শুক্রবার, ৩ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
চার আসামির জবানবন্দি

প্রেমিকের সঙ্গে মায়ের অনৈতিক সম্পর্ক দেখে ফেলায় শিশু হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে মায়ের অনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখে ফেলায় শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় বরিশালের উজিরপুরের হারতা এলাকার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র দীপ্ত মণ্ডলকে (৮)। হত্যার পর শিশুটিকে দুই দিন ফেলে রাখা হয় সেলুনের মধ্যে বসার জন্য তৈরি বক্সের মধ্যে। দুই দিনে মরদেহে দুর্গন্ধ এবং শরীর থেকে তরল পদার্থ বের হলে ২৯ মে লাশটি বস্তায় ভরে ডোবায় ফেলে দেন মা সীমা মণ্ডল, তার পরকীয়া প্রেমিক নয়ন শীল এবং সেলুন মালিক রতন বিশ্বাস ও তার স্ত্রী ইভা বিশ্বাস। ৩১ মে ভোররাতে ডোবা থেকে তার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় গ্রেফতার এই চার আসামি বুধবার বরিশালের আদালতে শিশু দীপ্ত হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে স্বীকোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। দীপ্ত মণ্ডল ওই উপজেলার হারতা ইউনিয়নের কাজীবাড়ির দীপক মণ্ডলের ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে বড় ছিল। উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আর্শাদ জানান, ২৭ মে রাতে ১১টার দিকে দীপ্তর মা সীমা মণ্ডল পরকীয়া প্রেমিক নয়ন শীলের সঙ্গে তার কর্মস্থল সেলুনের শাটার আটকে অনৈতিক কাজ করছিলেন। দীপ্ত তার মাকে খুঁজতে খুঁজতে নয়ন শীলের সেলুনের শাটার টেনে তাদের আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পায়। বিষয়টি সে তার বাবা দীপক মণ্ডলকে জানাবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়। এ নিয়ে বাদানুবাদের একপর্যায়ে পরকীয়া প্রেমিক ও মা সীমা দুজন মিলে গলা টিপে ধরে দীপ্তকে হত্যা করেন।

মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তার মরদেহ সেলুনে গ্রাহকের বসার জন্য কাঠের তৈরি বক্সের মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয়। দুই দিন বক্সের মধ্যে থাকায় লাশে পচন ধরে এবং নাক, কান ও মুখ দিয়ে তরল পদার্থ বের হয়। এতে বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ২৯ মে রাতে বস্তায় ভরে শিশুর লাশটি অদূরে একটি ডোবায় তারা দুজন ও সেলুন মালিক দম্পতি ফেলে দেন। ২৮ জুন দীপ্তর বাবা থানায় একটি নিখোঁজের ডায়েরি করেন। দীপ্ত নিখোঁজের ঘটনায় সন্দেহ হওয়ায় এলাকাবাসী নয়ন ও রতনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তারা দীপ্তকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। খবর পেয়ে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে বরিশাল মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে নয়ন ও সেলুন মালিক দম্পতিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তারা নয়ন ও তার পরকীয়া প্রেমিকা সীমার অনৈতিক সম্পর্ক দেখে ফেলায় শিশুটিকে হত্যা এবং হত্যার পর লাশ লুকাতে সহযোগিতার কথা স্বীকার করেন। পরে সীমাকেও আটক করে পুলিশ।

এ ঘটনায় দীপ্ত মণ্ডলের বাবা দীপক মণ্ডল বাদী হয়ে ৩১ মে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে গত ১ জুন বিকালে চারজনকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। আদালতে তারা চারজন দীপ্ত হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

সর্বশেষ খবর