বুধবার, ১৮ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

নর্থ সাউথ ট্রাস্টি ও আশালয় হাউজিং এমডির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও গ্রেফতার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নর্থ সাউথ ট্রাস্টি ও আশালয় হাউজিং এমডির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও গ্রেফতার দাবি

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িতদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও গ্রেফতার দাবিতে গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মানববন্ধন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আর্থিক কেলেঙ্কারিতে দুদকের এজাহারভুক্ত আসামি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি ও আশালয় হাউজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দ্রুত গ্রেফতার ও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার দাবিতে মানববন্ধন করেছে আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশন। গতকাল সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির সামনে মানববন্ধনে এ দাবি জানায় তারা।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ৫ মে প্রায় ৩০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান ও আশালয় হাউজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার চার্জশিটভুক্ত এই ছয়জনই ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। বিভিন্ন গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সত্ত্বেও আসামিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। অভিযুক্ত প্রত্যেকেই সমাজের প্রভাবশালী ও ক্ষমতাশালী ব্যক্তি। তাই তাদের গ্রেফতারে এমন গড়িমসি চলছে। কিন্তু তাদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় না আনলে এই সিন্ডিকেটের কবল থেকে নর্থ সাউথের মতো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।

মানববন্ধন আয়োজক ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ড. সুফী সাগর সামস বলেন, মূলত আজিম-কাসেম সিন্ডিকেটের কারণেই নর্থ সাউথ পরিণত হয়েছে দুর্নীতি-অনিয়ম ও জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্যে। আসামিরা বিচারিক প্রক্রিয়ায় যেন কোনো প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সেজন্য তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও গ্রেফতার করে দ্রুত বিচারের দাবি জানাই। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ট্রাস্টি আজিজ আল কায়সার টিটোও এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তার বাবা এম এ হাসেম নর্থ সাউথে থাকাকালেই এই সিন্ডিকেটের অংশ ছিলেন। কিন্তু এক অজ্ঞাত কারণে তাকে মামলা থেকে বাইরে রাখা হয়েছে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত টিটোসহ সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তার সিঙ্গাপুরে বিপুল পরিমাণ অর্থের হিসাব নেওয়ার জন্যও দাবি জানান তিনি।

মানববন্ধনে বলা হয়- লাগামহীন দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা আর জঙ্গিবাদে পর্যুদস্ত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির ২৫ হাজার শিক্ষার্থী। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মানও ক্রমেই নিম্নমুখী। নর্থ সাউথ এখনো জঙ্গি পৃষ্ঠপোষকতার খোলস থেকে বেরই হতে পারেনি।

বিশ্ববিদ্যালয়টির শীর্ষ ব্যক্তিদের কম মূল্যের জমি বেশি দামে ক্রয়, ডেভেলপার্স কোম্পানি থেকে কমিশন, ছাত্রদের টিউশন ফি থেকে অবৈধভাবে ট্রাস্টি বোর্ডের ৯ সদস্যের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয়, ১ লাখ টাকা করে সিটিং অ্যালাউন্স, অনলাইনে মিটিং করেও সমপরিমাণ অ্যালাউন্স গ্রহণ, নিয়ম ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ডের ৪০৮ কোটি টাকা নিজেদের মালিকানাধীন ব্যাংকে এফডিআর, ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করে কয়েকগুণ বেশি শিক্ষার্থী ভর্তিসহ নানা অনিয়ম ও জঙ্গি মদদ দেওয়ার বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন দফতরে জমেছে অভিযোগের পাহাড়।

মামলার এজাহারের উদ্ধৃতি দিয়ে বক্তারা বলেন, আইন অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় একটি দাতব্য, কল্যাণমুখী, অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় অর্থাৎ সরকারের সুপারিশ অনুমোদনকে পাশ কাটিয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের কয়েক সদস্যের অনুমোদন-সম্মতির মাধ্যমে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ডেভেলপমেন্টের নামে ৯০৯৬.৮৮ ডেসিমেল জমির ক্রয়মূল্য বাবদ ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা অতিরিক্ত অর্থ অপরাধজনকভাবে প্রদান করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে কম দামে জমি কেনা সত্ত্বেও বেশি দাম দেখিয়ে প্রথমে বিক্রেতার নামে টাকা প্রদান করেন, পরে বিক্রেতার কাছ থেকে নিয়ে নিজেরা আত্মসাৎ করেন।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সংবাদপত্র (গণমাধ্যম) কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান তালুকদার, বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান এম ইব্রাহিম পাটোয়ারি, সাংবাদিক নেতা কালিমুল্লা ইকবালসহ অন্যরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর