সোমবার, ২৩ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

কী হবে শেয়ারবাজারের

স্মরণকালের বড় ধস, ৯০ শতাংশের দাম কমেছে, ঘুরে দাঁড়াবে বলছেন বিশ্লেষকরা

আলী রিয়াজ

কী হবে শেয়ারবাজারের

স্মরণকালের বড় ধরনের ধস হয়েছে শেয়ারবাজারে। আগের সপ্তাহের ধারাবাহিকতায় চলতি সপ্তাহের প্রথম দিনে বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এতে টানা আট কার্যদিবস পতনের ধারা অব্যাহত থাকায় নাকাল দেশের শেয়ার ব্যবসায়ীরা। সপ্তাহের প্রথম দিনেও আগের ধাক্কা লেগেছে। এক দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক কমেছে ১১৫ পয়েন্টের বেশি। শেয়ারের দর কমেছে ডিএসইর তালিকাভুক্ত ৯০ শতাংশ কোম্পানির। এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন, কী হবে শেয়ারবাজারের? জবাবে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, নো টেনশন। বাজার অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াবে। অন্যদিকে একাধিক ব্রোকারেজ হাউস মালিক বলেন, সামনে নির্বাচন, এই মাস থেকেই দেখবেন পরিস্থিতি বদলে যাবে। একজন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারী মাহমুদুল ইসলাম বলেন, এখন পুরোটাই প্যানিক। এর মধ্যেই ঘুরে দাঁড়াবে শেয়ারবাজার।

জানা গেছে, এক মাসের বেশি সময় ধরে শেয়ারবাজারে দরপতন অব্যাহত। অনেকে বলছেন, ২০১০ সালের পর এত বড় লোকসানে পড়তে হয়নি, যা বর্তমান ধসের কারণে হয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বিভিন্ন সময় নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার পরেও বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে। বিনিয়োগ ধরে রাখতে হবে। বিনিয়োগকারীদের অনেকেই বিনিয়োগ করা পুঁজি হারিয়ে দিশাহারা। প্রতিদিনই শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। পতনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা কোম্পানির শেয়ারও। লোকসান কমাতে দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। চলমান দরপতনের পেছনে কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরাও। তারা বলছেন, টানা দরপতনের কারণে ভালো মৌলভিত্তির অনেক কোম্পানির শেয়ার দাম অবমূল্যায়িত হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের উচিত আতঙ্কিত না হয়ে ভালো কোম্পানি বাছাই করে শেয়ার কেনা।

গতকাল ডিএসইর লেনদেনে দেখা গেছে, লেনদেনের শুরুতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর বাড়ে। লেনদেনের ১০ মিনিটের মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক ৩০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে দিনশেষে এই প্রবণতা ধরে রাখতে পারেনি বাজার। প্রথম ১০ মিনিট পরেই পতনের ধারায় ফিরে আসে লেনদেন। সময় যতই গড়িয়েছে সূচকের পতন এগিয়েছে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১১৫ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ১৪২ পয়েন্টে নেমেছে। আট কার্যদিবসের টানা পতনে ডিএসইর প্রধান সূচক হারালো ৫৫২ পয়েন্ট। সূচক পতনের সঙ্গে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৯০ শতাংশ শেয়ারের দর কমেছে। লেনদেনে দেখা গেছে, ডিএসইতে মাত্র ২১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৪৫টির। আর ১৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। স্মরণকালের মধ্যে এত বেশি পরিমাণ কোম্পানির শেয়ার দর এক দিনে কমেনি। ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৬৮২ কোটি ২১ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৬৬৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। বাজারের এমন টালমাটাল পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিএসইসির পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গতকাল শেয়ারবাজারের চলমান মন্দাবস্থা কাটাতে মার্জিন ঋণ সুবিধা বাড়িয়ে নির্দেশনা জারি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এবার মার্জিন ঋণ সুবিধা ১:১ বা নিজস্ব ১ টাকার বিপরীতে ১ টাকা পর্যন্ত মার্জিন ঋণ নেওয়ার বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা আজ থেকেই কার্যকর হবে। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত ৪০ মূল্য-আয় অনুপাত (পি/ই রেশিও) পর্যন্ত যে কোনো সিকিউরিটিজে ১০০% হারে মার্জিন ঋণ পাওয়া যাবে। এর আগে শেয়ারবাজারে ১:৮০ বা বিনিয়োগকারীদের নিজস্ব ১ টাকার বিপরীতে ৮০ পয়সা বা ৮০ শতাংশ মার্জিনের সুযোগ ছিল। এ ছাড়াও গত মাসে বিএসইসি শেয়ারের দর কমার সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করে দেয়। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, ২০১০ সালের চেয়েও বড় লোকসানে পড়েছেন তারা। তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১০ সালে ধসের আগে ভালো-মন্দ সব কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছিল। বর্তমান বাজারে তেমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তাই ২০১০ সালের মতো পরিস্থিতি হবে না। এই দরপতন বিশ্ব ও দেশীয় অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব।

জানতে চাইলে বাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, চিন্তিত হওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। যারা প্রতিদিন শেয়ারের দর বাড়াতে চান তাদের সমস্যা। বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের প্রভাব, ডলারের দামসহ নানা সমস্যা আমরা দেখছি। এর কারণে কিছুটা ভীতি কাজ করছে, আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন ইস্যুতে সৃষ্টি হওয়া আতঙ্কের কারণে শেয়ারবাজারে দরপতন হচ্ছে। বাজারে ভালো-মন্দ সব ধরনের  শেয়ারের দরপতন হয়েছে। অনেক ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ার যৌক্তিক মূল্যের নিচে নেমে গেছে। আমি মনে করি, বিনিয়োগকারীদের উচিত প্রতিষ্ঠান বাছাই করে শেয়ার কেনা। তাহলে ভালো লাভ পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, বর্তমান দরপতনের তেমন কোনো কারণ নেই। বিশ্বের অনেক দেশে দরপতনের পর এখন আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেয়ারবাজার। বাংলাদেশে নানা গুজব সৃষ্টি করছে অনেকে। যার আতঙ্ক বাজারে ছড়াচ্ছে। বাজারে গুজবনির্ভর না হয়ে বিনিয়োগ করুন। এই আতঙ্ক কেটে যাবে। আশা করি, দ্রুত বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। শেয়ারের দরও বাড়বে।

অর্থমন্ত্রীর বৈঠক : সংশ্লিষ্ট সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে,   কভিড-১৯ এর অভিঘাত থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় নতুনভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধাবস্থা চলার কারণে সারা বিশ্বে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ অর্থনৈতিক মন্দা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাব  দেশের পুঁজিবাজারসহ অর্থনীতির কোনো খাতে যাতে না পড়তে পারে সে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পুঁজিবাজারে স্বাভাবিক লেনদেন বজায় রাখা ও বিনিয়োগের উত্তম পরিবেশ সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য কি ধরনের সহায়তা প্রয়োজন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে অর্থমন্ত্রী গতকাল একটি বৈঠক করেন। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, সিনিয়র অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। সভায় অর্থমন্ত্রী দেশের পুঁজিবাজারে ছোট-বড় কোনো বিনিয়োগকারীর স্বার্থই যাতে ক্ষুন্ন না হয় সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং একই সঙ্গে  দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতসমূহে জোরালো অবস্থা ফিরিয়ে আনতে অতিসত্বর কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের কিছু দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর