বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগ কারও ভোট কেড়ে নেয় না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগ কারও ভোট কেড়ে নেয় না : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ কারও ভোট কেড়ে নেয় না। জনগণের ভোটের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। গতকাল আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠান হয়।

এ সময় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলীয় সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী আবেগি কণ্ঠে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরার প্রেক্ষাপট এবং ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাসহ নিহত পরিবারের সদস্যদের কথা স্মরণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বারবার ষড়যন্ত্রের পরও দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনে আওয়ামী লীগ। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমান নির্বাচন ব্যবস্থাকে কলুষিত করেছিলেন। তিনি বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদাকে অক্ষুণ্ন রেখে দেশের মানুষের উন্নয়নে কাজ করছে সরকার। পাকিস্তানিদের পদলেহনকারীর দল এখনো বাংলাদেশে জীবিত এটা সব থেকে দুঃখজনক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখনো তারা বাংলাদেশের ভালো কিছু হলে ভালো চোখে দেখে না। বাংলাদেশ এগিয়ে গেলে তাদের ভালো লাগে না। শেখ হাসিনা বলেন, আজকে যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি সেটা নিয়েও সমালোচনা, এত টাকা দিয়ে স্যাটেলাইট করে কী হবে? এই প্রশ্নও কিন্তু তুলেছে তারা। অর্থাৎ বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু করলে তাদের গায়ে লাগে। কেন? তাহলে তারা কি এখনো সেই পাকিস্তানি সামরিক জান্তাদের পদলেহনকারী, খোশামোদী, তোষামোদির দল?

শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতুর অর্থ বন্ধ করল ড. ইউনূস। কেন? গ্রামীণ ব্যাংকের একটা এমডির পদে তাকে থাকতে হবে। তাকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম গ্রামীণ ব্যাংকের উপদেষ্টা হতে। সেটা সে ছাড়বে না তার এমডিই থাকতে হবে। কিন্তু তার বয়সে কুলায় না। ড. ইউনূস কিন্তু আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল। কিন্তু কোর্ট আর যাই পারুক, তার বয়স তো কমিয়ে দিতে পারে না ১০ বছর। কারণ গ্রামীণ ব্যাংকের আইনে আছে ৬০ বছর পর্যন্ত থাকতে পারে। তখন তার বয়স ৭১ বছর। এই বয়সটা কমাবে কীভাবে? সেই মামলায় সে হেরে যায়। কিন্তু প্রতিহিংসা নেয়। তিনি বলেন, ড. ইউনূস এবং যেটা আমরা শুনেছি মাহফুজ আনাম, তারা আমেরিকায় চলে যায়। স্টেট ডিপার্টমেন্টে যায়। হিলারির কাছে ই-মেইল পাঠায়। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মি. জোলি যিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন তার শেষ কর্মদিবসে কোনো বোর্ড সভায় পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেয়। যাক, একদিকে শাপে বর হয়েছে। কেন হয়েছে? বাংলাদেশ যে নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করতে পারে সেটা আজকে আমরা প্রমাণ করেছি। কিন্তু আমাদের এখানের একজন জ্ঞানী লোক বলে ফেললেন যে, পদ্মা সেতুতে যে রেল লাইন হচ্ছে ৪০ হাজার কোটি টাকার খরচ হচ্ছে। ৪০ হাজার কোটি টাকা তো ঋণ নিয়ে করা হচ্ছে। এই ঋণ শোধ হবে কীভাবে? দক্ষিণবঙ্গের কোনো মানুষ তো রেলে চড়বে না। তারা তো লঞ্চে যাতায়াত করে। তারা রেলে চড়তে যাবে কেন? এই রেল ভায়াবল হবে না।

সরকারপ্রধান বলেন, সেতুর কাজ হয়ে গেছে এখন সেতু নিয়ে কথা বলে পারছে না। এখন রেলের কাজ চলছে, এখন রেলের কাজ নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছেন। আমার মনে হয় আমাদের সবার ওনাকে চিনে রাখা উচিত। রেল গাড়ি যখন চালু হবে তখন ওনাকে নিয়ে রেলে চড়ানো উচিত।

শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া বলেছিল, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে। কারণ বিভিন্ন স্প্যানগুলো যে বসাচ্ছে ওটা ছিল তার কাছে জোড়াতালি দেওয়া। ওখানে চড়া যাবে না, চড়লে ভেঙে পড়বে। তার সঙ্গে তার কিছু দোসররাও। এখন তাদের কী করা উচিত? তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে টুস করে নদীতে ফেলে দেওয়া উচিত। আর যিনি আমাদের একটা এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতুর মতো সেতুর টাকা বন্ধ করেছে তাকেও আবার পদ্মা নদীতে নিয়ে দুইটা চুবানি দিয়ে উঠাইয়া নেওয়া উচিত। মরে যাতে না যায়। একটু পদ্মা নদীতে দুইটা চুবনি দিয়ে সেতুতে তুলে দেওয়া উচিত। তাহলে যদি এদের শিক্ষা হয়। বড় বড় অর্থনীতিবিদ, জ্ঞানী-গুণী এই ধরনের অর্বাচীনের মতো কথা বলে কীভাবে? সেটাই আমার প্রশ্ন। মেগা প্রজেক্টগুলো করে নাকি খুব ভুল করছি। তারা আয়েশে বসে থাকে আর আমার তৈরি করা সব টেলিভিশনে গিয়ে কথা বলে। বিদ্যুৎ সরবরাহ করি। সেই বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে।

