বুধবার, ১৮ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে ফিরেছিলাম দেশে : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে ফিরেছিলাম দেশে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে আমি দেশে ফিরেছিলাম। কারণ, এটা আমার বাবার (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) স্বপ্ন ছিল।

গতকাল সকালে রাজধানীর শেরেবাংলানগরে এনইসি মিলনায়তনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় তিনি এ কথা বলেন। সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সভায় যোগ দেন তিনি।

১৯৮১ সালের ১৭ মে নির্বাসিত জীবন থেকে ফিরে আসার দিনটির    কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন আমি বিমানবন্দরে অবতরণ করি, তখন আমি আমার নিকটাত্মীয়দের কাউকে পাইনি। কিন্তু লাখো মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। এটাই আমার একমাত্র শক্তি এবং আমি এই শক্তি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।’ দেশে ফেরার পর তিনি দেশব্যাপী সফরের সময় নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘তবে আমি বাংলাদেশের মানুষের আস্থা, ভালোবাসা পেয়েছি। কত অপপ্রচার, কত কথা, কত কিছু তার পরেও বাংলাদেশের জনগণ তাঁর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছেন।’ বাসস।

শিক্ষা জীবন থেকে রাজনীতি এবং মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করলেও এত বড় দায়িত্ব নেওয়ার কথা কখনো তাঁর ভাবনাতেও ছিল না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ১৭ মে দেশে ফিরে দেশের মানুষের জন্য তাঁকে কিছু করতে হবে। তিনি বলেন, লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত এ দেশের স্বাধীনতা, কখনো ব্যর্থ রাষ্ট্র হতে পারে না। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নাগরিকরা সবসময় বিশে^ মাথা উঁচু করেই চলবে। করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা এবং দেশে দেশে মুদ্রাস্ফীতি এবং খাদ্য সংকটের প্রসঙ্গ টেনে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং দেশবাসীকে মিতব্যয়ী হওয়ারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।

সরকারপ্রধান বলেন, ইউরোপের অনেক দেশ আছে যেখানে ১৭ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। জার্মানির মতো জায়গায় ভোজ্য তেলের অভাব। একমাত্র অলিভ ওয়েল ছাড়া কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। ইংল্যান্ডের মতো জায়গায় তেল নির্দিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে, এক লিটারের বেশি কেউ নিতে পারবে না। আমেরিকায় মুদ্রাস্ফীতি ৮ ভাগের ওপরে উঠে গেছে, ১০ ভাগে উঠে যাবে। ১ ডলারের ডিজেল-পেট্রোলের দাম ৪ ডলারে উঠেছে। তিনি বলেন, অনেক জায়গায় এখন মানুষের এক বেলা খেতেই কষ্ট হচ্ছে এবং সমগ্র বিশে^ই এ অবস্থা বিরাজমান। তারপরও তাঁর সরকার এ দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হলেও আমদানিনির্ভর এসব পণ্যের প্রভাব তো অর্থনীতিতে পড়বেই। কারণ, উৎপাদন যেমন হ্রাস পেয়েছে তেমনি শিপমেন্ট ব্যয় বেড়ে গেছে। যে কারণে দেশের ভিতর একটু মূল্যস্ফীতি বা জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি হতে পারে।

শেখ হাসিনা এই প্রেক্ষাপটে দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, সবাইকে আমি এটুকু অনুরোধ করব, সবাই যদি একটু সাশ্রয়ী হন, মিতব্যয়ী হন বা সব কিছু ব্যবহারে সবাই যদি একটু সতর্ক হন তাহলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তিনি জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই দেশের উৎপাদন বাড়ানোর এবং এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী আসন্ন বাজেট ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমরা এই প্রতিকূল অবস্থার  মধ্যেও বাজেট দিতে যাচ্ছি এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আজকে অনুমোদন দেব। সেখানেও আমি মনে করি প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং সচিবরা এখানে রয়েছেন, পরিকল্পনা কমিশনের যারা রয়েছেন তাদেরকে অনুরোধ করব আমরা আপনাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রকল্প অনুমোদন করে দেব বা প্রকল্প নেব এটা ঠিক। কিন্তু এগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আপনাদের অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে। যেটা দেশের জন্য একান্তভাবে প্রয়োজন এ মুহূর্তে আমরা শুধু সেগুলোই বাস্তবায়ন করব। পদ্মা সেতুতে রেল লাইন রাখা এবং অর্থ ব্যয় নিয়ে সমালোচনার উত্তরে নানা পরিসংখ্যান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর একটি টাকাও আমরা কারও কাছ থেকে ধার করিনি বা ঋণ নিইনি। এটি বাংলাদেশের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে করা হচ্ছে। তিনি মানুষকে বিভ্রান্ত করার মতো তথ্য প্রদানকারী সমালোচকদের সংযত হয়ে কথা বলারও পরামর্শ দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার পত্রিকা পড়ে নয়, বরং দেশের মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে এবং তাদের প্রয়োজন অনুভব করে দেশের উন্নয়নে নানামুখী সিদ্ধান্ত নিয়ে এতদিন দেশ পরিচালনা করেছে এবং সেটাই অব্যাহত রাখতে চান।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় বৈঠকে উপস্থিত সবাইকে কোথায় কী লেখা হলো না হলো তা নিয়ে চিন্তা না করে নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলার আহ্বান জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর