রবিবার, ১৯ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
জাতীয় সেমিনারে বক্তারা

দুর্নীতি নয়, ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতু থেকে বিশ্বব্যাংক সরে যায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতি নয়, ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতু থেকে বিশ্বব্যাংক সরে যায়

রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গতকাল সেমিনারে বক্তারা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতু থেকে বিশ্বব্যাংক সরে যায়নি। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতু থেকে বিশ্বব্যাংক সরে দাঁড়িয়েছিল। এতে আমরা বঞ্চিত হইনি বরং নিজেদের সক্ষমতার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।  গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে পদ্মা সেতু নিয়ে এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘শেখ হাসিনার পদ্মা সেতু নির্মাণ-বিশ্ব ব্যবস্থায় বাংলাদেশ তথা উন্নয়নশীল দেশসমূহের এক যুগান্তকারী বিজয়’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটি।  প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ। শবনম আজিমের পরিচালনায় সেমিনারে বক্তব্য রাখেন, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. সামসুল আলম, অর্থনীতিবিদ ড. এম কাজী খলিকুজ্জামান, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ড. গোলাম রহমান, সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য পানিসম্পদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত। সভায় বক্তারা আরও বলেন, পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য সাহসের প্রতীক। তিনি তার সত্তা দিয়ে এটা বিবেচনা করেছেন এবং সেতু নির্মাণ করে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। পদ্মা সেতুর নির্মাণের আত্মবিশ্বাস থেকে বাংলাদেশ আগামীতে বড় প্রকল্প গ্রহণ করলে লাভবান হবে। তারা বলেন, নিজস্ব-অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু কেবল একটি সেতু নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে লক্ষ-কোটি মানুষের ভালোবাসা, আবেগ, গৌরব। বাঙালি জাতি যে কোনো প্রতিকূল পরিবেশে ঘুরে দাঁড়াতে পারে তার প্রমাণ পদ্মা সেতু। এই সেতু বাঙালির আর্থিক সামর্থ্যরে পরিচয় বহন করে। এটা শতবর্ষে আমাদের সাহসিকতার প্রতীক হয়ে থাকবে। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, পদ্মা সেতু বিজয়, উন্নয়ন, ঘুরে দাঁড়ানো ও হার না মানার প্রতীক। আঞ্চলিক বাণিজ্য, দক্ষিণ এশিয়ায় সংযোগ, শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠা, কৃষি সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে এ সেতু। পদ্মা সেতু বাঙালির আত্মমর্যাদা এবং আত্মনির্ভরতার এক অনন্য সোপান উল্লেখ করে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ও বহু কাক্সিক্ষত পদ্মা সেতু আজ আর স্বপ্ন নয়। খরস্রোতা পদ্মার বুকে ৬ দশমিক ১৫ দৈর্ঘ্য নির্মিত সেতু আজ বাস্তবতা। এটা আমাদের অহংকার। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র ও বিশ্বব্যাংকের ভিত্তিহীন অভিযোগ উপেক্ষা করে, বাধা-বিপত্তি জয় করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা সেতু নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তা ও সাধারণ মানুষের সহযোগিতার কথা তুলে ধরে স্পিকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেও দেশের মানুষের সহযোগিতার কথা বলেন। আর তিনি মানুষের শক্তিতে বিশ্বাস করেন। সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, পদ্মা সেতুর প্রথম যখন আলোচনা শুরু হয়, তখন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী। আমরা বিশ্বব্যাংক, এডিবি, তাদের প্রথমে অনুরোধ করি। আমি তখন ইআরডি সচিবের দায়িত্বে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী। তারা প্রথমেই বলল এ কাজে তারা অংশগ্রহণ করতে পারবে না। পরে এ বিষয়ে জাপান সরকারের সহযোগিতা কামনা, বিশ্বব্যাংকের অর্থ থেকে সরে যাওয়া ও নানা অভিযোগ এবং ওই সময়ে সরকারের অবস্থান এবং নিজেদের অর্থায়নে সেতু তৈরির নানা ঘটনা তুলে ধরেন তিনি।

ড. মসিউর রহমান আরও বলেন, আমি বলব, আমরা বঞ্চিত হইনি। আমাদের একটি লাভ হয়েছে। সেটি হলো, এ ধরনের সেতু করার সক্ষমতা সম্পর্কে আমাদের যে আত্মবিশ্বাস এবং সরকার, রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক সেটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই প্রতীকী অর্জন যেটা সেটা টাকা পয়সার চেয়ে অনেক বেশি।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. সামসুল আলম বলেন, পদ্মা সেতুর অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য সাহসের প্রতীক। এটা শতবর্ষে সাহসিকতার প্রতীক হয়ে থাকবে। পদ্মা সেতু বাঙালি জাতিকে প্রথম তার আর্থিক সামর্থ্যরে পরিচয় বহন করে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরে যায়। কানাডার আদালতে প্রমাণ হয়, কোনো ধরনের দুর্নীতি হয়নি। আসলে বিশ্বব্যাংক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কারণে সরে যায়। তিনি বলেন, পাকি বাঙালিরা যারা জিন্দাবাদ স্লোগানে বিশ্বাসী তারা যখনই ক্ষমতায় এসেছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন এবং ক্ষমতার বাইরে থাকাকালীন এরা এ পর্যন্ত ১৪ বার তাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। আল্লাহর দয়ায় এবং দেশের মানুষের সতর্কতায় তিনি বেঁচে গেছেন। বুলেট তাকে এখনো তাড়া করে ফেরে। অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক সত্তা দিয়ে এটা বিবেচনা করেছেন এবং সেতু নির্মাণ করে তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি তার প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা দিয়ে দেশের অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করার মধ্য দিয়ে আমাদের অগ্রগতি সুদৃঢ় ও ত্বরান্বিত করেছেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী না থাকলে নিজস্ব অর্থায়নের পদ্মা সেতু হতো না। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দেশে মানুষের কর্মসংস্থান হবে। দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে।

সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ড. গোলাম রহমান বলেন, পদ্মা সেতু আন্তর্জাতিক ও বিশ্ব্যব্যাংকের কূটনীতিক চালে পড়েছিল। দুর্নীতির নামে বাংলাদেশকে যেভাবে অপমান অপদস্থ করার অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছিল, সেই অবস্থা থেকে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এই সেতু করেছেন। সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য পানিসম্পদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পদ্মা সেতুর কোয়ালিটির বিষয়ে কোনো ধরনের কমপ্রোমাইজ করা হয়নি। আমি পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের সঙ্গে শুরু থেকেই ছিলাম, আমি বিষয়টা জানি। এ সময় ড. আইনুন নিশাত পদ্মা সেতুর নির্মাণের প্রযুক্তিগত দিক, নদীর গতি-প্রকৃতির কোন দিক বিবেচনা করা হয়েছে তা তুলে ধরেন। একসঙ্গে সেতু কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে তাও বিস্তারিত জানান এই পানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ।

সর্বশেষ খবর