শুক্রবার, ১৭ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

সংবিধানে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে শতাধিক ভুল-অমিল

উচ্চপর্যায়ের কমিটির প্রতিবেদন হাই কোর্টে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংবিধানের পঞ্চম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মোট ১০৯টি ‘অসম্পূর্ণতা’-‘অমিল’ চিহ্নিত করেছে আদালতের নির্দেশে গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটি। হাই কোর্টের নির্দেশে তথ্য মন্ত্রণালয় এই কমিটি গঠন করে। গতকাল এ কমিটির দেওয়া প্রতিবেদন বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ রেজাউল হক। রিটকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুল আলিম মিয়া জুয়েল ও সুবীর নন্দী দাস। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি নিশ্চিত করতে গিয়ে মূল ভাষণের সঙ্গে সংবিধানে মুদ্রিত ভাষণের বৈসাদৃশ্য পাওয়ার কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। এই কমিটি যাচাই-বাছাই, পর্যালোচনা, ভুল-বিভ্রান্তি-অসম্পূর্ণতা চিহ্নিত করে ২০২০ সালের ৩১ অক্টোবর তথ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠায়। পরে প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করার জন্য ৩১ মার্চ অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পাঠানো হয়, যা গতকাল আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এ বিষয়ে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ রেজাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা প্রতিবেদনটি দাখিল করেছি। সুপ্রিম কোর্টের আগামী অবকাশকালীন ছুটির পর (১ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই) রিটকারী পক্ষকে ম্যানশন করতে বলেছেন আদালত।’ ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট পাঠ্যপুস্তকের ভুলভ্রান্তি নিয়ে একটি দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। ওই প্রতিবেদন পড়ার পর রাজবাড়ীর কাশেদ আলী অষ্টম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইয়ে ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ গদ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণে ৫০টির বেশি ‘ভুল’ খুঁজে পান। এরপর ভুলগুলো সংশোধনের জন্য ওই বছর ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিবের দফতরে তিনি আবেদন করেন। এতে সাড়া না পেয়ে ২০২০ সালের ৫ মার্চ হাই কোর্টে এই রিট করেন কাশেদ আলী। স্বাধীনতার প্রাক্কালে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ওই ভাষণ সংবিধান ও পাঠ্যপুস্তকে ‘ভুলভাবে অন্তর্ভুক্ত করার’ বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয় রিট আবেদনে। পরে ওই রিটের প্রাথমিক শুনানির পর ২০২০ সালের ১০ মার্চ আদালত রুলসহ আদেশ দেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ সংবিধানের পঞ্চম তফসিলে ‘অসম্পূর্ণ’ ও ‘ভুলভাবে’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি করতে নির্দেশ দেওয়া হয় ওই আদেশে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তখনকার রেসকোর্স (এখনকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সেই ভাষণের সময় সমাবেশে উপস্থিত থেকে যারা ভাষণটি সরাসরি শুনেছেন, তাদের কাউকে রেখে কমিটি গঠন করতে বলা হয়। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ টেলিভিশনের তৎকালীন মহাপরিচালক এস এম হারুন-অর-রশীদকে সভাপতি ও প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদকে সদস্য সচিব করে ‘৭ মার্চের ভাষণ নিশ্চিতকরণ কমিটি’ নামে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় তথ্য মন্ত্রণালয়। এতে সদস্য হিসেবে রাখা হয় বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খান (মৃত), ইতিহাসবিদ-লেখক মুনতাসীর উদ্দিন খান মামুন, বাংলাদেশ বেতারের সাবেক উপ-পরিচালক আশফাকুর রহমান খান, বাংলাদেশ বেতারের তৎকালীন মহাপরিচালক হোসনে আরা তালুকদার এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরের মহাপরিচালক স ম গোলাম কিবরিয়াকে।

 

 

সর্বশেষ খবর