রবিবার, ১৯ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

পুরনো ব্যবস্থা আর ফিরবে না

প্রতিদিন ডেস্ক

পুরনো ব্যবস্থা আর ফিরবে না

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, বিশ্বব্যবস্থায় জেগে ওঠা ক্ষমতার নতুন কেন্দ্র এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার অবসান ঘটিয়েছে এবং পুরনো ব্যবস্থা আর কখনো ফিরে আসবে না। সূত্র : আরটি, রয়টার্স। গত শুক্রবার রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামে দেওয়া বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট পুতিন এ কথা বলেছেন। ক্রেমলিন তার এই বক্তব্যকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছে। পুতিন বলেন, ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান চালানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তা এরই মধ্যে বুমেরাং হয়েছে এবং পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে ইউরোপের জন্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকট চরমভাবে বাড়িয়ে তুলেছে। কথিত ‘গোল্ডেন বিলিয়ন’ দেশগুলো এখনো মনে করে তারা উচ্চ মর্যাদার অধিকারী এবং অন্য দেশগুলোকে তাদের উপনিবেশ মনে করে। এর মাধ্যমে তারা পুরো আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে হেয়প্রতিপন্ন করে। বার্ষিক অর্থনৈতিক ফোরামের বৈঠকে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি আরও বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা রাষ্ট্র আমেরিকার কর্তৃত্ব মানতে না চায়- তাহলে আমেরিকা সেই ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা রাষ্ট্রের সম্পদ লুট করে নিতে চায়।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলো যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তাকে পাগলামি এবং সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নয় বলে মন্তব্য করেন পুতিন। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পূর্ণভাবে তার রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব হারিয়েছে এবং অন্যের   বাঁশির সুরে তাদের আমলারা নাচছে।

ওপর থেকে তাদের যে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, তারা তাই মেনে নিচ্ছে এবং তারা তাদের দেশের জনগণের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বাস্তবতা থেকে দূরে সরে যাওয়ার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকদের মূল্য দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তের কারণে তাদের ক্ষতির পরিমাণ এ বছরে ৪০ হাজার  কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

জ্বালানির দাম এবং মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার জন্য যারা রাশিয়াকে দায়ী করে- তাদের উদ্দেশে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, রাশিয়াকে দোষারোপ করা বোকামি এবং এই দোষারোপ করা হচ্ছে মূলত যারা লেখাপড়া জানে না তাদের বোকা বানানোর জন্য। তিনি বলেন, ‘আমাদের দোষারোপ করবেন না; নিজেদের দোষারোপ করুন।’ পুতিন সুস্পষ্ট করে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের দেশগুলোর গ্যাস আমদানির ব্যাপারে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ছিল তা বাদ দেওয়ার কারণে জ্বালানির দাম বেড়েছে।

বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির জন্য তিনি রাশিয়ার সার এবং খাদ্যশস্য রপ্তানির ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেন। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যদি বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়- তাহলে তার জন্য সম্পূর্ণভাবে মার্কিন প্রশাসন এবং ইউরোপীয় আমলাতন্ত্র দায়ী থাকবে। প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার অর্থনীতিকে ধ্বংস করার জন্য নিষেধাজ্ঞাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। এ জন্য তারা সরবরাহ ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়ে রাশিয়ার শিল্প, অর্থনীতি, জীবনমান বিপর্যস্ত করতে চেয়েছিল, কিন্তু তাদের সেই লক্ষ্য অর্জন করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে।

পুতিন বলেন, ‘পশ্চিমা অভিজাতরা ভাবছে (যুদ্ধের আগ পর্যন্ত) তাদের শাসিত ও প্রভাবপুষ্ট বিশ্ব ব্যবস্থা ছিল, তা চিরস্থায়ী এবং যুদ্ধ শেষ হলে তা ফের ফিরে আসবে; কিন্তু তারা আসলে এখনো অতীতের স্মৃতিতে ঝুলে আছে। কারণ কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়। কেউ যদি ভেবে থাকে যে অশান্ত এই সময়ের  শেষে সবকিছু আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে, তাহলে তিনি ভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে; এমন হওয়া সম্ভব নয়। কারণ, এই মুহূর্তে বিশ্ব যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে- তা মৌলিক, গভীর ও অপরিবর্তনীয়।

সর্বশেষ খবর