শনিবার, ২১ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংকটের শেষ নেই

৩৩টিতে উপাচার্য, ৭৬টিতে উপ-উপাচার্য, ৪৫টিতে কোষাধ্যক্ষ নেই

আকতারুজ্জামান

সংকটের যেন শেষ নেই দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একদিকে যেমন বাড়ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা, অন্যদিকে পাল্লা দিয়ে সংকটও বাড়ছে উচ্চশিক্ষার এই বিদ্যাপীঠগুলোতে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কঠোর হাতে মনিটর না করায়, অনিয়ম প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের আইন না মানার প্রবণতাও থামছে না। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে একের পর এক শাখা ক্যাম্পাস খোলা, শীর্ষ কর্তা নিয়োগে উদাসীনতা, বছরের পর বছর আর্থিক প্রতিবেদন জমা না দেওয়া, অনুমোদনহীন কোর্স পরিচালনাসহ নানা অভিযোগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। দেশে বর্তমানে ১০৮টি বেসরকারি

বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সম্প্রতি ইউজিসির এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এসবের ৩৩টিতেই চ্যান্সেলর কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য নেই। আর   ৭৬টিতে উপ-উপাচার্য ও ৪৫টিতে কোষাধ্যক্ষের পদ শূন্য রয়েছে। ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে একদিকে যেমন একাডেমিক কার্যক্রম ভেঙে পড়ছে তেমনি স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ইউজিসি সূত্র বলছে- অনিয়মের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে ও হিসাব নয়ছয় করতেই মাসের পর মাস শীর্ষ পদগুলো ফাঁকা রাখছে এসব বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ। সূত্রমতে, শিক্ষার্থীদের সনদপত্রে শুধু চ্যান্সেলর কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্যই স্বাক্ষর করবেন। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বা অন্য কেউ স্বাক্ষর করলে সেই সনদও বৈধ হবে না। কিন্তু উপাচার্যের পদ শূন্য রয়েছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে- গণ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, আশা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়। আর উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার- তিন পদই শূন্য রয়েছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ, দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, চিটাগং ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এনপিআই ইউনিভার্সিটি ও নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি। উপ-উপাচার্যের পদ শূন্য রয়েছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে- ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগং, সেন্ট্রাল উইমেনস ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, লিডিং ইউনিভার্সিটি, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, নর্থ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি, ঈশা খাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়, ফেনী ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস, টাইমস ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, দি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ ছাড়া স্টেট ইউনিভার্সিটি, পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষের পদ শূন্য রয়েছে।

ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান ইমেরিটাস অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী এ প্রতিবেদককে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী উপাচার্য, উপ-উপাচার্য আর কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা একাডেমিক নয় বরং বেশির ভাগই ব্যবসায়ী বা অন্য কোনো পেশা থেকে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা হয়েছেন। এদের অনেকেই অন্য ব্যবসার মতো বিশ্ববিদ্যালয়কেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখেন। আর্থিক সুবিধা নেওয়ার সুযোগ না থাকলেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিরা নামে-বেনামে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য আর কোষাধ্যক্ষ থাকলে অনিয়ম করা কঠিন হয়। তাই ট্রাস্টিদের এক্ষেত্রে অনীহা দেখা যায়। সরকারের উচিত শীর্ষ পদ শূন্য থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর