সোমবার, ২০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
বিশেষজ্ঞ অভিমত । জি এম তারেকুল ইসলাম

ভবিষ্যতে বড় বন্যা আরও দ্রুত হবে

জিন্নাতুন নূর

ভবিষ্যতে বড় বন্যা আরও দ্রুত হবে

অতীতের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাবে, সিলেটে এবার যে বড় বন্যা হয়েছে তা অতীতেও হয়েছে। এবারের বন্যা মূলত উজানে বৃষ্টির কারণে হয়েছে। ইন্ডিয়া মেট্রোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্টের তথ্যে, এ রকম একটি দুর্যোগ ১২২ বছর পর হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের বড় বন্যা হয়তো আরও দ্রুত সময়ে সংঘটিত হবে। আর এটি হবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক জি এম তারেকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে গতকাল এসব বলেন। তিনি বলেন, তাপমাত্রা বেশি হলে বাষ্পীভবন বেশি হয়। আর এমন হলে তা মেঘের ওপরে চলে যায়, যা পরে বৃষ্টি হয়ে নিচে নামে। আমাদের আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী ভবিষ্যতে এ ধরনের বন্যা আরও হবে বলে আশঙ্কা করছি। বাংলাদেশে আবহাওয়া অধিদফতর বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়ার দায়িত্বে আছে। তারা দেশের ভিতরে যে বৃষ্টিপাত হয় এর পূর্বাভাস ভালো দিতে পারে। কিন্তু দেশের বাইরে বৃষ্টিপাত সম্পর্কে আগাম তথ্য যদি ইন্ডিয়া মেট্রোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্টের কাছ থেকে পাই, তাহলে মানুষকে আগে থেকেই সতর্ক করা সম্ভব।

এই অধ্যাপক বলেন, আমাদের এটি বুঝতে হবে যে, এ ধরনের দুর্যোগ ঠেকানোর কোনো পথ নেই। কারণ বন্যার পানি দেশের ভিতর দিয়েই প্রবাহিত হবে। এ জন্য ভবিষ্যতে যদি এ ধরনের বন্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে তা যেন সুরমা, কুশিয়ারা, জাদুকাটা ও মেঘনা নদী দিয়ে বঙ্গোপসাগরে চলে যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য সড়ক অবকাঠামো, যেমন সেতু ও কালভার্ট এমনভাবে তৈরি করতে হবে, বন্যার পানি নিচের দিকে নামতে যেন বাধা না পায়। অতীতে আমরা এমন অনেক অবকাঠামো করেছি, যাতে এই পানি নিচে নামার সময় বাধা পেয়েছে। আর পানি বাধা পেয়ে ধীরে নামলে বন্যা দীর্ঘায়িত হয় এবং ভোগান্তি বাড়ে। এ জন্যই এখন থেকে যে অবকাঠামো আমরা তৈরি করব তা যেন বন্যার পানি চলাচলে বাধা না দেয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নির্দেশনা দিয়েছেন, ভবিষ্যতে হাওর এলাকায় আমরা যেসব অবকাঠামো তৈরি করব তা যেন পানিপ্রবাহে বাধা না সৃষ্টি করে। তারেকুল ইসলাম বলেন, আমরা এমন বন্যা সচরাচর দেখিনি। সিলেটাঞ্চলের অনেক স্থানীয় বয়স্করাও বিষয়টির সঙ্গে একমত। এ ধরনের বন্যা প্রতিবছর বা এক-দুই দশকে হবে না। আবহাওয়ার আগের তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা যায়, এ ধরনের বন্য ১০০ বছর পর হওয়ার কথা। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনে এখন এই ব্যাপ্তি কমে আসবে। এ জন্য এমন বন্যা মোকাবিলায় আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এবার বন্যায় সিলেট মেডিকেল কলেজ, রেলস্টেশন, খাদ্যগুদাম তলিয়ে গেছে। ভবিষ্যতে এসব স্থাপনা এমন উচ্চতায় তৈরি করতে হবে, যেন তা তলিয়ে না যায়। তিনি বলেন, এই বন্যা ভিন্ন ভিন্ন বেসিনে হয়েছে। সিলেটের বন্যা মেঘনা নদীর বেসিনে। এর সঙ্গে যমুনা নদীর বেসিনের সম্পর্ক নেই। যমুনা বা ব্রহ্মপুত্র নদীর বেসিনের সঙ্গে আসামে যে বৃষ্টি হচ্ছে তার সম্পর্ক আছে। এই বৃষ্টির পানি এখন কুড়িগ্রামে নামছে। ব্রহ্মপুত্র দিয়ে যে পানি নামবে সেটি পদ্মায় আসবে। পদ্মা থেকে চাঁদপুরের মেঘনায় মিলিত হবে। এই দুটি মিলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। যদিও সিলেটের বন্যা বেশি দিন স্থায়ী হয় না। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র থেকে সৃষ্ট বন্যা বেশি সময় ধরে থাকে। আসামে বৃষ্টি হলে দেশে পানি আসতে ৩ থেকে ৪ দিন লাগে। কিন্তু মেঘালয়ের পাহাড়ে বৃষ্টি হলে সিলেটে ৬ ঘণ্টার মধ্যে বন্যা চলে আসতে পারে।

সর্বশেষ খবর