সরকারপ্রধান বলেন, আজকের বাংলাদেশে আমরা ২০০৯-এর পরে যে সরকার গঠন করেছি তার পরেও আমাদের কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি। অগ্নিসন্ত্রাস করে বিএনপি জীবন্ত মানুষগুলোকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মারে। পেট্রোলবোমা মারে। আমরা রাস্তাঘাট বানাই, তারা রাস্তাঘাট কাটে। আমরা বৃক্ষরোপণ করি তারা গাছ কাটে। এভাবে দেশকে তারা বারবার ধ্বংসের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। সরকার উৎখাত করার উদ্যোগ নিয়েছে তারা। আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত। তাদের ডাকে তো জনগণ সাড়া দেয়নি। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে। ওই দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় এবং একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়া। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়েছিল জীবনে কোনো দিন রাজনীতি করবে না। এ মুচলেকা দিয়েই কিন্তু দেশ ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু এই মামলায় বিচারের রায়ে সে সাজাপ্রাপ্ত। এতিমের অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া। কারাগার থেকে এখন বাসায় থাকার সুযোগ দিয়েছি, অসুস্থ সে জন্য। এটুকু মানবিকতা দেখিয়েছি, যে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে বারবার, তাকেই আমি এই করুণা ভিক্ষা দিয়েছি যে সে এখন বাসায় থাকতে পারে। সাজাপ্রাপ্ত আসামিও এখন বাসায় থাকতে পারে- এটা নির্বাহী আদেশেই দেওয়া হয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, আমার এখানে একটা প্রশ্ন, আজকে বিএনপি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে। বিএনপির আমলে নির্বাচনের ইতিহাস এতই কলুষিত যে তাদের তো এ নিয়ে কথা বলার অধিকারই নেই। কোন মুখে তারা বলে? ঢাকা-১০ এ ফালু ইলেকশন করেছিল সেই ইলেকশনের চিত্র নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। মাগুরা ইলেকশন, যে ইলেকশন নিয়ে আমরা আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে উৎখাত করলাম। মিরপুর ইলেকশন, প্রত্যেকটা সময় তো আমরা দেখেছি তাদের ইলেকশনের চিত্র। আর এমনিতে সেই ’৭৭-এর হ্যাঁ/না, ’৭৮-এর রাষ্ট্রপতি, ’৭৯-র সাধারণ নির্বাচন, ’৮১-র নির্বাচন। প্রত্যেক নির্বাচনই তো আমাদের দেখা। ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন। যাদের নির্বাচনের এত কলুষিত হওয়ার রেকর্ড, তাদের মুখে এখন নির্বাচনের প্রশ্ন। তিনি বলেন, আজকে নির্বাচনের যতটুকু উন্নতি আমরা করেছি সেগুলো আমাদেরই সিদ্ধান্ত, আমাদেরই চিন্তা। ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ইভিএম- একটা আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে এর সবকিছু তো আমরা করেছি। নির্বাচনে যাতে মানুষ ভোট দেওয়ার অধিকার পায়, সে অধিকারটাই তো সব থেকে বড়। সেটাই আমরা করতে চেয়েছি। এটা নিয়ে তো তাদের প্রশ্ন তোলার কোনো অর্থই হয় না। কারণ আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে। গণতান্ত্রিক অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে। এটাই হচ্ছে সব চেয়ে বড় শক্তি। সেই শক্তিটা আছে বলেই এবং জনগণের শক্তিতে আমরা ক্ষমতায় আছি বলেই জনগণের কল্যাণে কাজ করতে পেরেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। এর ভিতরে আমাদের কিছু আঁতেল আবার জুটেছে। একজন অর্থনীতিবিদ বলেই দিল আমরা যে রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করেছি এটা না কি অর্থনৈতিকভাবে ভীষণ ক্ষতিকর। আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র- এটা হচ্ছে সব থেকে পরিবেশবান্ধব। গ্যাস তো চিরদিন থাকে না। একেকটা কূপ খনন করে তার একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। তেলভিত্তিক, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ আমরা করি। অনেক খরচেরও ব্যাপার। যদি কোনো দিন এমন হয় যে, আমাদের গ্যাস ফুরিয়ে যাচ্ছে তখন আমাদের এই নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টই তো আমাদের বিদ্যুৎ দেবে। এটা সব থেকে পরিবেশবান্ধব একটা বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এখানে বিনিয়োগটা বড় করে দেখা যায়। কিন্তু এর বিদ্যুৎ যখন উৎপাদন হবে, আর এই বিদ্যুৎ যখন মানুষ ব্যবহার করবে আমাদের অর্থনীতিতে অনেক অবদান রাখবে। তিনি বলেন, আজকে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি বলেই বাংলাদেশে প্রত্যেক ঘরে ঘরে আমরা পৌঁছে দিতে পেরেছি। আমরা যখন শুরু করলাম রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট, তখন সেটা নিয়েও অনেক কথা বলে গেছে। আজকে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন আমরা করছি, সেই বিদ্যুৎ ব্যবহার করেই আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলে। ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছিলাম। সেই ঘোষণা নিয়ে ব্যঙ্গ করে। আজকে সেই ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করেই আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলে। এটা বোধহয় ভুলে যায়, তারা যে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে সেটা কিন্তু আমরা দিচ্ছি।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার আমলে, জিয়ার আমলে, এরশাদের আমলে তাদের কী কথা বলার কোনো সুযোগ ছিল? কতটুকু অধিকার ভোগ করত তারা? বেসরকারি টেলিভিশন এত দিয়ে দিয়েছি যে, সারা দিন-রাত টকশো করে। আমি মাঝে মাঝে বলি এত টক টক কথা না বলে একটু মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেন। কত আর টক টক কথা বলবেন। টকশো তারা করে যাচ্ছে। কেউ তো তাদের গলা চিপে ধরে নাই। মুখ চেপেও ধরি না। কথা বলেই যাচ্ছে। তবে হ্যাঁ, সব কথা বলার শেষে বলে কথা বলতে দেওয়া হয় না। তিনি বলেন, আমাদের বিএনপির এক নেতা তো সারা দিন মুখে মাইক লাগিয়েই আছে। সারাক্ষণ কথা বলেই যাচ্ছে। একবার কথা বলতে বলতে গলায় অসুখও হলো। যাক, চিকিৎসা করে এসে আবার কথা বলছে। তার কথা তো কেউ বন্ধ করছে না। তাদের আন্দোলনে যদি জনগণ সাড়া না দেয়, সে দোষটা কাদের? রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে যে অর্থনীতিবিদ কথা বলছেন তাকে আমি বলব, তিনি কি এটা প্রকৃত তথ্য জেনেই বলছেন, না কি না জেনে? আমি তার জ্ঞান নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলব না, তারা অনেক ভালো লেখাপড়া জানেন।

কক্সবাজারে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ করবেন না : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারবাসীর কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, যত্রতত্র কোনো স্থাপনা করবেন না। মাস্টারপ্ল্যান করার নির্দেশ দিয়েছি পুরো কক্সবাজার ঘিরে। আমরা চাই, এর উন্নয়নটা যাতে পরিকল্পিতভাবে হয়।

গতকাল কক্সবাজারের বীর মুক্তিযোদ্ধা মাঠে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নবনির্মিত বহুতল ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।

কক্সবাজার বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক করার কাজ চলমান রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরই হবে আন্তর্জাতিক আকাশ পথে রিফুয়েলিংয়ের জায়গা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত দূরদর্শী নেতৃত্ব ছিল, আপনারা দেখেন, ১৯৭৪ সালে তিনি সমুদ্রসীমা আইন করেন। এমনকি জাতিসংঘও কিন্তু তখন করেনি। জাতিসংঘ করেছে ’৮২ সালে। কিন্তু ১৯৭৪ সালে এই বিশাল সমুদ্রে আমাদের যে অধিকার রয়েছে, সে অধিকার নিশ্চিত করার জন্য জাতির পিতা এই আইনটি করে দিয়ে যান। আমাদের দুর্ভাগ্য, ’৭৫ সালে নির্মমভাবে তাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা এই সমুদ্রসীমায় আমাদের অধিকার নিয়ে কখনই কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ’৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর আমি প্রথম এই উদ্যোগটা গ্রহণ করি। কিন্তু এটা নিতে গেলে অনেক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে কাজ করতে হয়। আমরা অনেক দূর কাজ করে যাই। কিন্তু এর পরে ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত আমরা দেখেছি, তখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ২০০৮-এর নির্বাচনে সরকারে এসে আমরা আবার উদ্যোগ নিই। সমুদ্রসীমায় আমাদের যে অধিকার, সে অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। এখন এই সমুদ্র সম্পদকে ব্যবহার করে আমাদের অর্থনীতিতে যাতে অবদান রাখা যায়, সে ব্যবস্থাটা আমরা করতে চাই। তাই আমরা সুনীল অর্থনীতি গ্রহণ করেছি। এর ভিত্তিতে উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত করতে চাই।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমাদের এই যে বিশাল সমুদ্রসীমা রয়েছে, এটাতে পর্যটনের ক্ষেত্রটা আরও প্রসারিত করা, আবার দেশীয় পর্যটকদের জন্য যেমন সুযোগ সৃষ্টি করা, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্যও আকর্ষণীয় করা, সেই উদ্যোগটাই আমরা নিতে চাচ্ছি। তাছাড়া এটা আন্তর্জাতিক এয়ার রুটে পড়ে। আমরা কক্সবাজার যে বিমানবন্দর সেই বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কাজ করছি। এই বিমানবন্দরটা যখন হবে তখন আপনারা জানেন যে, আজকে যারা পশ্চিমা দেশ থেকে প্রাচ্যের দেশে যায়, তারা কিন্তু এই কক্সবাজার থেকে রিফুয়েলিং করবে। তিনি বলেন, কারণ রিফুয়েলিং কিন্তু একেক সময় একেকটা দেশ অগ্রাধিকার পায়। এক সময় হংকং ছিল। এরপরে আমরা দেখেছি থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর। এখন দুবাই। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কক্সবাজারই হবে আন্তর্জাতিক আকাশ পথে রিফুয়েলিংয়ের একটা জায়গা। তার ফলে এখানে অনেক কাজ হবে। আমরা ক্রিকেট স্টেডিয়াম করেছি। সেখানে ফুটবল স্টেডিয়াম হবে। সেখানে অন্যান্য খেলাধুলার পুরো ব্যবস্থাটা নেওয়া হবে। যে কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট এখানে যাতে হতে পারে সে ব্যবস্থাটা আমরা নিচ্ছি।

কক্সবাজার প্রান্তে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার।

 

সর্বশেষ খবর