মঙ্গলবার, ৩১ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
আর্মি সিলেকশন বোর্ডের সভায় প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে উজ্জ্বল হয়েছে দেশের ভাবমূর্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে উজ্জ্বল হয়েছে দেশের ভাবমূর্তি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজস্ব অর্থায়নে বহুল-প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। আগামী ২৫ জুন যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হবে।

গতকাল ঢাকা সেনানিবাসের সেনা সদর দফতরের মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে আর্মি সিলেকশন বোর্ড-২০২২ এর বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে তাঁর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের এ একটি সিদ্ধান্ত-বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার পাশাপাশি জাতির আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, জনৈক ব্যক্তি পদ্মা সেতু প্রকল্পে মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ আনায়- কোনো বোর্ড মিটিং না করেই বিশ্বব্যাংক সেতুটি নির্মাণে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল। যদিও পরে ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করেছি, (বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি অর্জন করেছে) তা নিয়ে আমাদের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন জাতি গঠনমূলক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আর্মি সবসময়ই অবকাঠামো নির্মাণসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে অবদান রেখে গেছে। প্রধানমন্ত্রী তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণের আত্মবিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, কভিড-১৯ মহামারিতে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিবিসহ সবাই জনগণের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়িয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমন ও অভিযোজন সংক্রান্ত সরকারি পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি বলেন, তাঁরা জলবায়ু উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিতে কক্সবাজারের খুরুসকুলে ফ্ল্যাট নির্মাণ করেছেন। তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন যে, সারা দেশে কেউ ভূমিহীন এবং গৃহহীন থাকবে না। কারণ তাঁর সরকার বিনামূল্যে জমি দিয়ে বাড়ি করে দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশই একমাত্র উদাহরণ যেখান থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গতিশীল নেতৃত্বে তিন মাসের মধ্যে মিত্রবাহিনী তাদের দেশে ফিরে গেছে। তৎকালীন পূর্ব (বর্তমানে বাংলাদেশ) এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিটি সেক্টরে বিশেষ করে সরকারি চাকরিতে বৈষম্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাকিস্তানি সামরিক সার্ভিসে শুধু একজন কর্নেল ছিলেন। তিনি বলেন, তবে এখন জেনারেলরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আছেন এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ঊর্ধেŸ উঠে নেতৃত্বের জন্য পেশাদারি দক্ষতা, উৎকর্ষ, সততা ও দেশপ্রেম সম্পন্ন কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিতে হবে। আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, নিরপেক্ষ মূল্যায়নের মাধ্যমে পেশাদারভাবে দক্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন করা সম্ভব এবং আপনাকে পদোন্নতির  জন্য উচ্চ নৈতিক চরিত্রের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্তরা সততা, ন্যায়পরায়ণতা এবং ন্যায়বিচারের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, আনুগত্যসহ নেতৃত্বের জন্য দৃঢ় মানসিকতা, সততা এবং অন্যান্য গুণাবলিসম্পন্ন কর্মকর্তারা উচ্চতর পদোন্নতির জন্য যোগ্য। যাদের সামরিক জীবনে সফল নেতৃত্বের রেকর্ড রয়েছে এমন অফিসারদের পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা উচিত। সেনাবাহিনীর সদস্যরা সর্বদা জনগণের পাশে থাকে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর পরই একটি উন্নত, পেশাদার ও প্রশিক্ষিত বাহিনী গড়ে তুলতে ১৯৭২ সালে কুমিল্লায় মিলিটারি একাডেমি প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর সরকার বঙ্গবন্ধুর প্রতিরক্ষা নীতি অনুসরণ করে ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়নের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন অব্যাহত রেখেছে।

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর : ভরা মৌসুমেও বাড়ছে চালের দাম। এক মাসের ব্যবধানে মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১৫ টাকা। এ অবস্থায় কেন চালের দাম বাড়ছে তা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি কেউ অবৈধভাবে চাল মজুদ করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ নির্দেশ দেন। বৈঠকের পর সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘মার্কেট মেকানিজম নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও ছিলেন। আমরা কীভাবে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে পেমেন্টগুলো এনশিউর করতে পারব তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে চাল ও তেল নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। এ ভরা মৌসুমে চালের কেন দাম বেশি, এ নিয়ে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার কিছু রিপোর্ট এবং পরামর্শ ছিল। এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের মার্কেট জরিপ করে দ্রুত অ্যাকশনে যেতে বলা হয়েছে। কোথায় কোথায় চালকে স্টক করে, আমাদের কাছে কিছু তথ্য আছে। ধরুন আমি যে কাজটি করব, ইন্ডাস্ট্রি করব বা প্রোডাকশনে যাব আমার তো মেমোরেন্ডাম অ্যাসোসিয়েশন আছে। মেমোরেন্ডাম অ্যাসোসিয়েশনে বলা আছে, আমি কী করতে পারব। আমাদের মনে হচ্ছে যে এমনও হতে পারে, কেউ কেউ মেমোরেন্ডাম অ্যাসোসিয়েশনকে অতিক্রম করে চালের ব্যবসায় নেমে গেছেন।’

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ধরুন আমার হাজার হাজার কোটি টাকা আছে। আমি মার্কেট থেকে ধান আর চাল কিনে স্টক করলাম। এগুলো কত দিন আমি রাখতে পারব? এ বিষয়গুলো সুপারভিশন করে দ্রুত নির্দেশ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী, সচিব, খাদ্যমন্ত্রী, সচিব আর কৃষি সচিবকে বসে দ্রুত এ বিষয়টি দেখতে এবং মার্কেট সার্ভে করতে বলা হয়েছে। কেন এ ভরা মৌসুমে চালের দাম এত বেশি থাকবে? কিছুদিন আগে তেলের ইস্যুতে যে রকম ড্রাইভ (অভিযান) দেওয়া হলো, তো ও রকম ড্রাইভ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদি কেউ অনুমতি ছাড়া চাল ব্যবসা বা মজুদ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম আরও বলেন, আজকের বৈঠকে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন আইন, ২০২২-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বিসিককে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে, যাতে বিনিয়োগকারীরা উৎসাহী হন। নারী উদ্যোক্তাদেরও কাজে উৎসাহী করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি বৈঠকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট সংশোধন আইন, ২০২২-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর ফলে একটি স্থায়ী ট্রাস্ট গঠন করা হবে। যার নাম হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা গবেষণা ট্রাস্ট। এ ছাড়া এখন থেকে ওমানে যেতে শ্রমিকদের ভিসা লাগবে না। এ-সংক্রান্ত চুক্তির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর