সোমবার, ২০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

কাল সিলেট যাচ্ছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে উদ্ধার, চিকিৎসা,  ত্রাণ সহায়তা প্রদানে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সে জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ‘সাফ চ্যাম্পিয়ন-২০২১ বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী জাতীয় ফুটবল দল’-এর সংবর্ধনা ও আর্থিক সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন বর্ষাকাল, বিশেষ করে আমাদের সিলেট, সুনামগঞ্জ জেলায় এবারের বন্যা একটু ব্যাপকহারে এসেছে। আমি  প্রতিনিয়ত সব খবর রাখছি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ত্রাণ এবং উদ্ধারের সব কাজ করছি। প্রশাসন, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী থেকে শুরু করে আমাদের সব প্রতিষ্ঠান মানুষকে উদ্ধার ও তাদের মাঝে ত্রাণ পৌঁছানোর কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সেই সঙ্গে আমাদের দলের এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছেন।

বন্যার পানি নিষ্কাশনে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ জন্য যা যা করণীয় সেটাও আমরা করে যাচ্ছি। পানি নেমে গেলে বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায়ও সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে। সরকারপ্রধান বলেন, এবার বড় বন্যা আসতে পারে এটা আগে থেকে বলেছিলাম, সবাইকে সতর্ক করেছি, প্রস্তুতি নিতে বলেছিলাম এবং আমাদের সে প্রস্তুতি আছে। উত্তরের বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যাঞ্চল এবং দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বন্যার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যা শুরু হয়ে গেছে। বন্যা দক্ষিণাঞ্চলেও যাবে। তিনি বলেন, পানি নামতে শুরু করেছে, সুনামগঞ্জ থেকে পানি যখন নামে, তখন অন্যান্য এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করে। এটা আমাদের প্রাকৃতিক নিয়ম। বিশেষ করে রংপুর বিভাগ, ময়মনসিংহ বিভাগে বন্যার সম্ভাবনা আছে। এ ব্যাপারে আগে থেকেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, এই পানি যখন নামবে মধ্যাঞ্চল প্লাবিত হবে। ঠিক শ্রাবণ থেকে ভাদ্র পর্যন্ত আবার দক্ষিণাঞ্চল প্লাবিত হবে। দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচা বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে প্রত্যাশা করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ-খাইয়ে আমাদের চলতে হবে। কাজেই একদিকে যেমন আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করব, পাশাপাশি জীবনযাত্রাও যাতে চলে সে ব্যবস্থাও আমরা রাখব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন, পদ্মা সেতু বন্যার এই প্রেক্ষাপটে সহজ যোগাযোগে জাতির জন্য একটি আশীর্বাদ হবে, সরকার এটি ২৫ জুন উদ্বোধন করতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ২৫ জুন পদ্মা সেতু আমরা উদ্বোধন করব ইনশা আল্লাহ! এই উদ্বোধনের পর এটাও আল্লাহর একটা আশীর্বাদ হবে। কেননা দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগটা আমরা অব্যাহত রাখতে পারব। আমি মনে করি, পদ্মা সেতু এমন একটা সময় উদ্বোধন করতে যাচ্ছি সে সময় বন্যা শুরু হয়ে গেছে এবং এই বন্যা কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলেও যাবে। তিনি বলেন, সে সময় পণ্য পরিবহন, বন্যা মোকাবিলা, বন্যার সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের সহযোগিতার একটা বিরাট সুযোগ আমাদের আসবে। বন্যার্তদের রিলিফ দেওয়া থেকে ওষুধ সরবরাহ এবং খাদ্য সরবরাহের বিষয়টি আরও সহজতর হবে।

১৯৮৮ সালের বন্যায় গোপালগঞ্জে আটকে পড়ার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, তখন এ রকম পদ্মা সেতু থাকলে সহজেই চলে আসা সম্ভব হতো। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের সব থেকে ভয়াবহ এবং দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ঠিক সেই বন্যার আগেই আমরা যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু, যমুনা সেতু উদ্বোধন করেছিলাম। সেটা করেছিলাম বলেই উত্তরবঙ্গ থেকে পণ্য পরিবহনসহ সব কাজের সুবিধা হয়। সরকারপ্রধান বলেন, বন্যায় নদীগুলো আরও ভয়ংকর হয়ে উঠলে প্লাবিত দক্ষিণাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাঁর সরকার উত্তরাঞ্চল থেকে সুবিধাটা পায়। ফলে বন্যা সফলভাবে মোকাবিলা সম্ভব হয়। ওই সময় বিবিসি, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রচার ছিল- সে বন্যায় প্রায় ২ কোটি লোক না খেতে পেয়ে মারা যাবে। কিন্তু তাঁর সরকার বলেছিল, ‘একজন মানুষকেও তাঁর সরকার না খেয়ে মরতে দেবে না’ এবং সেটা সম্ভব হয়েছিল। এই কাজে সেই সেতুটা তখন বিরাট কাজে এসেছিল- বলেন তিনি।

খেলাধুলাকে এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে দেশে বিশ্বমানের ক্রীড়াবিদ তৈরিতে তাঁর সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যাও আমরা মোকাবিলা করব এবং খেলাধুলাও আমাদের চলবে, সবই আমাদের চলবে। এটাই আমাদের জীবন, এটাকেই মেনে নিতে হবে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাফ-২০২১ চ্যাম্পিয়ন মহিলা অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় ফুটবল দলের ৩৩ জন সদস্যসহ মোট ৮৮ জন ক্রীড়াবিদকে সম্মাননা দেওয়া হয়। সাফ চ্যাম্পিয়ন মহিলা অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় ফুটবল দলের বাইরে ৫৫ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে মুজিববর্ষ ফিফা আন্তর্জাতিক ফুটবল সিরিজ-২০২০ এর ৩৩ জন এবং বঙ্গবন্ধু ৪-জাতি ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট টুর্নামেন্ট- ২০২২ এর বিজয়ী ২২ জন খেলোয়াড় রয়েছেন।

অনুষ্ঠানে সাফ-২০২১ চ্যাম্পিয়ন মহিলা অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় ফুটবল দলের ক্যাপ্টেন মারিয়া মান্দা, খেলোয়াড় মনিকা চাকমা এবং প্রধান প্রশিক্ষক গোলাম রব্বানী ছোটন, বাংলাদেশ শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন ফয়সাল খান এবং বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ক্যাপ্টেন জামাল ভূঁইয়ার হাতে আর্থিক সম্মানীর চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানের শুরুতে তিন শ্রেণির ক্রীড়া দলের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি (বাফুফে) কাজী মো. সালাহউদ্দিন, মহিলা অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক মারিয়া মান্দা এবং বাংলাদেশ শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ফয়সাল খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম।

মঙ্গলবার সিলেট যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী : ভয়াবহ বন্যায় ভাসছে সিলেট-সুনামগঞ্জ। পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ। দুর্ভোগ-দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে এবং সরেজমিন বন্যা পরিস্থিতি দেখতে সিলেট যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামীকাল সকালে হেলিকপ্টারযোগে প্রধানমন্ত্রী সিলেট যাবেন। তিনি হেলিকপ্টারে করেই বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করবেন। বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী সেখানে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করবেন। পাহাড়ি ঢল, আর অতি ভারী বৃষ্টিতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় তলিয়ে গেছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা সিলেট ও সুনামগঞ্জ। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন দুই জেলার লাখ লাখ মানুষ।

সর্বশেষ খবর