শুক্রবার, ২৭ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

পি কে হালদারকে প্রয়োজনে কারাগারেই জিজ্ঞাসাবাদ

রিমান্ড শেষে জেলহাজতের আবেদন জানাতে পারে ইডি

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

পি কে হালদারকে প্রয়োজনে কারাগারেই জিজ্ঞাসাবাদ

বাংলাদেশ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পি কে হালদার ভারতসহ কোন কোন দেশে কোন কোন খাতে লগ্নি করেছেন সেই সব তথ্যের যথাযথ হিসাব ভারতের তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেটের (ইডি) কর্মকর্তাদের হাতে এখনো আসেনি। ১৪ মে পি কে হালদারকে গ্রেফতারের পর দুই দফায় টানা ১৩ দিন নিজেদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পরও এখনো সেই তথ্য হাতরাচ্ছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। ইডির অনুমান, বাংলাদেশ থেকে হাওলার মাধ্যমে আসা সেই টাকার পরিমাণ কমবেশি সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার মতো। কিন্তু সেই টাকা পি কে হালদার কোথায় লগ্নি করেছেন    তা এখনো স্বীকার করেননি। এখনো পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে চারটির বেশি প্রাসাদোপম বাড়ি, বেনামে একাধিক স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হদিস পাওয়া গেছে। কিন্তু সব মিলিয়ে সেই রুপির পরিমাণ মেরে-কেটে কয়েক শ কোটি রুপি। অন্যদিকে মূল অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এখনো পর্যন্ত ১৫০ কোটির বেশি রুপি উদ্ধার করেছে ইডি। ফলে প্রশ্ন উঠছে, বাকি রুপি কোথায় রাখলেন পি কে? পি কে হালদারকে জেরা করে প্রধান যে নামটি উঠে আসছে তা বাংলাদেশের, যদিও ওই ব্যক্তি বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। সূত্র বলছে, পি কে হালদারের আত্মসাৎ করা একটা বিশাল অঙ্কের অর্থের ভাগ গেছে ওই ব্যক্তির পকেটে। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ওই নেতা বাংলাদেশভিত্তিক একটি নামি সংস্থার কর্ণধার বলেও জানা গেছে। তারই ছত্রচ্ছায়ায় ছিলেন এই পি কে হালদার। সিঙ্গাপুর থেকে ওই ব্যক্তি মাঝেমধ্যেই বাংলাদেশে আসতেন। আর পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার হওয়ার আগে বাংলাদেশেই ওই ব্যক্তির সঙ্গে বেশকিছু বিষয়ে মনোমালিন্য হয় পি কে হালদারের। একসময় ধৈর্যহারা হয়ে পি কে তার কাছ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন। এ সময় ওই ব্যক্তিও তাকে যা পারেন করে নেওয়ার হুমকি দেন। তবে মুখোমুখি নয়, মোবাইলে তাদের দুজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হতো। পি কের ফোনকল ঘেঁটেই তদন্ত কর্মকর্তারা এসব তথ্য পেয়েছেন বলে জানা গেছে। এও জানা গেছে, ২০২১ সালের বিধানসভার নির্বাচনে অশোকনগর, হাবড়াসহ পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্রে পি কে হালদারের আত্মসাৎকৃত টাকা যেমন খাটানোর অভিযোগ উঠেছে, তেমনি বাংলাদেশেও ক্ষমতাসীন দলকে নিয়মিত টাকা দিয়ে আসতেন সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত ওই ব্যক্তি। ১৪ মে তারিখ যেদিন ভারতে পি কে হালদার ইডির হাতে গ্রেফতার হন, ঠিক এর পরদিন ১৫ মে ওই ব্যক্তি বাংলাদেশ ছেড়ে সিঙ্গাপুরে চলে যান। পি কে হালদারকে জেরা করে এমন তথ্যও জানতে পেরেছে ইডি। তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকেও বেশকিছু তথ্য সামনে এসেছে। যদিও এখনো বেশকিছু ইলেকট্রনিক গ্যাজেট খোলা সম্ভব হয়নি। এ কাজে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে পারে ইডি। এই কেন্দ্রীয় এজেন্সি সূত্রের খবর, বেশকিছু প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা। পি কে হালদারও এর যথাযথ উত্তর দিয়ে সহায়তা করছেন না। আসলে তদন্ত কর্মকতারাও হাল ছাড়তে নারাজ। পি কে হালদারের ধারণা, এই বিশাল সাম্রাজ্য বিস্তারে যেসব প্রভাবশালী ব্যক্তির মদদ ছিল, তারা হয়তো এখনো তার পাশেই আছেন এবং বিপদের দিনে হয়তো তাদের পাশেই পাওয়া যাবে।

 

 

সর্বশেষ খবর