শনিবার, ১১ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

অতিরিক্ত ব্যাংক ঋণে বিনিয়োগ কমবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

অতিরিক্ত ব্যাংক ঋণে বিনিয়োগ কমবে

ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, বাজেটে ঘাটতি অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো হয়েছে। সরকার ব্যাংক থেকে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে। সরকার এত বেশি টাকা ব্যাংক থেকে নিলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। ফলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে যাবে। এতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে না।

প্রস্তাবিত বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে মির্জ্জা আজিজ বলেন, বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এটা তেমন কোনো সমস্যা না। কিন্তু ঘাটতি মেটাতে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা বাস্তবসম্মত নয়। বাজেটে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর যে লক্ষ্যমাত্রার কথা বলা হয়েছে, তা পূরণ হবে না। জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এটি উচ্চাভিলাষী। সামগ্রিকভাবে বাজেটের আকার মোটেই বড় নয়। জিডিপির আনুপাতিক হারে বাজেট ১৫ শতাংশ। এটি পৃথিবীর অন্যতম সর্বনিম্ন। কিন্তু আকার ছোট হলেও বাস্তবায়ন বড় সমস্যা। তিনি বলেন, এ বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাড়লেও ১০ মাসে বাস্তবায়ন ৫০ শতাংশের কিছুটা বেশি। এ অবস্থায় এডিপির আকার বাড়ানো হয়েছে। ফলে এটি কতটুকু বাস্তবায়ন হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। রাজস্ব আহরণে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কয়েক বছরে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে দারিদ্র্য পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দারিদ্র্য পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কয়েক বছর আগে ১ দশমিক ৮ শতাংশ হারে দারিদ্র্য কমে আসছিল। বর্তমানে তা ১ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে করোনার কারণে দারিদ্র্যসীমার নিচের সংখ্যা আরও বেড়েছে। এ কারণে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো জরুরি। কিন্তু বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ সেভাবে বাড়েনি। তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংক বলেছে, প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। এটিও অবাস্তব। গত এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। ফলে মূল্যস্ফীতি কমার লক্ষণ দেখছি না। মির্জ্জা আজিজ বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন আছে বহু বছর ধরে। সেটা বৃদ্ধি না করে কোনো বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কিন্তু প্রত্যেক বছর দেখা যায়, আয়-ব্যয়ের যে লক্ষ্য থাকে সংশোধিত বাজেটে তার চেয়ে কমানো হয়। বাস্তবায়ন হয় তার চেয়ে আরও কম। বর্তমানে যে পরিমাণ টিআইএন রয়েছে, কর দেয় তার চেয়ে অনেক কম। এক্ষেত্রে টিআইএনধারীদের কর নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে ভ্যাটের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। দোকানদাররা ভ্যাট দিতে চান না। অনেক প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নেই। ক্রেতারাও রসিদ নিতে আগ্রহী নন। এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ে অনেক ব্যবসায়ী রয়েছেন। ইতোমধ্যে এরা করের আওতায় এসেছেন। তাদের কর নিশ্চিত করতে হবে। করের হার না বাড়িয়ে আওতা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, এডিপিতে প্রতি বছর বহু প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পগুলোতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তা খুবই কম। বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রতি বছর খরচ বাড়াতে হয়। এতে ব্যয়ও বেড়ে যায়। তাই বাস্তবায়ন আর বাস্তবসম্মত থাকে না। কঠিন হয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। দুই খাতে জিডিপির অনুপাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা আমাদের আশপাশের যে কোনো দেশের চেয়ে কম। খরচের দিক থেকেও সমস্যা রয়েছে। কারণ প্রতি বছরই এ খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা অব্যবহৃত থাকে। ফলে এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে হবে। মির্জ্জা আজিজ বলেন, পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, নীতিগতভাবে আমি এর সঙ্গে একমত নই। টাকা পাচার করে আবার তার কর রেয়াতি সুবিধা পাচ্ছে, এটি যৌক্তিক নয়।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর