বুধবার, ৮ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

আন্দোলনে গার্মেন্ট বন্ধ হলে বেতন আর বাড়বে না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আন্দোলনে গার্মেন্ট বন্ধ হলে বেতন আর বাড়বে না : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কয়েক দিন ধরে দেখতে পাচ্ছি গার্মেন্ট শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। যদি আন্দোলন করে কারখানা ও কাজ বন্ধ করে দেয় তাহলে তো চাকরি চলে যাবে। কেউ অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করলে একুল ওকুল, দু’কুল হারাতে হবে। তখন              বেতন আর বাড়বে না, বেতনহীন হয়ে যেতে হবে। গতকাল ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি আলোচনা সভায় যুক্ত হন। আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সঞ্চালনা করেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। এ সময় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ঢাকা উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদককে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হলেও তারা বক্তব্য না দিয়ে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শোনার আগ্রহের কথা জানান। বক্তব্য শুরুর পর প্রধানমন্ত্রী লক্ষ্য করেন দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত একজন নেতা-কর্মীর মুখেও মাস্ক নেই। হাসতে হাসতে বলেন, ‘একটাও মাস্ক পরেনি, যেগুলো মাস্ক পরেনি সবার জরিমানা হবে।’  

তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানির বিষয় তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কয়েক দিন আগে দেখতে পাচ্ছি গার্মেন্ট শ্রমিকরা আন্দোলন করে। আন্দোলন করে, ঠিক আছে। কিন্তু যেসব দেশ আমাদের তৈরি পোশাক কিনবে। আমরা ভালো সুবিধা পাচ্ছি। উৎপাদন বাড়ছে। এসব শ্রমিকের বেতন তো বন্ধ হয়নি। আমরা তো নিজেরা প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি, টাকা দিয়েছি। ভর্তুকি দিয়ে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা যাতে বেতনটা সরাসরি পায়, সেই ব্যবস্থা করেছি। সরাসরি ফোনের মাধ্যমে টাকা দিয়েছি। মালিকদের হাতে তো দিইনি। তিনি বলেন, আজকে বেতন বাড়া, এটা সেটাসহ নানা ধরনের আন্দোলন করতে যায়। এ রপ্তানি যদি বন্ধ হয়, তাহলে পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন ‘আমও যাবে, ছালাও যাবে’। বেতন আর বাড়বে না, তখন চাকরিই চলে যাবে। ঘরে ফিরে যেতে হবে। তখন কী করবে? যে নেতারা উসকানি দিচ্ছেন, তারা কাদের প্ররোচনায় উসকানি দিচ্ছেন তাও ভেবে দেখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি খুব খোলাখুলি বাস্তব কথাটাই বললাম। ক্রয়ক্ষমতাও সীমিত হয়ে যাচ্ছে। দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। আমরা আমেরিকা, ইউরোপসহ বিভিন্ন জায়গায় পাঠাই। প্রত্যেক জায়গায় জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। সেখানে মানুষ দুরবস্থায় আছে, কত মানুষ না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশে সবার খাদ্য, টিকা, ওষুধসহ সবকিছু দিয়ে যেতে পারছি। শেখ হাসিনা বলেন, ইংল্যান্ডের মানুষ তিন বেলা খেত, এখন এক বেলা খাবার বাদ দিয়েছে। তাদের সীমিত আকারে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে, ভোজ্য তেল এক লিটারের বেশি কেউ কিনতে পারবে না। এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভর্তুকি দিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে। আমরা প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি। রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে তুলেছিলাম। সেই টাকা ভেঙে ভেঙে বিদ্যুৎ, গ্যাস, কৃষি ও স্বাস্থ্যের জন্য ভর্তুকি এবং সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। কারণ এভাবে কোনো দেশ করেনি। বিনামূল্যে করোনা টিকা ও করোনা পরীক্ষা করার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারপরও কেউ যদি গোলমাল করার চেষ্টা করে, তাহলে এই দেশটা একেবারে যদি স্থবির হয়ে যায়, সাধারণ মানুষের কী অবস্থা হবে? তিনি বলেন, গ্রামের মানুষের অবস্থা এখনো অনেক ভালো আছে। সেটা যাতে ভালো থাকে, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছি। যে কারণে আমি আহ্বান করেছি, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। কারণ বিশ্বব্যাপী খাদ্যাভাব, খাদ্য মন্দা। সেখানে আমাদের নিজের মাটি আছে, মানুষ আছে, ফসল ফলাতে হবে। নিজের খাবারের ব্যবস্থাটা অন্তত আমরা নিজেরা করব।

সামনে আরও দাম বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে : সবাইকে মিতব্যয়ী ও খাদ্য অপচয় না করার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব তো আর সরকার করতে পারবে না। নিজেকেও করতে হবে। এটা আমি আমাদের নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনগণকে বলব। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তাড়াতাড়ি থামবে বলে মনে করেন না প্রধানমন্ত্রী। এ কারণে আমদানি ব্যয় বাড়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জিনিসের দাম তো বাড়বেই। সবাইকে সঞ্চয় করতে হবে। উৎপাদনও বাড়াতে হবে। এ অবস্থায় অশান্তি করলে দেশের ক্ষতি নিজেরও ক্ষতি। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সামনে আরও দাম বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে আমরা পদ্মা সেতু করতে পেরেছি। একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বের কাছে অনেক উচ্চ আসনে চলে গেছে। এভাবেই আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলব। জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, এই স্বাধীনতার সুফল বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে দেব। বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরে দেশে স্থিতিশীলতা এসেছে। আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। জেল-জুলুম যা-ই আমরা ভোগ করি কিন্তু বাংলাদেশে একটু স্থিতিশীলতা আমরাই আনতে পেরেছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ইতিহাসে এই প্রথম দীর্ঘ সময় একটা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই আজকে দেশের উন্নতি হয়েছে।

গ্রামের মানুষ এখনো অনেক ভালো আছে : প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আজকে করোনায় বিশ্বব্যাপী মন্দা। তার ওপর আবার রাশিয়া-উইক্রেন যুদ্ধ। এ পরিস্থিতিতে উন্নত দেশগুলো অর্থনীতিতে হিমশিম খাচ্ছে। প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট চলছে। আমরা ভর্তুকি দিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি। ভ্যাকসিন কিনে বিনা পয়সায় দিয়েছি। তারপরও কেউ যদি গোলমাল করার চেষ্টা করে, এ দেশটা যদি একেবারে স্থবির হয়ে যায় তাহলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থাটা হবে? গ্রামের মানুষ এখনো অনেক ভালো আছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, তারা যাতে ভালো থাকে সেজন্য আমরা দৃষ্টি দিচ্ছি। এ জন্য আমি বলেছি, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। বিশ্বব্যাপী খাদ্যাভাব, পণ্য সংকট। সেখানে আমাদের মাটি আছে মানুষ আছে ফসল ফলাতে হবে। নিজেদের খাবারের ব্যবস্থাটা অন্তত আমরা নিজেরা করব।

ছয় দফার প্রণয়ক বঙ্গবন্ধু নিজেই : শেখ হাসিনা বলেন, ছয় দফা নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেন। ছয় দফার প্রণয়ক বঙ্গবন্ধু নিজেই। তিনি তখন আলফা ইন্স্যুরেন্সে চাকরি করতেন। হানিফ সাহেব তখন বিএ পাস করেছেন। তাকে নিয়ে আসেন জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধু যখন বলতেন তখন হানিফ সাহেব ছয় দফা ড্রাফট করতেন। ছয় দফা সম্পর্কে জানলে শুধু জানতেন হানিফ। কারণ তিনিই এই ছয় দফা বাংলা ও ইংরেজিতে টাইপ করে দিয়েছিলেন। ঐতিহাসিক ছয় দফার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অঞ্চলে আসলে জনগণের অধিকার ছিল না। পাকিস্তান রাষ্ট্র হওয়ার পরে কোনো শাসনতন্ত্র, সংবিধান দিতে পারেনি। সব সময় বঞ্চনার শিকার হতে হতো। পূর্ব পাকিস্তানে জনসংখ্যা বেশি। পশ্চিম পাকিস্তানে ছিল আমাদের থেকে অনেক কম। তারপরও দেখা গেল রাজধানী নিয়ে যাওয়া হলো করাচিতে। সেই মরুভূমি করাচিতে ফুল ফোটানো হলো বাংলাদেশের অর্থ দিয়ে। শোষণ-বঞ্চনা এবং আমাদের ওপর বারবার যে আঘাত, তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ হাসিনা বলেন, ছয় দফা দাবি ছিল দেশের স্বাধীনতার জন্য জনগণকে পুরোপুরি প্রস্তুত করা এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের পক্ষে জনগণকে প্রস্তুত করা। প্রকৃতপক্ষে, এটি ছিল ‘ম্যাগনা কার্টা’ যার মাধ্যমে দেশের মানুষ নিজেদের স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেছিল। আর ১৯৭০ এর নির্বাচনও এই ছয় দফার ভিত্তিতেই হয়। সেখান থেকেই আমরা এক দফায় চলে এসে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। ছয় দফা কিন্তু মনু মিয়াদের রক্ত দিয়েই রক্তের অক্ষরে লিখে দেওয়া হয়। শেখ হাসিনা বলেন, এই ছয় দফা মূলত এক দফাই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য। যেটা জাতির পিতা ইশারায় দেখাতেন এক হাতের পাঞ্জা এবং আর এক হাতের তর্জনি প্রদর্শন করে। আবার তর্জনির ওপর জোর দিতেন অর্থাৎ আসলে এক দফা।

সর্বশেষ খবর