শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

ক্ষতিকর প্রভাব পরিবেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম

সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর রাসায়নিক বিস্ফোরণের ঘটনা পরিবেশ ও মানবদেহে ভয়ংকর প্রভাব ফেলবে। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির পাশাপাশি অঙ্গহানিরও আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, বিএম কনটেইনার ডিপোয় হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের পাশাপাশি আর কী ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ছিল তা নিরূপণ না হওয়াটাই ভয়াবহ আতঙ্কের বিষয়। তবে রাসায়নিক পদার্থের তীব্রতা ও ধরনের কথা চিন্তা করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাসুরা শাম্মী  বলেন, ‘আমরা এখনো জানতে পারিনি হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ছাড়া আর কী ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ওই ডিপোয় ছিল। ডিপো কর্তৃপক্ষের উচিত হবে দ্রুত সময়ের মধ্যে তা প্রকাশ করা। তখন সে অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড একা একা বিস্ফোরিত হয় না। ওই ডিপোয় দীর্ঘ সময় ধরে যেভাবে বিস্ফোরণ ঘটেছে এবং আগুন জ্বলছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে অবশ্যই সেখানে আরও কোনো রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি ছিল। এ ক্ষেত্রে যদি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের উপস্থিতি থাকে, তার পরিণতি সত্যিকার অর্থেই হবে ভয়াবহ। লেবাননের অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরণের বিষয়টি বিশ্ববাসী জেনেছে। হাইড্রোজেন ক্লোরাইড কিংবা পেট্রোলিয়াম জাতীয় কোনো কিছুর উপস্থিতিও মারাত্মক। তবে শুধু হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডই পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলার জন্য যথেষ্ট। বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে মানুষের শ্বাসতন্ত্রের ওপর। অক্সিজেনের সঙ্গে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে ফুসফুসে ক্ষতের সৃষ্টি করবে। এ ছাড়া সেখানকার বর্জ্য পানি কিংবা বৃষ্টির সঙ্গে মিশে গিয়ে মাটি অ্যাসিডিক করে ফেলবে, যা কৃষির ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। একই সঙ্গে জীববৈচিত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘বিএম কনটেইনার ডিপোয় হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ছাড়া আর কী ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ছিল তা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ। তাই অগ্নিনির্বাপণে নিয়োজিতদের সতর্কভাবে কাজ করতে হবে। কারণ কিছু কিছু কেমিক্যাল সাগরে পড়লে ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। তাই সাগর রক্ষায় সতর্কতার সঙ্গে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।’

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাসায়নিক পদার্থ মজুদ, রপ্তানি কিংবা আমদানি যা-ই হোক না কেন এর প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা আছেন তারা এ দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। কারণ প্রটোকল মানলে এমন ভয়াবহ বিস্ফোরণ হতো না। অবশ্যই তদারকির অভাব ছিল। এজন্য যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখনো জানি না আরও কোনো রাসায়নিক পদার্থ সেখানে ছিল কি না। এজন্য দ্রুত তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। নইলে এর বর্জ্য মাটি ও পানিতে মিশে জনস্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘নিমতলী, চকবাজারের পর এখন সীতাকুণ্ড। খুব কষ্ট পাচ্ছি। মানুষের জীবন কি এতই তুচ্ছ? এখন শুনতে পাচ্ছি ওই ডিপোর রাসায়নিক পদার্থ মজুদ কিংবা প্রক্রিয়াজাতের কোনো লাইসেন্সই ছিল না। তাহলে যারা এর তদারকির দায়িত্বে ছিলেন তারা কী করেছেন এত দিন? দোষী যে-ই হোক, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় নিতে হবে প্রত্যেককে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর