সোমবার, ১৩ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

বড় উদ্বেগ ৯ পণ্য আমদানিতে

অতিরিক্ত ব্যয় ৮.২ বিলিয়ন ডলার

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

দেশে আমদানিকৃত নয়টি অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার দর নিয়ে সরকারের মধ্যে বড় ধরনের উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী এ পণ্যগুলো আমদানিতে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে অতিরিক্ত প্রায় ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ মুদ্রা ব্যয় হবে। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৭৬ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। অত্যাবশ্যকীয় এ পণ্যগুলো হচ্ছে- জ্বালানি তেল, গ্যাস (এলএনজি), সার, কয়লা, সয়াবিন তেল, পাম তেল, চাল, গম ও ভুট্টা। পণ্যগুলো আমদানিতে রাষ্ট্রের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সরকারের উদ্বেগের বিষয়টি অর্থ বিভাগ থেকে প্রকাশিত মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আমদানিকৃত অত্যাবশ্যকীয় পণ্যসামগ্রী যেমন- তেল, গ্যাস, সার, ভোজ্য তেল প্রভৃতির মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থ বিভাগের হিসাবমতে, ২০২১ সালের তুলনায় এসব পণ্য আমদানিতে ২০২২ সালে অতিরিক্ত ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে। এ ছাড়া ভোগ্যপণ্য, মূলধনি যন্ত্রপাতি, শিল্পে কাঁচামালের মতো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আমদানি সামগ্রীর  মূল্যও আন্তর্জাতিক বাজারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। উপরন্তু পরিবহন ও আনুষঙ্গিক খরচও বাড়ছে। তাই আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে সরকারের জন্য একটি বড় উদ্বেগ হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত অর্থনীতিতে কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। এর ফলে জ্বালানি, খাদ্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বাংলাদেশসহ বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। করোনা মহামারি-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি একটি নতুন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আলোচ্য পণ্যগুলো দেশের শিল্পোৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ কারণে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিয়ে এসব পণ্য আমদানি অব্যাহত রেখেছে সরকার। বেশ কিছু পণ্যের দাম কমাতে বাজেট থেকে শুল্ককরও প্রত্যাহার করা হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি হলে এসব পণ্যের মূল্য পরিস্থিতি কী হবে তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। ভর্তুকি অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকলে তা রাষ্ট্রের আর্থিক কাঠামোকেও দুর্বল করে দেবে। তখন বাধ্য হয়েই জ্বালানি, সারের মতো পণ্যগুলোর দাম বাড়াতে হবে। অর্থমন্ত্রীর বাজেট ঘোষণায় এ বিষয়ে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে বলেও জানান কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদে সদ্যনিয়োগপ্রাপ্ত অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনেও এসব পণ্য আমদানিতে সরকারের উদ্বেগের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি জানান, ৫৩ হাজার কোটি থেকে আগামী অর্থবছরের ভর্তুকি বেড়ে ৮২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। জ্বালানি, গ্যাস, সয়াবিন তেল, ইউরিয়া এসব পণ্যে এত বেশি ভর্তুকি দিতে হচ্ছে যা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে, যদি এ পণ্যগুলোর দাম আরও বাড়ে তবে বাজেট-শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হবে।

সর্বশেষ খবর