সোমবার, ১৩ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

উন্নত বিশ্ব ও এলডিসির প্রতি ডব্লিউটিওর ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক

মানিক মুনতাসির, জেনেভা থেকে

আগামী ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে চূড়ান্তভাবে উত্তরণের পর আরও অন্তত ৬-১২ বছর পর্যন্ত এলডিসি সুবিধা পেতে চায় বাংলাদেশ। কেননা কভিড-১৯ এর কারণে বিশ্ব অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে তার প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও ব্যাপকভাবে পড়েছে।  এ ছাড়া চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতিকে চরম এক সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এতে অর্থনীতিতে নানমুখী অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ফলে এলডিসি বাণিজ্য সুবিধা ২০২৬ সালের পর ১২, ৯ কিংবা কমপক্ষে আরও ছয় বছর বহাল রাখার  দাবি করেছে বাংলাদেশ। গতকাল সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সদর দফতরে এলডিসিভুক্ত ৪৬টি দেশের ১২তম মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এতে অংশ নিচ্ছে। এই দলে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ এবং ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক হাফিজুর রহমানসহ ঊর্র্ধ্বতন কর্মকর্তারা রয়েছেন। গতকাল সম্মেলনের শুরুতে এ দাবি তুলে ধরেন বাণিজ্যমন্ত্রী। পরে সে সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বাণিজ্য সচিব। সম্মেলন চলবে ১৫ জুন পর্যন্ত। কভিড-১৯ অচলাবস্থার কারণে দীর্ঘ বিরতির পর ডব্লিউটিও মিনিস্ট্রিয়াল সম্মলেন হচ্ছে। ফলে এবারের সম্মেলনে বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে বাংলাদেশের জন্য এ সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সম্মেলনের প্রথম দিনের বিভিন্ন সেশনে উন্নত বিশ্ব ও এলডিসিভুক্ত দেশের প্রতি ডব্লিউটিওর ভূমিকা নিয়ে নানা বিতর্ক হয়েছে। কেননা ডব্লিউটিও সব সময় উন্নত বিশ্বের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে আসছে। অন্যদিকে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর বাণিজ্যবিষয়ক স্বার্থকে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীরা এ সংক্রান্ত মতামত তুলে ধরেন। এদিকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশ যে আরও ৬-১২ বছর এলডিসির বাণিজ্য সুবিধা বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে তার বিরোধিতা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অবশ্য বাংলাদেশের এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বিশ্ব বাজারে খাদ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কোনো প্রকার অযাচিত হস্তক্ষেপ এলে খাদ্যমূল্য বেড়ে যায়। এ ছাড়া খাদ্যের অবাধ চলাচলে বাধা এলে বৈশ্বিক খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে বলে মতামত তুলে ধরেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এ ছাড়া বৈশ্বিকভাবে অবাধ মৎস্য শিকার পদ্ধতি দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও মৎস্যজীবীদের জন্য হুমকি হিসেবে কাজ করে। এতে এই শ্রেণির মানুষের খাদ্য সংকটও তৈরি হতে পারে। এ জন্য অবাধ মৎস্য শিকারে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ভর্তুকি প্রদান বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সের উচ্চতর ফোরাম সভায়।

এদিকে ডব্লিউটিওর গতকালের ব্রিফিংয়ে বলা হয়, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্যানুযায়ী, অত্যধিক শোষণের কারণে বিশ্বের অনেক অংশে মাছের মজুদ ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এটি অনুমান করা হয় যে ১৯৭৪ সালে ১০ শতাংশের তুলনায় বৈশ্বিক মজুদের ৩৪ শতাংশ  অতিরিক্ত মাছ ধরা হয়েছে, যার অর্থ তারা এমন গতিতে শোষিত হচ্ছে যেখানে মাছের জনসংখ্যা নিজেকে পুনরায় পূরণ করতে পারে না। মৎস্য মজুদের ক্রম হ্রাসমান দারিদ্র্যকে আরও খারাপ করার হুমকি দেয় এবং তাদের জীবিকা ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল সম্প্রদায়গুলোকে বিপদের দিকে ঠেলে দেয়।

এ সংক্রান্ত প্রতিটি সমস্যা সমাধান করা হয়নি : প্রকৃতপক্ষে, এ সংক্রান্ত একটি খসড়া চুক্তি ছিল এবং এই খসড়াটিতে এমন কিছু বিষয় রয়েছে যা সদস্যরা এখনো সম্মত হননি। এ নিয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।

উল্লেখ্য, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করার সময়সীমা ছিল ২০২২ সাল। বাংলাদেশের অনুরোধে তা ২০২৬ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ ধারায় উন্নীত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রাপ্ত বাণিজ্য সুবিধাসমূহ থেকে বঞ্চিত হতে হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণ হয়েছে এমন দেশগুলোকে ডব্লিউটিও সুযোগ-সুবিধা বাড়াবে না। কিন্তু এলডিসি থেকে উত্তরণের দ্বারপ্রান্তে থাকা দেশগুলোকে শুল্ক সুবিধার সময় বাড়ানোর ব্যাপারে সংস্থাটি ইতিবাচক রয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। এ ছাড়াও সংস্থাটির প্রভাবশালী সদস্যরা ইতোমধ্যে নিম্নআয়ের দেশগুলোর এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও সেসব দেশকে বিশেষ কোনো বাণিজ্য সুবিধা দেওয়া যায় কিনা সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে। কেননা গত প্রায় তিন বছর ধরে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মন্দায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্বল্পোন্নত দেশগুলো। এ কারণে শুল্ক সুবিধার সময় বাড়ানোর দাবি আরও জোরালোভাবে উঠে এসেছে এ সম্মেলনে।

সর্বশেষ খবর