বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
জরুরি পরিস্থিতিতে ৯২ হাজার কোটি টাকা বাজেট সাপোর্ট

যুদ্ধ দ্রুত বন্ধ করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

যুদ্ধ দ্রুত বন্ধ করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটসহ জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৯২ হাজার কোটি টাকার (১ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বাজেট সাপোর্ট সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ ছাড়া কভিড-১৯ জনিত অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী অর্থবছরে (২০২২-২৩) ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৪৬ হাজার কোটি টাকা) বাজেট সাপোর্ট হিসেবে গ্রহণের কার্যক্রম চলছে।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল একাদশ জাতীয় সংসদের ১৮তম অধিবেশনের বৈঠকে প্রশ্নোত্তর পর্বে মোজাফফর হোসেনের (জামালপুর-৫) লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ হাজার মার্কিন ডলার বাজেট সাপোর্ট ব্যয়ের খাত উল্লেখ করে বলেন, এ বাজেট সাপোর্ট শিল্প কারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা প্রদান এবং সামাজিক সুরক্ষায় ব্যয় হবে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত বন্ধের আহ্বান : সরকারদলীয় এমপি আলী আজমের (ভোলা-৩) লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মহামারিতে নাজুক বিশ্ব অর্থনীতিকে গুরুতর চাপে ফেলেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য খাদ্য, জ্বালানি এবং সারের আকাশছোঁয়া দামের কারণে বিশ্বজুড়ে অস্থিতিশীলতা ও অস্থিরতার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। আমি এই যুদ্ধকে যত দ্রুত সম্ভব বন্ধ করার জন্য সবাইকে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। এ যুদ্ধ যত দ্রুত বন্ধ করা সম্ভব হবে বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা ও জ¦লানি সংকটের হুমকিকে কাটিয়ে ওঠা সম্ভবপর হবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, গত ২০ মে আমি জাতিসংঘ মহাসচিব এবং বিশ্বনেতাদের সঙ্গে এ সংক্রান্ত একটি উচ্চ-পর্যায়ের ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশগ্রহণ করি। ওই ভার্চুয়াল বৈঠকে তিনটি প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব উপস্থিত বিশ্বনেতাদের সামনে খোলামেলা আলোচনা করেন। বিষয়গুলো হলো- অর্থ সংকট, খাদ্য নিরাপত্তা এবং বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা ও জ্বালানি সংকটের হুমকিকে কাটিয়ে ওঠা সম্ভবপর হবে। এ বিষয়টির ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে বিশ্বনেতৃবৃন্দকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করি। তাছাড়া আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে জ্বালানি সংকট এবং আর্থিক সমস্যা সমাধানের জন্য যাতে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়, সে ব্যাপারেও আমি আশাবাদ ব্যক্ত করি।

সাড়ে ৩৫ লাখের বেশি গৃহহীন পুনর্বাসিত হয়েছে : শহীদুজ্জামান সরকারের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত সারা দেশের ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ৩৪০ জন গৃহহীন পুনর্বাসিত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে গৃহ নির্মাণের মাধ্যমে দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। সারা দেশে গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। পুনর্বাসিত পরিবার ও তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মানব সম্পদে রূপান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সামগ্রিকভাবে আরও সমৃদ্ধ করা হচ্ছে। এ সময় তিনি জানান, কোথাও উপযুক্ত খাস জমি পাওয়া না গেলে জমি কিনে হলেও ভূমিহীন-গৃহহীন-ছিন্নমূল মানুষকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ধান সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় : সরকারি দলের এ কে এম রহমত উল্লাহর লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে দেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে উৎপাদন বেড়ে ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ধান ও সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়, আম ও আলু উৎপাদনে সপ্তম, চা উৎপাদনে চতুর্থ স্থানের পাশাপাশি ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে।

দেশের ৪৩টি জেলা রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় : আওয়ামী লীগের মমতাজ বেগমের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশের ৪৩টি জেলা রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় রয়েছে। রেলওয়ের যেসব প্রকল্প চলমান তা বাস্তবায়িত হলে আরও ১৯টি জেলা রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। আর ৩০ বছরব্যাপী মাস্টার প্ল্যান সম্পন্ন হলে বাকি চারটি জেলাও রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা উজ্জ্বল করেছে পদ্মা সেতু : সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মা সেতু আমাদের আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করেছে। টেকনোলজি সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষের জ্ঞান হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও উন্নত কাজ করতে পারব।   পৃথিবীতে এই স্ট্রাকচারের কোনো সেতু নির্মিত হয়নি। বাংলাদেশ যে নিজেরা পারে, এই ধারণাটাই বাংলাদেশের মর্যাদা সারা বিশ্বে উজ্জ্বল করেছে। জাতির পিতা বলেছিলেন,   কেউ আমাদের দাবায়া রাখতে পারবে না। তো কেউ আমাদের দাবায়া রাখতে পারে নাই, পারবেও না, ইনশা আল্লাহ। এই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল একাদশ জাতীয় সংসদের ১৮তম অধিবেশনের বৈঠকে জাতিকে পদ্মা সেতু উপহার দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে ১৪৭ বিধিতে সাধারণ আলোচনার প্রস্তাবটি আনেন চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী। পরে রাত ১১টা ৪০ মিনিটে স্পিকার প্রস্তাবটি ভোটে দিলে তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

 

সর্বশেষ খবর