সোমবার, ২৩ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

বিপজ্জনক আয় বৈষম্যে বাংলাদেশ

২০ লাখ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিপজ্জনক আয় বৈষম্যে বাংলাদেশ

আবুল বারকাত

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেছেন, দেশে বিপজ্জনক আয় বৈষম্য তৈরি হয়েছে। এ বৈষম্য নিরসনে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, অর্থনীতি সমিতি মনে করে, সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে কালো টাকা ও অর্থ পাচার দুটোরই রাশ টানা সম্ভব। দেশের মেগা প্রকল্পের বৈদেশিক ঋণ যখন শোধ করা শুরু হবে, তখন আমরা সরাসরি রেড ঝুঁকিতে চলে যাব।

 সংকট সমাধানে আর কোনো মেগা প্রজেক্ট নেওয়া যাবে না, এমনকি কোনো প্রজেক্টের মেয়াদ বাড়ানোও যাবে না।

দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে আবুল বারকাত বলেন, বিপজ্জনক আয় বৈষম্যের দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। ২০৩২ সাল নাগাদ বিদেশি ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশ বিপদে পড়তে পারে। তখন বড় ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। এ সময় আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ২০ লাখ ৫০ হাজার ৩৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হয়।

বিকল্প বাজেট সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম। এতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৬৪টি জেলা, ১০৭টি উপজেলা ও ২১টি ইউনিয়ন থেকে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সদস্য এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা যুক্ত ছিলেন।

এ সময় আবুল বারকাত আরও বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে গত ৪৬ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার অর্থ পাচার করা হয়েছে। একই সময়ে দেশে কালো টাকার অংক দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৯ লাখ কোটি টাকা। এসব টাকা উদ্ধারে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবিও জানান তিনি।

দেশের আয় বৃদ্ধি ও বাজেট ঘাটতি পূরণের বিষয়ে অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে অন্যতম উৎস হলো সম্পদ কর ও অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর। কালো টাকা ও অর্থ পাচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৭২-৭৩ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত দেশে কালো টাকার অংক ৮৮ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে গত ৪৬ বছরে পুঞ্জীভূত কালো টাকার মাত্র দুই শতাংশ উদ্ধারের প্রস্তাব করছি। যেখান থেকে ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা আসবে। ওই ৪৬ বছরে বিদেশে অর্থ পাচারের অংক প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা। পাচার করা অর্থ ১০ শতাংশ উদ্ধার করে বাজেটে আয় খাতে ব্যবহার করার জন্য প্রস্তাব করছি। যার অংক ৭৯ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা।

আবুল বারকাত বলেন, ২০ লাখ ৫০ হাজার ২৬ কোটি টাকার জনগণতান্ত্রিক বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করছি। যা বর্তমান বাজেটের ৩ দশমিক ৪ গুণ বেশি। যেখানে ৩৩৮টি সুপারিশ রয়েছে। এসব সুপারিশের মধ্যে সমাজ থেকে চার ধরনের বৈষম্য যথা- আয় বৈষম্য, সম্পদ বৈষম্য, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বৈষম্য ক্রমাগত হ্রাস করে নির্মূলের দিকে যাওয়া। এ লক্ষ্যে আয় ও ব্যয় খাতে মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে। দ্বিতীয়ত বাজেটে অর্থায়নের প্রান্তিক, দরিদ্র, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্য মধ্যবিত্তের ওপর কর দাসত্ব আরোপ করা যাবে না। এরপর রয়েছে সামাজিক সুরক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নের সুপারিশ।

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে। শর্ত হলো, কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে এবং ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। সরকার মূল্যস্ফীতির যে হিসাব দিচ্ছে তা বাস্তবসম্মত নয়। দ্বিতীয়ত, খাদ্য মূল্যস্ফীতি কোনো অবস্থাতে বাড়ানো যাবে না।

সরকারের চলমান মেগাপ্রকল্প প্রসঙ্গে বারকাত বলেন, মেগা প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ নিয়ে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, যখন থেকে অন্তত ৪-৫টি মেগাপ্রকল্পের সুদ পরিশোধ শুরু করব, তখন থেকেই ঋণের ক্ষেত্রে সরাসরি রেড জোনে চলে যাব। যা আনুমানিক হিসাবে ২০২৭-২০২৮ সালে শুরু হওয়ার কথা। আর ২০৩২ সালে যখন ১২টি মেগা প্রকল্পের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে যাব, তখন বিপদ আরও প্রকট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বৈশ্বিক মহামন্দা, বৈশ্বিক মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব ভবিষ্যতে বৈদেশিক ঋণের রেড ঝুঁকিতে ফেলবে কি না তা নিয়ে কঠিন চিন্তার প্রয়োজন রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর