সোমবার, ২০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

আশ্রয় কেন্দ্রে বিপুল মানুষ

প্রতিদিন ডেস্ক

আশ্রয় কেন্দ্রে বিপুল মানুষ

সিলেটে বন্যার যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে সেখানে মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সুনামগঞ্জের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সিলেটের বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে বিপুলসংখ্যক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সিলেট শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার  পানি প্রবেশ করায় তাদের কাছে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। সিলেট উপশহরে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী বুক-সমান পানিতে নেমে মাইকিং করে এ গলি সেই গলি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সঙ্গে করে তারা নিয়ে যাচ্ছেন পানির বোতল। খবর, বিবিসি বাংলা

এই দলের একজন সুলায়মান মিয়া বিবিসিকে বলেন, তার এলাকা এক তলা সমান পানিতে ডুবে গেছে। দুই তিন তলায় কেউ আছেন কি না তারা সেটা খুঁজে দেখছেন এবং তাদের তিনি অন্তত খাবার পানি দিয়ে সাহায্য করতে চান।

‘এই এলাকাতে বলা যায় বেশ বিত্তবানরা থাকেন। এখানে দুই তলা থেকে চার তলা পর্যন্ত বাড়িতে মানুষ আটকে আছে। যারা বারান্দা থেকে আমাদের কাছে পানি চাচ্ছেন তাদেরকে দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের একার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব না। আর বেশি দূর যেতেও পারব না। পানির গভীরতা সেখানে আরও বেশি,’ বলেন তিনি। এ কথার পরেই তার ফোনের লাইন কেটে যায়। সুনামগঞ্জের মতো সিলেটেও এখন মোবাইলের নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে, তবে ক্ষণিকের জন্য। এ কারণে কে কোথায় আশ্রয় নিয়েছেন তার খবর নিতে পারছেন না পরিবার বা আত্মীয় স্বজনরা। আটকা পড়েছেন অনেকে। সিলেটের বাইরে থেকে সুনামগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা করে সিলেটেই আটকে পড়েছেন এমন অনেকে। তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তাদের একজন বলেন, ‘আমার স্ত্রী, দুই সন্তান সবাই সুনামগঞ্জে। আমি বন্যার কথা শুনে ঢাকা থেকে আসছি। এখন তো সুনামগঞ্জে যেতে পারছি না। মোবাইলে নেটওয়ার্ক নেই। আমি জানি না তারা কোথায় আছেন।’

আরেকজন বলেন, ‘কুমিল্লা থেকে আসছি। এখন তো আর কোথাও যেতে পারছি না। পরিবার কোথায় আশ্রয় নিয়েছে তার খোঁজ এখনো পাইনি।’ সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন, সিলেট থেকে সাধারণ মানুষের সুনামগঞ্জ যাওয়ার কোনো উপায় নেই। শুধু উদ্ধারকর্মী ও ত্রাণকর্মীরা নৌকাযোগে যেতে পারছেন সেখানে। জেলা প্রশাসক সীমিত আকারে মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু হয়েছে বলে দাবি করলেও, সুনামগঞ্জের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সিলেট শহরের একজন বাসিন্দা থৌদাম বৌলি বলেন, ‘সুনামগঞ্জ এবং সিলেটের আশপাশের এলাকার মানুষজন এসে আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আমাদের এলাকায় এখনো পানি আসেনি। তবে আমরা বাইরে বের হয়ে শুকনা খাবার বা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারছি না। কারণ দোকান সব বন্ধ, আর যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো অনেক দাম। আমার জীবনে আমি এমন বিপর্যয়কর পরিস্থিতি দেখিনি কখনো।’ সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, শহর থেকে পানির উচ্চতা কিছুটা কমলেও জেলার ৯০ শতাংশ এখনো পানির নিচে। জেলার ৭০ হাজারের মতো মানুষ ২২০টি আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন।

কর্মকর্তারা বলছেন, হাওর ও অন্যান্য প্রত্যন্ত এলাকার যারা নিরাপদ দূরত্বে এখনো সরে আসতে পারেননি, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী।

শুক্রবার মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর সেখানে বিশেষ ব্যবস্থায় সীমিত জায়গায় মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর