শুক্রবার, ১৭ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকার পাহাড়

মোট আমানত ৮ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা, গত ১২ মাসে জমা ২ হাজার ৯২৮ কোটি

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকার পাহাড়

নানান আইনি কাঠামো ও আদালতের নির্দেশনার পরও সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশিদের টাকা জমানো কমছেই না। বরং টাকা জমানোর পরিমাণ আগের রেকর্ড ভেঙেছে। শুধু গত ১২ মাসে এ দেশটির ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশিরা জমা করেছেন ২ হাজার ৯২৮ কোটির টাকার বেশি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশিদের মোট জমার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। এ অর্থ আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ।

গতকাল প্রকাশিত সুইজারল্যান্ডের ন্যাশনাল ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনের ডাটা অংশে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এখানে বিশে^র বিভিন্ন জাতীয়তার ব্যক্তিদের সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে মোট জমার পরিমাণ উল্লেখ করা আছে। তবে বরাবরের মতোই টাকা জমা করা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করেনি সুইস ব্যাংকগুলো। সেই সঙ্গে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি নিজের জাতীয়তার পরিবর্তন ঘটিয়ে অর্থ আমানত করে সে হিসাবও নেই এ ৮ হাজার ২৭৫ কোটি টাকার মধ্যে। পাশাপাশি কেউ যদি সোনা, হীরা বা মূল্যবান কোনো সম্পদ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোয় রাখেন সে অর্থও নেই এ হিসাবে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়- ২০২১ সালের ডিসেম্বর সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশিদের আমানত দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৮ হাজার ২৭৫ কোটি। এক বছর আগে যা ছিল ৫৬ কোটি ২৯ লাখ ফ্রাঁ বা ৫ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরেই সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত বেড়েছে ২ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত যে হিসাব পাওয়া যায় তাতে ২০২১ সালেই বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বেশি আমানত ছিল সুইস ব্যাংকে। ২০০২ সালের মাত্র ৩ কোটি ১০ লাখ ফ্রাঁ আমানত দুই দশকে বেড়েছে প্রায় ৩০ গুণ। বৃদ্ধির হারও সবচেয়ে বেশি ছিল ২০২১ সালে।

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী দেশটির ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অর্থের পরিমাণ প্রথমবার ১০ কোটি সুইস ফ্রাঁ ছাড়িয়ে যায় ২০০৬ সালে। ৯ কোটি ৭২ লাখ সুইস ফ্রাঁ থেকে বেড়ে ওই বছর জমার পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ কোটি ৪৩ লাখ সুইস ফ্রাঁ। ২০০৭ সালে জমা অর্থের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ২০ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঁ হয়। ২০১১ সালে জমার পরিমাণ ছিল ১৫ কোটি ২৩ লাখ সুইস ফ্রাঁ, তা ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ২০১৬ সালে দাঁড়ায় ৬৬ কোটি ১৯ লাখে। তবে ২০১৭ সালে তা কমে ৪৮ কোটি ১৩ লাখ সুইস ফ্রাঁয় নেমে এলেও ২০১৮ সালে তা বেড়ে ৫১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁয় দাঁড়ায়।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশের নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন অন্তত ৫০০ কোটি টাকা হতে হয়। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের যে টাকা এখন জমা আছে তা অন্তত ১৬টি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের সমান। প্রতিবেদন অনুসারে গত বছর মোট আমানত বেড়েছে সুইজারল্যান্ডে। ২০২১ সালের শেষে দেশটির ব্যাংকগুলোয় মোট আমানত ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি ফ্রাঁ। আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে ৪ হাজার কোটি।

জানা যায়, সারা বিশ্ব থেকেই অসংখ্য মানুষ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোয় বৈধ-অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ জমা রাখে। সুইস ব্যাংকে টাকাপয়সা রাখতে সারা দুনিয়ার মানুষ সবচেয়ে বেশি আগ্রহ বোধ করে তাদের গোপনীয়তা নীতির কারণে। সুইজারল্যান্ডের একটি আইন দ্বারা এ গোপনীয়তা স্বীকৃত, যার ফলে ব্যাংকগুলো কোনো অবস্থাতেই তাদের গ্রাহকদের তথ্য প্রকাশ করতে কারও কাছে বাধ্য থাকে না। ফলে কে কেন বা কীভাবে উপার্জিত অর্থ ব্যাংকে রাখছে, সেই গ্রাহকদের সম্পর্কে ব্যাংকগুলো কাউকে কোনো তথ্য দেয় না। এ আইন বদল করতে হলে সেটা গণভোট অথবা পার্লামেন্টে পাল্টাতে হবে। তবে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদ অনুযায়ী সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংক কয়েক বছর যাবৎ সে দেশে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের জমাকৃত অর্থের পরিমাণ প্রকাশ করছে। সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংক কেবল কোন দেশের নাগরিকরা সে দেশের ব্যাংকে কী পরিমাণ অর্থ রেখেছে সে তথ্যটিই প্রকাশ করেছে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, একসময় সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো এ রকম অর্থের ব্যাংকিংয়ের জন্য জনপ্রিয় থাকলেও এখন কেইম্যান আইল্যান্ড, পানামা, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড ও বাহামার ব্যাংকিংব্যবস্থাও ধনীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের শহর দুবাই এখন হয়ে উঠেছে অপ্রকাশিত অর্থের নতুন আধার।

 

সর্বশেষ খবর