সোমবার, ২০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

পরিবহন খাতে হবে নবজাগরণ

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর

একসময় মাদারীপুর থেকে যাত্রীবাহী বাসে রাতে ঢাকায় যাওয়া যেত না। সন্ধ্যার পরই মাদারীপুরের যাত্রীবাহী বাস বন্ধ হয়ে যেত। ভোগান্তি শুরু হতো ফেরি ঘাটে। সেই ভোগান্তি কাটিয়ে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছে মাদারীপুরবাসী। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এখন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে আগামী ২৫ জুন খুলে দেওয়া হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এতে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হবে এ অঞ্চলের ২১ জেলা। সেতুর দ্বার উন্মুক্ত হওয়ার সঙ্গে শিল্প বাণিজ্যের প্রসারের পাশাপাশি এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসবে আমূল পরিবর্তন। মাদারীপুরে তাই নতুন বাস তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে উদ্যোক্তারা।

জানা গেছে, এ অঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগের অন্যতম রুট শিবচর বাংলাবাজার শিমুলিয়া নৌরুট। ফেরি স্বল্পতাসহ নানা জটিলতায়, দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হতো এই রুট ব্যবহারকারীদের। তবে এবার পদ্মা সেতু চালুর পর মাদারীপুর থেকে সহজেই বাসে করে ঢাকা যেতে পারবে এ অঞ্চলের যাত্রীরা। যোগাযোগের এক নতুন অধ্যায় যোগ হতে যাচ্ছে পদ্মা সেতুকে ঘিরে। পরিবহন মালিকদের কাছে এ অঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশা, যানবাহন ভোগান্তির অবসান ঘটিয়ে ভালো মানের যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে হবে।

জেলা বাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু চালু উপলক্ষে মাদারীপুর টু ঢাকা রুটে মাদারীপুর জেলা বাস মালিক সমিতির ২২টি বাসের সঙ্গে যোগ করা হবে আরও ২৫টি নতুন বাস। এ জন্য বাড়তি বিনিয়োগ করা হবে প্রায় ১০ কোটি টাকা। এদিকে মাদারীপুরের সার্বিক পরিবহনের ৫৭টি গাড়ির সঙ্গে যুক্ত হবে নতুন ২০টি  চেয়ার কোচ ও ৫টি এসি গাড়ি। এ ছাড়াও মাদারীপুরের চন্দ্রা পরিবহন, সোনালী পরিবহনের মালিকপক্ষ আরও নতুন বাস সংযোজন করার কথা ভাবছেন।

সম্প্রতি সরেজমিন মাদারীপুর পুরান বাসস্ট্যান্ড এলাকা ও সার্বিক পরিবহনের বাস ডিপোতে গিয়ে দেখা যায়,  বেশ কয়েকটি নতুন বাসের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। নতুন করে আরও কয়েকটি বাসের চেসিস তৈরির কাজ করছে ওয়ার্কশপ শ্রমিকরা। শ্রমিকদের দম ফেলার সময় নেই। মাদারীপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মমসাদ-উজ্জামান-মিমুন বলেন, আমাদের সব কাজ ঢাকামুখী। আমাদের প্রতিনিয়ত এই রুটেই যাতায়াত করতে হয়। পদ্মা সেতু চালু হলে যোগাযোগের নতুন মাত্রা যোগ হবে পরিবহনে। আমাদের প্রত্যাশা বাংলাদেশের ভালো কোম্পানির গাড়িগুলো এই রুটে আসুক এবং সঙ্গে স্থানীয় বাস কোম্পানিগুলোও নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন বাস এই রুটে চালু করুক।

বাস নির্মাণ শ্রমিক সুরেশ চন্দ্র সরকার বলেন, পদ্মা সেতু চালু হবে, তাই আমাদেরও কাজের চাপ দ্বিগুণ  বেড়ে গেছে। আমাদের শ্রমিকরা দিন রাত এক করে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা নতুন নতুন গাড়ির বডি তৈরি করছি। সার্বিক পরিবহনের তত্ত্বাবধায়ক আবুল হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু চালু উপলক্ষে আমরা নতুন নতুন চেসিস সংযোজন করছি। এ ছাড়াও আমরা নতুন ছয় গাড়ি  তৈরি করছি, সামনে আরও কয়েকটি তৈরি করা হবে। পুরাতন গাড়িগুলোকে মেরামতসহ পেন্টিংয়ের কাজ  শেষ করে দ্রুত এগুলোকে রাস্তায় নামানো হবে। মাদারীপুর জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান হাওলাদার বলেন, পদ্মা সেতু চালুর ফলে এ অঞ্চলে পরিবহনে ব্যবসার প্রসার ঘটবে। মাদারীপুরের সার্বিক, সোনালী ও চন্দ্রা পরিবহনের বাইরে আমরা জেলা বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ২০টি নতুন গাড়িতে ঢাকামুখী সার্ভিস দেব। আমাদের মালিক সমিতির পক্ষ থেকে যাত্রীদের সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, নতুন নতুন গাড়ি আসলে যাত্রীসেবা বাড়বে। এই ব্যবসায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর