রবিবার, ৫ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি ও কটূক্তি

সারা দেশে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ-প্রতিবাদ সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য, হত্যার হুমকি ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারা দেশে গতকাল বিক্ষোভ-প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। এদিন সকাল থেকে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোও আলাদাভাবে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করেছে। রাজধানীতে ব্যাপক শোডাউন করেছে কৃষক লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ। পৃথক পৃথক সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, নির্বাচনে জনগণের রায় নিয়ে শেখ হাসিনার সরকারকে সরানো যাবে না জেনে বিএনপি হত্যা-ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়। সে কারণে তারা শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। এমতাবস্থায় ঘরে বসে থাকার সময় নেই। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তাদের দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে। যারা শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিয়ে বক্তব্য-মিছিল করবে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে। সন্ত্রাসী-খুনিদের উৎখাত করে বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করা হবে।

কৃষক লীগ : গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিল করে কৃষক লীগ। এ সময় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী এমপি বলেন, বিএনপি, যাদের জন্মই হয়েছিল হত্যা ও ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে। তাদের হাতে কৃষক গুলিবিদ্ধ হয়েছে, কৃষকবিরোধী, শ্রমিকবিরোধী ষড়যন্ত্রই তাদের মূল লক্ষ্য। তিনি স্লোগান তুলে বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার, বার বার দরকার’। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, মুখ সামলিয়ে কথা বলবেন, সংযত থাকুন। ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না। এদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে বিএনপি-জামায়াতের সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।

কৃষক লীগ সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি বিদেশি প্রভুদের সহায়তায় কৃষকরত্ন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় বাংলার কৃষক সমাজ ঘরে বসে থাকতে পারে না। সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি বলেন, ছাত্রদল নেতা জুয়েলকে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। পরে প্রতিবাদ মিছিল প্রেস ক্লাব থেকে শুরু হয়ে পল্টন হয়ে জিপিও মোড় হয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় ছাত্রদল নেতা জুয়েলের কুশপুত্তলিকা দাহ করার মাধ্যমে বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিল সমাপ্ত হয়।

সেচ্ছাসেবক লীগ : বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগ। এ সময় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, আজকে যখন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হবে এবং জাতীয় নির্বাচনের দেড় বছর আছে, দেশকে যখন উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা; তখন তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। যে কোনোভাবে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা হয় শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চায়, না হয় ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করতে চায়। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, একাত্তর, পঁচাত্তর ও ২১ আগস্টের খুনিরা এখন অভিন্ন শক্তি। এই খুনিদের বাংলাদেশের রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই। বিএনপিকে গণতান্ত্রিকভাবে রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলে কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে। যারা শেখ হাসিনাকে হত্যার বক্তব্য দিয়ে মিছিল করবে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে। সন্ত্রাসী-খুনিদের উৎখাত করে বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করা হবে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি কামরুল হাসান রিপনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী নজিবুলাহ হিরু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আফজালুর রহমান বাবু, সহসভাপতি শামীম শাহরিয়ার, সালেহ মোহাম্মদ টুটুল, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদ। পরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা।

যুবলীগ : সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বর্ধিত সভা ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী যুবলীগ। এ সময় কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য রফিকুল ইসলাম, তাজ উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জয়দেব নন্দী, উপ-দফতর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন। একই দিন বিকালে একই স্থানে বর্ধিত সভা করে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগ। এসব কর্মসূচি থেকে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলে কঠোরভাবে প্রতিহতের ঘোষণা দেওয়া হয়। এদিকে একই ইস্যুতে আজ রবিবার সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করবে যুবলীগ। বিকালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের এক বর্ধিত সভা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইনুদ্দিন রানার সভাপতিত্বে এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয়। এখানে মহানগরীর নেতা ছাড়াও কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বক্তৃতা করেন। পরে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি হাই কোর্ট হয়ে প্রেস ক্লাব, পুরানা পল্টন হয়ে গুলিস্তানে এসে শেষ হয়। এ ছাড়া গতকাল সারা দেশেও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

সিলেট : সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে পৃথক কর্মসূচি পালিত হয়। সিলেট নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠ থেকে দুপুর ১২টায় সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ ও বেলা ২টায় মহানগর আওয়ামী লীগ বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল দুটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সিলেট শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ পৃথক প্রতিবাদ সমাবেশ করে। পৃথক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান প্রমুখ।

রংপুর : রংপুর প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফির সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন তুষার কান্তি মণ্ডল, দিলশাদ ইসলাম মুকুল, শাহাদত হোসেন, জাসেম বিন জুম্মনসহ মেট্রোপলিটন এলাকার ছয়টি থানা ও সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা।

খুলনা : বেলা ১১টায় দলীয় কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক শেখ হারুনুর রশীদ। বক্তৃতা করেন জেলা সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী। বিকালে নগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা, সাবেক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম।

বগুড়া : দুপুর ১২টায় শহরের সাতমাথা মুজিব মঞ্চে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে সভাপতির বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু। আরও বক্তব্য রাখেন জেলা সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম মন্টু, প্রদীপ কুমার রায়, অ্যাডভোকেট আমানুল্লাহ, এ কে এম আছাদুর রহমান দুলু, কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মতিউর রহমান বাদশা, অ্যাডভোকেট তবিবুর রহমান তবি, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন নবাব, অধ্যক্ষ শাহাদাত আলম ঝুনু, সুলতান মাহমুদ খান রনি, আবদুল্লাহ আল রাজি জুয়েল, অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম আক্কাস, নাসরিন রহমান সীমা প্রমুখ।

টাঙ্গাইল : সকাল ১০টায় জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে হাজির হন। পরে সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক ফজলুর রহমান খান ফারুকের সভাপতিত্বে বক্তৃতা করেন, সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের এমপি, ছানোয়ার হোসেন এমপি, তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি, পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল হক আলমগীর প্রমুখ।

মাগুরা : শহরের চৌরঙ্গী মোড় সেগুন বাগিচায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ফাত্তাহর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর। বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ প্রশাসক পঙ্কজ কুমার কুণ্ডু, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু নাসির বাবলু, পৌরমেয়র খুরশীদ হায়দার টুটুল প্রমুখ।

নোয়াখালী : বেলা ১১টায় জেলা শহর মাইজদীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে শেষ হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক খায়রুল আনম সেলিম, যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাব উদ্দিন শাহিন, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু প্রমুখ।

বাগেরহাট : বাগেরহাটের জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিকালে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে বক্তৃতা করেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ভূইয়া হেমায়েত উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. শাই আলম বাচ্চু, ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, আলী আকবর, সরদার সেলিম আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খান হাবিবুর রহমান, সরদার ফখরুল আলম সাহেব, মনোয়ার হোসেন টগর প্রমুখ।

সাতক্ষীরা : জেলার শ্যামনগর উপজেলায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবাদ সমাবেশে নেতৃত্ব দেন স্থানীয় এমপি মো. জগলুল হায়দার।

সিরাজগঞ্জ : জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ তালুকদারের নেতৃত্বে শহরে বিশাল মিছিল বের করা হয়। এতে স্থানীয় এমপি হাবিবে মিল্লাত মুন্নাসহ স্থানীয় নেতারা অংশগ্রহণ করেন।

সর্বশেষ খবর