শিরোনাম
বুধবার, ১৫ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

হজ এজেন্সির অসহযোগিতায় ফ্লাইট সংকটের শঙ্কা

দুই এজেন্সিকে সতর্ক করে নোটিস ধর্ম মন্ত্রণালয়ের

উবায়দুল্লাহ বাদল

হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে হজ ফ্লাইটের টিকিট বুকিংয়ে দেরি করা, ফ্লাইটের নির্ধারিত আসন পূর্ণ করতে অসহযোগিতা এবং ফ্লাইটের সময়সূচি না মানার অভিযোগ উঠেছে। এসব কারণে এজেন্সিগুলোর অসহযোগিতায় শেষ মুহূর্তে হজ ফ্লাইট নিয়ে সংকটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে এজেন্সিগুলোকে সতর্ক করে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। কয়েকটি এজেন্সিকে দেওয়া হয়েছে কারণ দর্শানোর নোটিস। সর্বশেষ এজেন্সিগুলোর অসহযোগিতার বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জানিয়েছে ঢাকার সৌদি দূতাবাস। তবে অভিযোগ নাকচ করেছে এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। তাদের মতে, সৌদি আরবগামী ফ্লাইটগুলোর কোন তারিখে কতটি আসন খালি রয়েছে তা প্রকাশ করছে না মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র একটি এয়ারলাইনসের তথ্য পাওয়া গেছে। এ প্রেক্ষাপটে সোমবার হজযাত্রীদের বিমানে আসন বরাদ্দসংক্রান্ত তথ্য চেয়ে হজ এজেন্সির মালিক ও হাব সভাপতি/মহাসচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

ওই চিঠিতে বলা হয়- চলতি বছর হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী ৩৫৯টি এজেন্সি এবং হাবের সভাপতি ও মহাসচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানানো যাচ্ছে যে ঢাকার রাজকীয় সৌদি দূতাবাস এক জরুরি পত্রে জানিয়েছে, বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো হজযাত্রীদের টিকিট রিজারভেশনে বিলম্ব করছে এবং এরই মধ্যে বুকিংকৃত হজ ফ্লাইটের যাত্রী প্রেরণে ফ্লাইটের সময়সূচি মানছে না। এতে সার্বিক হজ ব্যবস্থাপনায় ও মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভের কার্যক্রম বাস্তবায়নে কৃত্রিম সমস্যার সৃষ্টি করছে। তাদের এ ধরনের অবহেলার কারণে হজ ফ্লাইট বাতিল হলে সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা ব্যাহত হবে। রাজকীয় সৌদি দূতাবাস এ বিষয়ে বেসরকারি হজ ব্যবস্থাপনায় হজ এসেন্সিগুলোকে হজ ফ্লাইটের পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি কঠোরভাবে অনুসরণ এবং প্রতিটি হজ ফ্লাইটের সব আসন পূর্ণ করার অনুরোধ জানিয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়- ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছেও বিষয়টি প্রথম থেকেই অনুমিত হচ্ছিল। সে কারণে প্রতিটি হজ এজেন্সিকে এ বিষয়ে একাধিকবার পত্র দিয়ে আসন রিজারভেশনসহ প্রতি ফ্লাইটের আসন সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু এজেন্সিগুলোর এ বিষয়ে সহযোগিতার অভাব লক্ষণীয় পর্যায়েই রয়ে গেছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় যে বিষয়টির আশঙ্কা করছিল রাজকীয় সৌদি দূতাবাসের পত্রে যা আরও স্পষ্ট হয়েছে তা হলো- আসন খালি নিয়ে ফ্লাইট উড্ডয়ন করলে এবং নির্ধারিত ফ্লাইট যাত্রীর অভাবে বাতিল হলে শেষের দিকে এসে অনেক যাত্রী ফ্লাইট সংকটের কারণে সৌদি আরব গমন করতে পারবেন না। তখন তারা শোডাউনের চেষ্টা করবেন যাতে চলমান সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায় এবং সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য আগামী তিন দিনের মধ্যে এ বছর হজ কার্যক্রমে অংশ নেওয়া প্রতিটি হজ এসেন্সিকে তাদের হাজিদের (যারা এখনো সৌদি আরব যাননি) বিপরীতে নির্ধারিত এয়ারলাইনসের আসন রিজার্ভ করে সে তথ্য ছক অনুযায়ী দিতে বলা হয় চিঠিতে।

তবে মন্ত্রণালয়ের এমন অভিযোগ মানতে নারাজ হাবের নেতারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন হাব নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা ৮ জুন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে হজযাত্রী পরিবহনের এয়ারলাইনসগুলোর আসন বুকিং নিশ্চিতের বিষয়ে তথ্য চেয়েছি। আজ পর্যন্ত মাত্র একটি এয়ারলাইনসের তথ্য আমরা পেয়েছি। যে কারণে এজেন্সি মালিকরাও বুঝতে পারছেন না। আসন বুকিংয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনসের অফিসে যাওয়া হলে বলে দেওয়া হয়েছে আপনারা পরে আসেন। এখানে এজেন্সিগুলোর দোষ কোথায়?’

৮ জুন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হাবের চিঠিতে বলা হয়- হজযাত্রী পরিবহনে নিয়োজিত এয়ারলাইনসগুলোর আসন যাতে খালি না থাকে সে বিষয়ে হাব সর্বদা তৎপর। হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী এয়ারলাইনসগুলোর এখন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত সৌদিগামী সর্বশেষ ফ্লাইট পর্যন্ত কোন তারিখে কোন ফ্লাইটে কতগুলো আসন খালি আছে, তা জানা থাকলে হাব এজেন্সিদের বুকিং নিশ্চিতের জন্য তাগিদ দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করতে পারে। এ ছাড়া যেসব এজেন্সি ইতোমধ্যে হজ টিকিট বুকিং নিশ্চিত করেছে তাদের বিষয়ে পরে ফলোআপ করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে এয়ারলাইনসগুলোর বুকিং নিশ্চিতকারী হজ টিকিট কোন তারিখের কোন ফ্লাইটে কোন এজেন্সিকে কী পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা জানা আবশ্যক। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে হজযাত্রী পরিবহনের এযারলাইনসগুলোকে জানানোর জন্য অনুরোধ করছি।

এজেন্সিকে নোটিস : কোনো এজেন্সির অবহেলা বা গাফিলতির কারণে কোনো হজযাত্রী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হজে যেতে ব্যর্থ হলে ওই হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে ‘হজ ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২১’-এর বিধান অনুসারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি মোহাম্মদপুর হজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের (হজ লাইসেন্স নম্বর ১৪২২) মালিক মোহাম্মদ নাসিম খান ও সাউথ এশিয়ান এয়ার বাংলাদেশের (হজ লাইসেন্স নম্বর ১২২১) মালিক আবি আবদুল্লাহকে সৌদি এয়ারলাইনসের বুকিং করা টিকিট বাতিল করায় কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। নোটিসে বলা হয়- তারা সৌদি এয়ারলাইনসের বুকিংকৃত ১৩২ ও ৫৭টি টিকিট বাতিল করেছেন, যা হজ ব্যবস্থাপনার সম্পূর্ণ অন্তরায় ও হজ ব্যবস্থানায় বিঘ্ন সৃষ্টির শামিল। তাদের বিরুদ্ধে কেন হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন লঙ্ঘনের দায়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে নোটিসে।

সর্বশেষ খবর