হলে ডলারের বাজারে স্বচ্ছতা ও জববাদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি ও কৌশল বদলাতে হবে। যেমন সবার আগে ব্যাংক ও কার্ব মার্কেটের ব্যবধান কমাতে হবে। খোলাবাজারে যে যার মতো ব্যবসা করবে তা চলতে পারে না। এতে বিশৃঙ্খলা থাকবে। সংকট বাড়বে। সিন্ডিকেটও থাকবে। এ ছাড়া চাহিদা ও জোগানের ব্যবধানটাও কমাতে হবে। দেখুন ১০১ বা ১০২ টাকা কিন্তু সব ট্রানজেকশনে নয়। এটা কোনো কোনো ক্ষেত্রে। এই যে বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে এ রেটটাকে নিয়ন্ত্রণ করে সেটাতেও সমস্যা আছে। তারা গতকাল (পরশু) ৮০ পয়সা বাড়িয়েছে ডলারের দাম। এটা কিন্তু সবখানে প্রযোজ্য হচ্ছে না। শুধু ব্যাংকে প্রযোজ্য। তা-ও সব ব্যাংকে নয়। এখানে ব্যাংকেও যে রেট থাকে তার মধ্যেও ফাঁকফোকর থাকে। ব্যাংকগুলোও এটা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে সঠিক তথ্য দেয় না। রেট কমিয়ে রিপোর্ট দেওয়া হয়। ফলে এসব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে হবে। তিনি বলেন, এ ছাড়া ডলারের বাজারে আরেকটা বড় সংকট রয়েছে সেটা হলো চাহিদা ও জোগানের মধ্যে এক ধরনের গ্যাপ। এ গ্যাপটা মূলত তৈরি হয়েছে দুটি কারণে। এর একটি হলো বিশ্বব্যাপী পণ্যমূল্য বৃদ্ধি। যার ফলে সারা বিশ্বেই ডলারের চাহিদা বেড়েছে। বিনিয়োগকারীরা পুঁজির নিশ্চয়তার জন্য সোনা কিনত। এখন ডলারও কিনে রাখে। এ ছাড়া বৈশ্বিক মহামারি কভিড-উত্তর পৃথিবীতে নতুন ধরনের কিছু চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে। এতে নতুন কিছু সংকটও তৈরি হয়েছে। যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এতে বিশ্বে জ্বালানির বাজারে একটা প্রভাব পড়েছে। যার প্রভাবেও ডলারের বাজারে নেতিবাচকতা সৃষ্টি করেছে। ফলে এখন কৌশল বদলাতে হবে। জরুরি পণ্য বাদে আমদানি নিরুৎসাহ করতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার তো কিছু উদ্যোগ নিয়েছেই, যেমন, অযথা বা কম জরুরি বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ ঘোষণা করেছে। চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর ব্যাপারে একটু ধীরগতির নীতি নিয়েছে। আবার সম্প্রতি ৫০০ কোটির বেশি মার্কিন ডলার রিজার্ভ থেকে বাজারে বিক্রি করেছে। আরও কিছু নীতি-কৌশলের পরিবর্তন আনতে হবে। স্বচ্ছতা-জবাবদিহি বাড়াতে হবে। এসব উদ্যোগ কার্যকর করতে পারলে বাজারে এক ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে এর জন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হবে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, ডলারের দাম বাড়লে কেউ কেউ তো উপকৃত হয়ই। শুধু রপ্তানি করাই নয়, অন্যদিকেও উপকার হয়। যেমন বাজারে চাহিদাও কিন্তু কিছুটা কমে। ধরুন কেউ নিয়মিত দেশের বাইরে স্বাস্থ্য চেকআপ করাতে যান। যেটা এখানেই করানো যায়। যখন ডলারের দাম বাড়বে তখন কিন্তু তিনি যাওয়ার আগে চিন্তা করবেন খরচ বেড়ে যাবে। ফলে ডলারের দাম বাড়লে তাৎক্ষণিক কিছু লাভও হয়। যেমন যারা রেমিট্যান্স পাঠায় তারা কিন্তু লাভবান হন। মোট কথা হলো ডলারের বাজার ঠিক রাখতে হলে সবার আগে এখানে নীতি ও কৌশল বদলাতে হবে। বাজারটায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংক ও খোলাবাজারের মধ্যে ব্যবধানটা কমাতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর