বুধবার, ১ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

শিশু আইনের বিধিমালা হয়নি নয় বছরেও

প্রয়োগে সমস্যা হয় অনেক ধারায়

আরাফাত মুন্না

শিশু আইন ২০১৩ সালে প্রণয়ন হওয়ার পর নয় বছর পার হলেও এখনো আইনটির বিধিমালা প্রণয়ন হয়নি। বিধিমালা না থাকায় আইনটির প্রায়োগিক সমস্যা হচ্ছে। অনেক ধারা বিধি দ্বারা নির্ধারিত হওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় সেইসব ধারায় শিশুদের পক্ষে প্রতিকার চাওয়া যাচ্ছে না। ফলে একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদ উপেক্ষিত হচ্ছে, অন্যদিকে শিশুর মৌলিক অধিকারও লঙ্ঘন হচ্ছে। দ্রুত এ সমস্যা সমাধান জরুরি বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা। এদিকে হাই কোর্টের এক রায়েও শিশু আইনের নানা অস্পষ্টতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। ওই রায়ে হাই কোর্ট বলেছেন, আমাদের বলতে দ্বিধা নেই, শিশু আইন ও আদালত নিয়ে বর্তমানে নিম্ন আদালত ও হাই কোর্ট বিভাগে এক ধরনের বিচারিক বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে।

জানা গেছে, বিভিন্ন মহলের দাবিদাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ শিশু আইন-১৯৭৪ রহিত করে ২০১৩ সালে নতুন আইন করা হয়। এরপর সমাজসেবা অধিদফতর বিধিমালা প্রণয়ন করতেই দুই বছর সময় নেয়। দুই বছরেরও বেশি সময় পর তারা বিধিমালার একটি খসড়াও প্রণয়ন করে। এরপর আর আগায়নি বিধিমালা প্রণয়নের কাজ।

শিশু অধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা বলছেন, শিশুর অপরাধের মতো সংবেদনশীল বিষয় বিচারে পৃথক আদালত থাকাই বাঞ্ছনীয়। আইনে বলা হয়েছে, আদালত কক্ষের ধরন ও সাজসজ্জা শিশুবান্ধব হতে হবে। বিচার চলাকালীন আদালতে যেসব আইনজীবী, পুলিশ বা কর্মচারী থাকবেন, দাফতরিকের পরিবর্তে স্বাভাবিক পোশাক পরবেন। অথচ বিধিমালা না থাকায় সাধারণ এজলাসেই শিশু আদালতের কার্যক্রম চলছে। আইনজীবীদের মতে, শিশু আইনের ১৯ ধারা অনুযায়ী আদালতের এসব পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে, তখনই সেটিকে উপযুক্ত শিশু আদালত বলা যাবে। ‘শিশু আইনের ১৯(১) ধারায় বলা হয়েছে, আদালতকক্ষের ধরন, সাজসজ্জা ও আসন বিন্যাস বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে’। ৩১(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশুকে শিশু-আদালতে হাজির করিবার অনধিক ২১ (একুশ) দিনের মধ্যে প্রবেশন কর্মকর্তা, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে, শিশু-আদালতে একটি সামাজিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করিবেন এবং উহার অনুলিপি নিকটস্থ বোর্ড-এ ও অধিদফতরে দাখিল করিবেন।’ এই ধারা দুটিসহ শিশু আইনের অনেক ধারাই ‘বিধি দ্বারা নির্ধারিত’ হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। চিলড্রেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের (সিসিবি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার এম আবদুল হালিম মোবাইল ফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আইনে শিশুকে হেফাজতে নেওয়া, ক্ষতিপূরণ আদায়সহ বেশ কিছু ধারায় বিধি দ্বারা নির্ধারিত হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ফলে বিধি না হওয়ায় আমরা আদালতে গিয়ে ওইসব ধারায় শিশুর জন্য প্রতিকার চাইতে পারি না। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে আইন হওয়ার পর ২০২২ সালেও বিধিমালা প্রণয়ন না হওয়া দুঃখ জনক। বিধিমালা প্রণয়ন না হওয়ায় একদিকে যেমন শিশুর মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, আরেকদিকে আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদেরও লঙ্ঘন হচ্ছে। এখন এই আইন বাস্তবায়নে বিধিমালা প্রণয়ন করাও খুব জরুরি।

জানতে চাইলে আইনজীবী ইমতিয়াজ আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আইনে বলা হয়েছে, শিশু আদালতের পরিবেশ ভিন্ন হবে। শিশু আদালতে সেই পরিবেশ দেখছি না। সাধারণ এজলাসেই বিচার হচ্ছে শিশুদের। তিনি বলেন, এসব সমস্যার সমাধানে দ্রুত শিশু আইনের বিধিমালা প্রণয়ন জরুরি।

সর্বশেষ খবর