রবিবার, ১৯ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

পরিস্থিতির আরও অবনতির শঙ্কা

প্রয়োজনে সড়ক কেটে ফেলার নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেছেন, দেশের ১০ জেলার ৬৪ উপজেলা বন্যাকবলিত। বন্যাকবলিত এলাকার মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। ওই এলাকায় আগামী দুই দিনে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। বলা হচ্ছে, ১২২ বছরের ইতিহাসে সিলেট ও সুনামগঞ্জে এমন বন্যা হয়নি। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিক আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনকে নির্দেশ দেন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড মোতায়েন করার জন্য। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী শুক্রবার দুপুরে ৩১টি স্পিডবোটসহ সেনাবাহিনী উদ্ধারকাজে নামে। রাতের দিকে নৌবাহিনী ৩০ জন ডুবুরিসহ তাদের নৌযান নিয়ে উদ্ধারকাজ চালায়। গতকাল দুপুরে কোস্টগার্ড সেখানে পৌঁছায়। সবাই সম্মিলিতভাবে সিলেটে প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে সাড়ে চার শ আশ্রয় কেন্দ্রে স্থানান্তর করে। সুনামগঞ্জে ৬৫ হাজার মানুষকে তারা উদ্ধার করে দুই শটি আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। সেখানে রান্না করা খিচুড়ি, মুড়ি, চিড়া, গুড়, পানি এবং পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আমরা দুই জেলাতে ৮০ লাখ করে নগদ টাকা দিয়েছি। ৩২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। দুই জেলায় মোট দেড় হাজার টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’

১৫ মে এ বর্ষায় প্রথম দফায় বন্যা হয় সিলেটে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে, মে মাসের বন্যায় গত ১৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পানি হয় সিলেটে। তবে চলমান বন্যা গত মাসের রেকর্ডও ছাড়িয়ে গেছে। ১৫ জুন থেকে সিলেটের নিচু এলাকায় পানি জমে যায়। তবে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। দুপুর ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতের মধ্যেই সিলেট নগরের বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে যায় বন্যার পানিতে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সিলেটে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি বাসা-বাড়ি ভাসিয়ে নিয়েছে। এক দিনে বন্যার এমন ভয়াবহ রূপ আগে দেখেনি সিলেটের মানুষজন। বন্যার পানির এমন আকস্মিক বৃদ্ধিতে হতভম্ব ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ মানুষ। অবাক হয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারাও। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছেন সিলেটের বানভাসি মানুষ। এ ছাড়া জেলার কৃষকরা তাদের গৃহপালিত পশু নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠকরা মানবিক সংকট মোকাবিলায় সবাইকে সাধ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সড়ক বাধা সৃষ্টি করলে তা কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এ কথা জানিয়েছেন। গতকাল বিকালে মন্ত্রী তার মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে সিলেট অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘সিলেটের বেশির ভাগ রাস্তা তলিয়ে গেছে। রাস্তার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, কোথাও কোনো রাস্তার কারণে পানি অপসারণে বাধা পেলে সেই রাস্তা যেন কেটে ফেলা হয়। এর দায়িত্ব স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরকে দেওয়া হয়েছে। সুনামগঞ্জেরও একই অবস্থা। সেখানে কোমর-সমান পানি। ওই এলাকার মানুষকে বাঁচাতে শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তারা বন্যাদুর্গত এলাকার খোঁজখবর রাখছে। সেসব এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।’ সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনী অত্যন্ত ভালো ভূমিকা পালন করছে। বন্যার্তদের সহযোগিতা করতে গিয়ে তাদেরও কয়েকজন আহত হয়েছেন।’

সর্বশেষ খবর