শনিবার, ৪ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
জরিপ প্রতিবেদন

গণপরিবহনে ৪৭% নারী যৌন হয়রানির শিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

গণপরিবহনে ৬৩ শতাংশ নারী নানা ধরনের হয়রানির শিকার হন। এর মধ্যে যৌন হয়রানির শিকার হন প্রায় ৪৭ শতাংশ নারী। ভুক্তভোগীদের মধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশ পরবর্তী সময়ে মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হন। নিপীড়নকারীদের মধ্যে ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের সংখ্যা বেশি। গতকাল অনলাইনে আঁচল ফাউন্ডেশন প্রকাশিত ‘ঢাকা শহরে গণপরিবহনে হয়রানি : কিশোরী এবং তরুণীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব’ শীর্ষক এক জরিপ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। জরিপে ১৩ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৮০৫ জন নারী অংশ নেন।  জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৬ শতাংশ। জরিপ শুরুর সময়ের ছয় মাস আগ পর্যন্ত হয়রানির মুখোমুখি হয়েছেন এমন নারীদের তথ্য এতে যুক্ত করা হয়েছে। এজন্য অফলাইন ও অনলাইনে জরিপ করা হয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলা হয়। জরিপটি পরিচালনা করা হয় এ বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত।

জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, যৌন হয়রানির মধ্যে রয়েছে গণপরিবহনে ওঠা-নামার সময় চালকের সহকারীর অযাচিত স্পর্শ, বাসে জায়গা থাকার পরও যাত্রীদের গা ঘেঁষে দাঁড়ানো, বাজেভাবে স্পর্শ করা, ধাক্কা দেওয়া, বাজে মন্তব্য করা। জরিপে অংশগ্রহণকারী বেশির ভাগ নারী ঝামেলা এড়াতে এসব ঘটনার প্রতিবাদ করেননি। জরিপে রাজধানী ঢাকার বাস, ট্রেন, লেগুনা, রাইড শেয়ারিং ইত্যাদিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আজিমপুর, মিরপুর, গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, বারিধারাসহ বিভিন্ন এলাকার স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং কর্মজীবী নারী ও কিছু সংখ্যক গৃহবধূর ওপর জরিপটি পরিচালনা করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যৌন হয়রানির পাশাপাশি ১৫ শতাংশ বুলিং, ১৫ শতাংশ সামাজিক বৈষম্য, ১৫ শতাংশ লিঙ্গবৈষম্য এবং ৮ শতাংশ শারীরিক গঠন নিয়ে নারীরা হয়রানির শিকার হয়েছেন। কারা যৌন নিপীড়ন করেছে জানতে চাইলে জরিপে অংশ নেওয়া ৭৫ শতাংশ নারী জানান, তারা অন্য যাত্রীদের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হয়েছেন। ২০ শতাংশ চালকের সহকারী, ৩ শতাংশ হকার এবং ২ শতাংশ চালকের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হয়েছেন।

প্রায় ৬২ শতাংশ কিশোরী ও তরুণী জানান, ৪০ থেকে ৫৯ বছর বয়সীদের মাধ্যমে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। ৩৬ শতাংশ জানান, কিশোর ও যুবক অর্থাৎ ১৩ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। নারী যাত্রী ওঠানো এবং নামানোর সময় চালকের সহকারীদের নেমে দাঁড়ানোর কথা থাকলেও তারা বাসের দরজায় অবস্থান করে অযাচিতভাবে স্পর্শ করে বলে অভিযোগ এসেছে। প্রায় ৬১ শতাংশ নারী জানান, ওঠা-নামার সময় সহকারীরা অনাকাক্সিক্ষতভাবে স্পর্শ করেছে। প্রায় ২৫ শতাংশ নারী জানান, ছয় মাসে অন্তত তিনবার তাদের এ ধরনের স্পর্শের মুখোমুখি হতে হয়েছে। গণপরিবহনে কোন ধরনের যৌন হয়রানির শিকার বেশি হয়েছেন জানতে চাইলে জরিপে অংশগ্রহণকারী ৩১ শতাংশ কিশোরী ও তরুণী জানান, গণপরিবহনে অনেক সময় ফাঁকা জায়গা থাকলেও অন্য যাত্রীরা ইচ্ছাকৃতভাবে গা ঘেঁষে দাঁড়ায়। ইচ্ছাকৃতভাবে হালকাভাবে স্পর্শের শিকার হয়েছেন ১৮ শতাংশ নারী। ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কার শিকার হয়েছেন ১৪ শতাংশ আর প্রায় ১৪ শতাংশ কিশোরী-তরুণী জানান, তারা বাজে মন্তব্যের শিকার হয়েছেন। হালকা ভিড়ে প্রায় ৩৩ শতাংশ এবং অতিরিক্ত ভিড়ে ২৭ শতাংশ যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। ঝামেলা এড়াতে বেশির ভাগ নারীই প্রতিবাদ করেননি। জরিপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ। গণপরিবহনে হয়রানি প্রতিরোধে ১০ দফা প্রস্তাব করে আঁচল ফাউন্ডেশন।

 

সর্বশেষ খবর