শনিবার, ৪ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

মাদক দুর্নীতি নিয়ে সরগরম কুমিল্লা বাগ্‌যুদ্ধে মেয়র প্রার্থীরা

পরস্পরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ

গোলাম রাব্বানী ও মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা থেকে

মাদক দুর্নীতি নিয়ে সরগরম কুমিল্লা বাগ্‌যুদ্ধে মেয়র প্রার্থীরা

কুমিল্লায় জমজমাট প্রচারণায় ব্যস্ত আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রিফাত ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সাক্কু -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাঠে চলছে বাগ্যুদ্ধ। নির্বাচনের লড়াইয়ে পাঁচ মেয়র প্রার্থী থাকলেও তিন মেয়র প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে বক্তব্য দিয়েছেন। নির্বাচনের মাঠ সরগরম হয়ে উঠেছে দুর্নীতি-মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নিয়েই। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে মাঠে নেমেছেন। তিনি বিভিন্ন উঠান বৈঠক-পথসভায় সাক্কুর দুর্নীতি নিয়ে কথা বলছেন। ঘোষণা দিয়েছেন নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশনের দুর্নীতির একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের।

আওয়ামী লীগ প্রার্থীর অভিযোগের পাল্টা জবাবও দিচ্ছেন কুমিল্লা সিটির দুবারের মেয়র ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতায় অভিযুক্ত করছেন। অপর স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার রিফাত-সাক্কু দুজনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ তুলছেন। গতকাল সকালে নগরীর জাঙ্গালিয়া এলাকায় পরিবহন মালিক সমিতির সঙ্গে মতবিনিময় করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রিফাত। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সদ্য সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর উদ্দেশে বলেন, সিটি করপোরেশনের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে। সৎ হলে তথ্যপ্রমাণ নিয়ে টাউন হল মাঠে বসতে সাক্কুকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন তিনি। কুমিল্লা সিটির ২০ নম্বর ওয়ার্ডে উনাইসার মোড়ে উঠান বৈঠক ও গণসংযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। সেখানে তিনি পাল্টা বলেন, আমরা মুখ খুললে অনেক কথা বলতে পারি। আমরা তো কিছু বলি না। আমি চোর হলে তারাও চোর। তারাও চুরির ভাগীদার। আমি তো বলি কোনো চুরি হয়নি। চুরি হলে মন্ত্রণালয় আছে, দুদক আছে। তারা ব্যবস্থা নেবে। মারপিট করতে চাইলে জায়গা ঠিক করে আসেন।

এ ছাড়া গতকাল তিনি অন্য এলাকায় গণমাধ্যমকে বলেন, আমি চোর হলে রিফাত বড় চোর। রিফাত হো আর ইউ? উনি কি জজ? না সরকার? উনি প্রমাণ করুক। উনি গায়ের জোরে কথা বলেন। গায়ের জোর বেশি থাকলে স্টেডিয়ামে আসুক। আমিও জামু। তিনি আরও বলেন, সীমা (বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী) মনোনয়ন পেলে তাকে ফেল করাতে রিফাত তো আমার পিছে থাকত।

নগরীর থিরা পুকুরপাড় এলাকায় নির্বাচনী প্রচার চালান আরেক স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। তিনি অভিযোগ করেন, সাক্কু-রিফাত দুজনেই দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত। মানুষ মাদক কারবারি ও দুর্নীতিবাজ থেকে মুক্তি চায়।

চলছে বাগ্যুদ্ধ : এর আগে বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত বলেছেন, সাক্কু টানা ১৬ বছর ক্ষমতায়। তিনি মানুষকে পানির নিচে রেখেছেন। যানজটের দুর্ভোগে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। তিনি কাজ না করে সরকারি বরাদ্দ লুটপাট করেছেন। নগরীর উন্নয়নে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।

এদিকে বিএনপির সাবেক নেতা মনিরুল হক সাক্কু প্রথমে কৌশলী ভূমিকা ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলতে শুরু করেছেন। তিনি বলেন, কে কী বলল সেগুলো নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। আমি মানুষের দুয়ারে যাচ্ছি তাদের দোয়া নিতে। আমি যদি চুরি করতাম, লুটপাট করতাম তাহলে গোয়েন্দা সংস্থা ও দুদক আমার নামে মামলা করলা না কেন। এদিকে তিনি মঙ্গলবার নগরীর ধর্ম সাগরের পশ্চিম পাড়ে এক উঠান বৈঠকে রিফাতের বক্তব্য টেনে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেই প্রকাশিত হয়েছেন উনি ১ নম্বর মাদক কারবারি। আমি যদি দুর্নীতি করে থাকি গত ৯ বছর তিনি কেন বলেননি। এখন কেন এ কথা বলছেন?

এর আগে কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, রিফাত ও সাক্কু দুজন একই নেতার লোক। তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। তাদের থেকে মানুষ মুক্তি চায়। নির্বাচনে লড়ছি তাদের থেকে নগরবাসীকে মুক্ত করার জন্য।

কুমিল্লায় প্রচারণায় আওয়ামী লীগ নেতারা : সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারে গতকাল কেন্দ্রীয় নেতারা কুমিল্লায় এসেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর। তিনি বলেন, প্রতিনিধি দলে রয়েছেন দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলীসহ অন্য নেতারা। এদিকে জমজমাট প্রচার-প্রচারণা চলছে কুমিল্লা সিটিতে। সকাল থেকে রাত, ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা, নগরী চষে বেড়াচ্ছে শত শত প্রচার মাইক; চায়ের আড্ডায় হচ্ছে ভোটের নানা হিসাব-নিকাশ। গতকাল জুমার নামাজ শেষে মসজিদে মসজিদে লিফলেট বিতরণ করতে দেখা গেছে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের। নগরীর অলিগলি ছেয়ে গেছে পোস্টারে। বিভিন্ন প্যারডি গানের তালে মাইকে চলছে ভোটের প্রচারণা।

এক নজরে সিটি ভোট : প্রার্থীরা টানা ১৩ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের শর্ত মেনে প্রচার চালাতে পারবেন। ১৫ জুন সকাল থেকে ১০৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট দেবেন নগরবাসী। এ নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচজন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ‘নৌকা’, বিএনপির সাবেক নেতা, সাবেক মেয়র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ‘টেবিল ঘড়ি’, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার ‘ঘোড়া’ ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল ‘হরিণ’ এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাশেদুল ইসলাম ‘হাতপাখা’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে আছেন। এ ছাড়া সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন দুজন।

সর্বশেষ খবর