চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডে ক্ষতি হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন অংশীজনরা। প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব কষা শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। পোশাকশিল্প মালিকরা এ অগ্নিকান্ডকে চরম আঘাত হিসেবে দেখছেন। আর পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই বলেছে- অন্যান্য কনটেইনার ডিপো ও বন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। কেমিক্যাল ও অন্যান্য পণ্যসামগ্রী একই ডিপোতে রাখা যাবে না। নিশ্চিত করতে হবে পণ্যের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা। এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুনে বিশাল ক্ষতি হয়েছে ব্যবসায়ীদের। রপ্তানি খাতের অনেক পণ্য ওই ডিপোতে ছিল। বিশেষ করে ইউরোপে প্রচুর পণ্য যেত এই ডিপো থেকে। তৈরি পোশাকশিল্পের বৈশি^ক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এইচঅ্যান্ডএমের পণ্য এই ডিপো হয়ে রপ্তানি হতো। এ ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের ভাবমূর্তি সংকটে পড়বে। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে অন্য ডিপো ও বন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। ফায়ার সার্ভিসের উচিত সুরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা। আরেকটি বিষয় হলো- কেমিক্যালের সঙ্গে অন্য পণ্যসামগ্রী রাখা যাবে না। বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিকেএমইএ কার্যকরী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গতকাল বলেন, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পে চরম আঘাত হেনেছে। মূলত এইচঅ্যান্ডএমের পণ্য বেশি ছিল ওই ডিপোতে। এ আগুনে নতুন করে শঙ্কার জায়গা তৈরি হয়েছে। এখন আমাদের দাবি- কেমিক্যালের জন্য পৃথক ডিপো করতে হবে। ডিপোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এটা বড় ধরনের দুর্ঘটনা। তাই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বীমা দাবি দ্রুত পরিশোধ করতে হবে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএ সহসভাপতি মো. শহীদুল্লাহ আজিম গতকাল বলেন, এ আগুনের ঘটনায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আবারও সংকটে পড়বে। পোশাক মালিকরা ক্রয়াদেশ হারাবেন। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের পোশাক কারখানাগুলোকে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব-নিকাশ করে জানাতে বলেছি। ইতোমধ্যে ৭ থেকে ৮টি কারখানা তাদের পণ্য নষ্ট হওয়ার তথ্য দিয়েছে। এখন পরিস্থিতি বুঝে সরকারকে করণীয় ঠিক করতে হবে। কারণ, ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বিজিএমইএ সূত্র বলছে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লেগে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার পণ্য পুড়ে গেছে। এ ঘটনা রপ্তানি খাতের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। ইতোমধ্যে বিজিএমইএ একটা সার্কুলার জারি করেছে। এতে সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য যে ডিপোতে ছিল, তার বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৯০০ কোটি টাকা মূল্যের রপ্তানি পণ্য একেবারেই পুড়ে গেছে। এ ব্যাপারে আরও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) কর্তৃপক্ষের মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদারের মতে, ডিপোতে ক্ষয়ক্ষতি ১১ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে রপ্তানি কনটেইনারে ৪৫ মিলিয়ন ডলার (৪০৪ কোটি টকা) ও আমদানি পণ্যের কনটেইনারের ক্ষেত্রেও ৪৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি এবং অন্তত ২০ মিলিয়ন ডলারের (১৮০ কোটি টাকা) খালি কনটেইনারের ক্ষতি হয়েছে। যদিও সঠিক নিরূপণ করা এখনো সম্ভব হয়নি। সেখানে হিমায়িত খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি তৈরি পোশাকও ছিল। জানা গেছে, সীতাকুন্ডের ভাটিয়ারী এলাকার একটি কনটেইনার ডিপোতে শনিবার রাতে আগুন লাগে। এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। তাদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ কর্মীও রয়েছেন। আগুনে দগ্ধ ও আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগুন নেভাতে আসা ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের রাসায়নিক পদার্থ থাকার বিষয়টি জানানো হয়নি। তবে ডিপো কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, তারা রাসায়নিকের কথা জানিয়ে পানির পরিবর্তে এক্সটিংগুইশার ব্যবহারের কথা বললেও ফায়ার সার্ভিস তা শোনেনি। আগুনে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে ডিপো ম্যানেজার নাজমুল আক্তার খান তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বলেছেন- ডিপোতে ৪ হাজার ৩০০ কনটেইনার ছিল। এর মধ্যে খালি ছিল ৩ হাজার। বাকি ১৩০০ কনটেইনারে বিভিন্ন রপ্তানি পণ্য ছিল। যার মধ্যে অধিকাংশই পোশাক খাতের রপ্তানি পণ্য।