রবিবার, ১৯ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

দেশের গণতন্ত্র অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের গণতন্ত্র অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে

ড. আকবর আলি খান

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র এখন অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সিভিল সমাজ আছে, যার কাজ হলো জনগণের দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ তুলে ধরা। সরকার বলছে, ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক’-সুজন শুধু সরকারের সমালোচনা করে; ‘সুজন’ যদি সরকারের প্রশংসা করে তাহলে সমালোচনা করবে কে? গতকাল রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন-এর অষ্টম জাতীয় সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। সুজন সহসভাপতি ড. হামিদা হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার-সিইসি ড. এ টি এম শামসুল হুদা, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি আবদুল মতিন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, স্থানীয় সরকার গবেষক ড. তোফায়েল আহমেদ, বিশিষ্ট ব্যাংকার সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, সুজন সহসম্পাদক জাকির হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ড. শাহনাজ হুদা প্রমুখ। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন সুজন জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।

বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জগুলো ব্যাখ্যা করে ড. আকবর আলি খান বলেন, প্রথমত, সরকার গঠিত হয় ভোটের সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে। পৃথিবীর অনেক দেশ এই পদ্ধতি পরিহার করে প্রপোরশনাল মেজরিটিকে গ্রহণ করছে। দ্বিতীয়ত, আমাদের এককক্ষীয় সংসদীয় ব্যবস্থা। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ থাকলে সংসদে ভিন্নমতের প্রতিফলন হয়। তৃতীয়ত, আমাদের দেশে সব ক্ষমতা একজনের হাতে কুক্ষিগত। চতুর্থত, আমাদের সরকারপ্রধান আবার দলীয়প্রধান। তাঁকে রাজনৈতিক দল টিকিয়ে রাখার দিকে নজর রাখতে হয়। ফলে জনগণ অধিকার বঞ্চিত হয়। তিনি আরও বলেন, এসবের কারণে আমাদের নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এর মধ্যে একটি হলো সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারছে না। তারা সাহসও দেখাতে পারছে না। তিনি গ্রিসের এক দার্শনিককে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘সুখী হওয়ার জন্য আমাদের স্বাধীন হতে হবে, আর স্বাধীন হতে হলে সাহসী হতে হবে’। এ সময় তিনি সুজনকে সাহসিকতার সঙ্গে তাদের কাজ অব্যাহত রাখার জন্য আহ্বান জানান। 

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, যে কোনো শাসন ব্যবস্থার পূর্বশর্ত হলো শাসন কাঠামোর সর্বস্তরে কার্যকর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে। সুজনের মতো সংগঠনের নাগরিক সক্রিয়তা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পেছনে মূলত কাজ করেছে ব্যক্তি উদ্যোগ। বাংলাদেশের মানুষ সাধ্যের মধ্যে যে কোনো উন্নয়ন ধারণা সাদরে গ্রহণ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে সামাজিক উদ্যোগের ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। সুজন এক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করছে।

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, সুশাসন গণতন্ত্রের একটি বড় স্তম্ভ। দেশে সুশাসনের অবক্ষয় হলে গণতন্ত্র কোত্থেকে থাকবে? সুশাসন রক্ষায় তাই সবাইকে কাজ করে যেতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো দুর্নীতির বিস্তার। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কিছু কিছু ছোটখাটো দুর্নীতি কমে এসেছে, কিন্তু বড় বড় দুর্নীতি আরও আঁকড়ে ধরেছে। এ দুর্নীতি তথ্যপ্রযুক্তি দিয়ে বন্ধ করা যাবে না। এর জন্য সুজনের মতো সংগঠনকে কাজ করে যেতে হবে। তিনি বলেন, দেশে যখন সব প্রতিবাদী সংগঠন গুটিয়ে যাচ্ছে, সেখানে সুজন-ই একমাত্র তাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা ঔপনিবেশিক শাসন থেকে একবার স্বাধীন হয়েছি, পাকিস্তানি শাসন থেকে একবার স্বাধীন হয়েছি। দুবার স্বাধীন হলেও দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা এখনো নাগরিকত্ববোধ তৈরি করতে পারিনি। আমরা নাগরিক হতে পারিনি, আমরা কেবল হয়েছি পেট্রন ক্লায়েন্ট। নাগরিকরা হলো ক্লায়েন্ট এবং রাজনৈতিক নেতা হলো পেট্রন। আমরা যা পাই তা মূলত পাই রাজনৈতিক নেতাদের অনুগ্রহের কারণে, আমাদের অধিকার হিসেবে পাই না। সুজনের সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে নাগরিকতা ও নাগরিকত্ববোধ তৈরির উদ্দেশ্যে।

বিচারপতি আবদুল মতিন বলেন, সুজন রাষ্ট্রের তৃতীয় স্তম্ভ। সিভিল সোসাইটি সংগঠন হিসেবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে চলেছে সুজন। বিশেষ করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের নির্বাচন কমিশনে আটটি তথ্য প্রদানের বিধান প্রণয়নে সুজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

সর্বশেষ খবর