শুক্রবার, ২৭ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

পাচার হওয়া অর্থ ট্যাক্স দিয়ে আনা যাবে দেশে : অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

পাচার হওয়া অর্থ ট্যাক্স দিয়ে আনা যাবে দেশে : অর্থমন্ত্রী

বিশেষ স্কিমের মাধ্যমে সরকার বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। খুব শিগগিরই এ সংক্রান্ত সার্কুলার আসবে। এ ছাড়া আসছে ২০২২-২৩ বাজেটেও এ সংক্রান্ত কিছু ঘোষণা থাকবে। গতকাল সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।   

অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন দেবে। নির্দিষ্ট পরিমাণ ট্যাক্স দিয়ে বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার সুযোগ মিলছে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এটি আপনারা বাজেটে পাবেন, বাজেটে এটা থাকবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক যেটি করছে, সেটি বাজেটের আগেই করছে। যারা টাকা পাচার করেছে, তারা ট্যাক্স দিয়ে রেকর্ডে নাম লেখাতে চাইবেন কি না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে এ সুযোগ অনেকে নিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়া যখন এমন একটি অ্যামনেস্টি ঘোষণা করল, তখন অনেক টাকা বিদেশ থেকে দেশে ফেরত আসছে। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের এখান থেকে যারা টাকা নিয়ে গেছেন এ সুযোগটি তাদের জন্য অত্যন্ত ভালো একটি সুযোগ। সেটি তারা কাজে লাগাবেন।’ বিদেশ থেকে ৫ হাজারের বেশি ডলার পাঠানোর ক্ষেত্রেও কোনো ডকুমেন্টস লাগবে না, এতে বিদেশ থেকে কালো টাকা আসবে কি না এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা চাইছি, বিভিন্ন সময়ে যেসব কালো টাকা বিদেশে থেকে গেছে, বিভিন্ন সোর্স থেকে সেটি জানতে পারি। অনেক সময় বলা হয়, বিদেশে যারা টাকা নিয়ে গেছেন তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? বিদেশে যে টাকা চলে গেছে, আমরা বলেছি যাতে টাকাগুলো দেশে ফেরত আসে। মন্ত্রী বলেন, বাজেটের আগেই আমরা এটা করার চেষ্টা করছি। সংসদে বাজেট উত্থাপিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এ বিষয়ে বলতে চাই না। যখন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে সেটি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার ইস্যু করবে, তার মাধ্যমেই আপনারা জানতে পারবেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, যেসব টাকা বিভিন্ন চ্যানেলে চলে গেছে, সেগুলো ফেরত আনার জন্য এ উদ্যোগ। এ ধরনের অ্যামনেস্টি (সাধারণ ক্ষমা) বিভিন্ন দেশ দিয়ে থাকে।  ডলার সংকটের জন্য এ সিদ্ধান্ত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই ডলার সংকটের জন্য। ডলার আমাদের দরকার। তবে যে ক্রাইসিস বুঝিয়েছে সেটি নেই, আমাদের ফরেন রিজার্ভ ভালো। নতুন বাজেটে ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ সুবিধা থাকছে কি না, প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ছোট, মাঝারি, বড় সব ব্যবসায়ীকে সুবিধা দেওয়া হবে। কেননা আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। ডলার আমাদের প্রয়োজন আছে, কিন্তু যেভাবে ডলার সংকটের কথা বলা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখনো স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছে। আশেপাশের দেশগুলোর তুলনায় ভালো অবস্থানে আছে। এর আগেও আমরা সংকট মোকাবিলা করেছি। ইনশা আল্লাহ এবারও করতে পারব। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে এক সাংবাদিকের করা প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরাও বুঝি, তবে আমরা চাই যাতে কোনো ধরনের প্রভাব না পড়ে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দাম বাড়লে কারও না কারও ওপর এর প্রভাব পড়ে। তবে এই ইমপ্যাক্ট যাতে কম পড়ে, সেজন্যই আমরা কনজ্যুমারদের সঙ্গে শেয়ার করে নিচ্ছি। সারা বিশ্বেই ‘আপস অ্যান্ড ডাউন’ পরিস্থিতি চলমান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আগামী বাজেটের মাধ্যমে আমাদের মূল কাজ হবে বিভিন্ন পলিসি নিয়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখা এবং একই সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা। এ দুটি নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধি সম্পর্কে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। যুক্তরাজ্যেও ৩৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনামসহ সবারই একই অবস্থা। আমরা চেষ্টা করছি, দেশের মানুষ যাতে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জন্যই ঈদে ১ কোটি পরিবারকে ডাল, তেল, চিনি কম মূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর