শনিবার, ২৮ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর সঙ্গে একটুকরো স্মৃতি

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান

থেমে গেল এক কথকের কথা বলা, এক লেখকের লেখা। দীর্ঘ ৮৮ বছরের জীবন ভ্রমণ শেষে চলে গেলেন কিংবদন্তিতুল্য সাংবাদিক, লেখক আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী। ১৯ মে ২০২২ লন্ডনে ইন্তেকাল করেন প্রবাদপ্রতিম সবার প্রাণের এই মানুষটি। তিনি আজ নেই। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে দীর্ঘদিনের প্রবাসজীবন ছিল তাঁর। সেখানে বসেই তিনি কলম ধরতেন। জেগে রইতেন দেশের মানুষের কল্যাণ ভাবনায়।

মানুষের কর্মের লক্ষ্য থাকে সাফল্য। সাফল্য কামনা মানুষের সহজাত প্রত্যাশা। কিন্তু কেবল সাফল্যই কি তাকে কিংবদন্তি করে তুলতে পারে? এটি ঠিক যে সাফল্য তাকে তার নিজকর্মের একজন মাস্টার হিসেবে তৈরি করতে পারে। কিন্তু কর্মের মধ্যে পাওয়া তার সন্তুষ্টিই কেবল তাকে একজন কিংবদন্তিতে পরিণত করতে পারে। নিজ কর্মে-ভাবনায় সন্তুষ্ট এমনই একজন কিংবদন্তিতুল্য সাংবাদিক লেখক কলামিস্ট আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী। নিজ কর্ম ও লেখনীর মধ্যে দেশপ্রেমে নিবেদিত থেকে তিনি সারা জীবন যে সন্তুষ্টি পেয়েছেন তা-ই তাঁর অর্জিত সাফল্য। এ সাফল্যের মধ্যে থাকা সন্তুষ্টির স্থান তাঁর আত্মার গহিনে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। থাকবেও চিরকাল। তাঁর এ সন্তুষ্টির মধ্যেই রয়েছে সত্যনিষ্ঠতা, মানবকল্যাণের ভাবনা, দেশপ্রেম। এজন্যই তিনি একজন কিংবদন্তি।

প্রবাদতুল্য এই মানুষটির প্রয়াণে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের সব বিশিষ্ট-গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি শোক প্রকাশ করেছেন। দেশের সব জাতীয় পত্রিকা আবেগমিশ্রিত সংবাদ ও প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে গাফ্‌ফার চৌধুরীর জীবনী ও কর্ম নিয়ে। এসবের মধ্যে তাঁর প্রতি সবার অনন্য শ্রদ্ধা মূর্ত হয়েছে। ওপার বাংলার বাংলা পত্রিকাগুলোও যথেষ্ট গুরুত্ব্সহকারে প্রকাশ করেছে তাঁর প্রয়াণ সংবাদ। আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, ‘আসামের বরাকের ভাষা আন্দোলনের স্মরণ দিনে প্রয়াত হলেন ঢাকার বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের নীলকণ্ঠ পাখি।’ সত্যি গাফ্‌ফার চৌধুরী আমাদের ভাষা আ›েআলনের এক ‘নীলকণ্ঠ পাখি’। একুশ এলেই তিনি আবার জেগে উঠবেন।

১৯ মে ১৯৬১ সাল। কী ঘটেছিল আসামের বরাক ভ্যালিতে? সেদিন বাংলাকে দাফতরিক ভাষা করার দাবিতে প্রাণ দিয়েছিলেন নয়জন বাঙালি। ১৯৫২ সালে ঢাকায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে যেমন আন্দোলন হয়েছিল অনেকটা একই আদলে আসামের বরাক ভ্যালি অর্থাৎ তিনটি জেলা যথাক্রমে কাছার, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি অঞ্চলের বাংলা ভাষাভাষী জনগণ বাংলাকে আসামের দাফতরিক ভাষার মর্যাদা দানের দাবিতে রক্ত দিয়েছিল। তৎকালীন আসাম রাজ্য সরকার ‘অসমিয়া’কে রাজ্যের একমাত্র দাফতরিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল। ১৯ মে ১৯৬১, আধাসামরিক বাহিনীর গুলিতে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন নয়জন বাঙালি। সেই থেকে আসাম বিশেষত বরাক ভ্যালিতে এ দিনটিকে তারা ভাষাশহীদ দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন। ১৯ মে-তে মহান ভাষাসৈনিক আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর তিরোধানকে পশ্চিমবঙ্গের পত্রিকাগুলো একটি কাকতালীয় ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেছে।

আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর প্রয়াণে আজ কিছু কথা বলতে ইচ্ছা করছে। সঙ্গে রয়েছে স্মৃতিচারণা। অনেক কারণের মধ্যে একটি কারণ হলো কয়েক বছর আগে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে তাঁর সঙ্গে দেখা ও কথা হয়েছিল এক অনুষ্ঠানে। সেদিন খুব কাছে থেকে তাঁকে দেখেছিলাম। বিস্মৃত হইনি সেদিনের কথা। স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ছি।

আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার উলানিয়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সামন্ত পরিবারের সন্তানরা যখন রক্ষণশীল রাজনৈতিক বিশ্বাসের বাইরে আসতে নারাজ তখন অনুরূপ এক পারিবারিক পরম্পরার যে মানুষটি সেদিন দেশের প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন, পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে কলম ধরেছেন তিনি আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী। মুজিবনগরে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সরকারের প্রথম পত্রিকা সাপ্তাহিক ‘জয় বাংলা’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী। বাঙালির ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে একাত্ম হয়ে রয়েছে গাফ্‌ফার চৌধুরীর নাম।

তিনি ছিলেন বহুমাত্রিক জ্ঞানের চর্চায় নিবিষ্ট থাকা এক মানুষ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রতি ছিল তাঁর অকৃত্রিম ও শর্তহীন আনুগত্য, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে শাহাদাতবরণের পর থেকে তিনি বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রেখেছেন। ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর জাতীয় জীবনে যে অমানিশা নেমে এসেছিল তখন আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী সচল করেছিলেন তাঁর লেখনী। অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাতিঘর এই মানুষটি ১৯৭৪ সালে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গমন করেন। সেই শুরু তাঁর প্রবাসজীবন। সেখানে বসেও তিনি মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার পক্ষে তাঁর কলম সদাসর্বদা সচল রেখেছিলেন।

শুনেছি এই কিংবদন্তি মানুষটির লাশ ঢাকায় সমাহিত করা হবে। খবরটি নিঃসন্দেহে সব বাঙালিকে স্বস্তি দিয়েছে। তাঁর দীর্ঘ জীবন কেটেছে লন্ডনে। সেখানে তাঁর সন্তানরা আছেন। তাঁর লাশ লন্ডনে সমাহিত হোক তা তাঁর সন্তানরা চাইতে পারতেন কিন্তু তাঁরা তা চাননি। তাঁদের অনেক অনেক সাধুবাদ এই অনন্য বিশিষ্ট বাঙালিকে তাঁর প্রিয় স্বদেশভূমিতে চিরনিদ্রায় সমাহিত করার অনুমতি দেওয়ার জন্য।

আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে অনেক বড় নামিদামি মানুষ যাঁরা তাঁর জীবনঘনিষ্ঠ ছিলেন তাঁরা লিখবেন এটাই স্বাভাবিক। আমার মতো একজন সাধারণ মানুষ তাঁকে নিয়ে কীইবা লিখতে পারি। তবু তাঁর সঙ্গে পরম শ্রদ্ধায় আমার কিছু কথা, ছোট্ট একটু-আধটু স্মৃতি এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি মাত্র।

সম্ভবত ২০১৩-১৪ সাল, ঠিক দিন ও তারিখ মনে পড়ছে না। ঢাকায় এসেছিলেন আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকাল থেকেই তাঁর নাম শুনে এসেছি। তবে দেখা হয়নি কখনো। একদিন বিকালে কোর্ট থেকে ফেরার পর সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আমার বাসায় এসে আমাকে সপরিবারে নিমন্ত্রণ করে গেলেন পরদিন সন্ধ্যায় যেন তাঁর বাসায় যাই। সেখানে আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর সম্মানে একটি সংগীতসন্ধ্যার আয়োজন করেছেন তিনি। সানন্দে নিমন্ত্রণ গ্রহণ করি। মাহবুবে আলম ছিলেন খুবই সংস্কৃতিমনা মানুষ। তাঁর বাসায় মাঝেমধ্যেই এ রকম গানের আসর হতো। সঙ্গে থাকত সুস্বাদু খাবারের ব্যবস্থা। আমি খুব কমই অনিমন্ত্রিত থেকেছি এ রকম আসরে।

বেইলি রোডের যে সরকারি বাড়িতে আমি এখন আছি সে বাড়ির দোতলায়ই থাকতেন মাহবুবে আলম ও ভাবি বিনতা মাহবুব। নির্ধারিত সন্ধ্যায় তাঁর ফ্ল্যাটে গেলাম। আপিল বিভাগ, হাই কোর্ট বিভাগের বেশ কজন বিচারপতিসহ সুপ্রিম কোর্টের বেশ কিছু নামকরা আইনজীবী এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বেশ কজন ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যার সব আবছা আঁধার দূর করে আসর আলোকিত করে বসে ছিলেন কিংবদন্তিতুল্য মানুষটি, দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী। দু-একটি রবীন্দ্রসংগীত ও পুরনো দিনের গানের পর জনাব চৌধুরীর বক্তব্যের পালা।

একুশে ফেব্র“য়ারির পটভূমি, স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর পরিচয় ও সাহচর্য নিয়ে সেদিন ওই আসরে তিনি অনেক কথা বললেন। দাঁড়িয়ে কথা বলতে কষ্ট হতো বলে চেয়ারে বসেই কথাগুলো বললেন। আমরা উপস্থিত সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাঁর বক্তব্য শুনলাম। এরপর এলো পরিচয় পর্ব। মাহবুবে আলম সাহেব আমাদের বেশ কজনকে পরিচয় করিয়ে দেন জনাব চৌধুরীর সঙ্গে। আমার ছেলে শাফকাত তখন ‘এ’ লেভেলের ছাত্র। আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর জীবনী নিয়ে কোনো এক লেখকের লেখা একটি বই সে জনাব চৌধুরীর হাতে তুলে দেয়। তিনি শাফকাতের সঙ্গে মিনিট দুয়েক কথা বলেন। আমার ছেলে এখনো সেদিনের কথা মনে রেখেছে। তখনই তাঁকে স্বচক্ষে কাছ থেকে প্রথম দেখলাম।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে আমি সস্ত্রীক লন্ডনে যাই ছেলের সঙ্গে দেখা করতে। সে সময় সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি চলছিল। আমার ছেলে তখন যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল শহরের ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট অব ইংল্যান্ডের আইন বিভাগের স্নাতক শ্রেণির ছাত্র। লন্ডনে তখন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমও সস্ত্রীক বেড়াতে গেছেন। সেখানে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও সিনিয়র অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন (বর্তমানে অ্যাটর্নি জেনারেল) উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় বাঙালি ছাত্ররা যারা আইন নিয়ে পড়াশোনা করছে বা সলিসিটর ও ব্যারিস্টার হিসেবে সেখানে আইন পেশায় আছেন তারা আমাদের এক সন্ধ্যায় একটি ল কলেজে আমন্ত্রণ জানান, এক ধরনের সংবর্ধনা সভার মতো একটি অনুষ্ঠানে। জানলাম সেখানে উপস্থিত থাকবেন আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী। অনুষ্ঠানে যাওয়ার আকর্ষণ আরও বেড়ে গেল।

সময়মতো সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে দেখা হলো জনাব চৌধুরীর সঙ্গে। ছাত্ররা ও নতুন ব্যারিস্টার ও সলিসিটরদের কয়েকজন বক্তব্য দেন। আমাদের বক্তব্যের পর বক্তব্য দেন আব্দুল গাফ্‌ফার চৌধুরী। তিনি আলাপচারিতায় আমাকে বলছিলেন, ‘আমি এদের (ব্যারিস্টার ও সলিসিটর) সব সময় বলি ওরা যেন বাংলাদেশে গিয়ে প্র্যাকটিস শুরু করে। এতে দেশের মানুষের উপকার হবে।’ কথার এক ফাঁকে তিনি যখন জানলেন যে পরদিন আমি ব্রিস্টলে যাব ছেলেকে দেখতে, তখন আমায় বলেছিলেন, ‘ব্রিস্টলে গিয়ে ছেলেকে বলবেন সে যেন আপনাকে রাজা রামমোহন রায়ের সমাধিতে নিয়ে যায়। সেখানেই তিনি সমাহিত হয়েছেন।’

পরদিন আমার ছেলের সঙ্গে দেখা হলো, তাকে বলার পর আমরা একটি গাড়িতে করে রাজা রামমোহন রায়ের সমাধিস্থলে যাই। দিনটি ছিল ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭। সমাধিস্থলে বেশ কিছু ফুলের তোড়া দেখতে পাই। কেউ হয়তো আগের দিন ২৭ সেপ্টেম্বর সেখানে এগুলো রেখে রামমোহন রায়ের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। কারণ ওই দিনটি ছিল তাঁর মৃত্যু দিবস। তিনি ১৮৩৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ব্রিস্টলে মৃত্যুবরণ করেন। ব্রিস্টল ক্যাথেড্রালের সামনে আজও রাজা রামমোহন রায়ের একটি স্ট্যাচু রয়েছে।

আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর সঙ্গে সর্বশেষ দেখা হয় ২০২১ সালের ৫ ফেব্র“য়ারি। বিশ্ব করোনা পরিস্থিতির জন্য এ সাক্ষাৎটি হয় যান্ত্রিকভাবে, ভার্চুয়ালি। আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুবার্ষিকীর একটি অনুষ্ঠানে তিনি ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আমাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন ও বেশ স্নেহ করতেন। অনুষ্ঠানটিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুনামগঞ্জের ছাতকের সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান মানিক, আমিসহ বেশ কয়েকজন ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়েছিলাম। তাঁর সঙ্গে তখন সালাম ও কুশলাদি বিনিময় হয়। এটাই ছিল তাঁর সঙ্গে শেষ দেখা। এবার আর ভার্চুয়ালি নয়, সশরীরেই লন্ডন থেকে নিজ দেশে আসছেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার অন্যতম প্রবাদপুরুষ আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী। তিনি আর কারও সঙ্গে কুশল বিনিময় করবেন না। কোনো সভায় প্রধান অতিথি হয়েও আসছেন না। তিনি আসছেন নিষ্প্রাণ দেহে। প্রাপ্তি বা জয়ী হওয়া, হারানো এবং ভাগাভাগি করা- এ তিনটি মিলিয়েই মানুষের জীবন। কথাটি ধ্র“ব সত্য। আসলে এটি বুঝতে হবে জীবনপথে চলতে গিয়ে কী জয় করতে হবে, কী পরিহার করতে হবে এবং কোন বিষয়টি অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে হবে। সব মিলিয়ে বলা যায় বিশুদ্ধ ও মানবিক প্রবৃত্তি নিয়ে চলতে গেলে এ সত্যটি বুকে ধারণ করতেই হবে। নিজ কর্ম ও আচরণ দিয়ে অন্যের হৃদয় জয় করতে হবে। আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী একজন জয়ী মানুষ। তিনি সবার হৃদয় জয় করেছেন তাঁর কর্ম, লেখনী আর মায়ের ভাষার প্রতি প্রেম দিয়ে।

সবার কাছ থেকে নিঃশব্দে বিদায় নিয়ে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন তাঁর প্রিয় দেশের মাটিতে, যেখানে ঘুমিয়ে আছেন তাঁর অগ্রজরা, যাঁদের স্মরণে তিনি রচনা করেছিলেন কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্র“য়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?’ আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে জাতি হারাল একজন পথনির্দেশক, যাঁর পথনির্দেশনায় আমরা অসাম্প্রদায়িকতার দীক্ষাকে বারবার করেছি শানিত। এই মহামানবের প্রয়াণে বাঙালিরা তাঁকে জানাবেন চিরবিদায়। আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন তাঁকে জান্নাতবাসী করেন।

লেখক : বিচারপতি, আপিল বিভাগ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর