মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

নামছে পানি বাড়ছে দুর্ভোগ

খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট, সুনামগঞ্জ এখনো বিদ্যুৎবিহীন, সিলেট বিমানবন্দর চালু হতে লাগবে আরও সময়, জানাজা দাফনে ভোগান্তি

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট ও মাসুম হেলাল, সুনামগঞ্জ

নামছে পানি বাড়ছে দুর্ভোগ

সিলেটে থইথই পানি। ভরসা শুধু নৌকা। টিনের চালেও আশ্রয় নিয়েছে অনেক পরিবার -রোহেত রাজীব

বৃষ্টি থামায় সিলেটের সুরমা, ধলাই, পিয়াইন, সারি ও লোভা তীরবর্তী উপজেলাগুলোয় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সুনামগঞ্জে কমতে শুরু করেছে পানি। কিন্তু বিশুদ্ধ পানি, খাবারের সংকটে বন্যাদুর্গত মানুষ। বিদ্যুৎ নেই এলাকাজুড়ে। পানি কমলেও দুর্ভোগে নাকাল জনজীবন।

কোথাও ধীরগতিতে নামছে পানি। কোথাও নতুন করে দেখা দিয়েছে বন্যা। দিন দিন তাই বাড়ছে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা। বাড়ছে বানভাসি মানুষের সংকটও। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির জন্য সিলেট, সুনামগঞ্জ   জুড়ে চলছে হাহাকার। বানভাসি মানুষ পড়েছে ‘সব হারানোর’ দুশ্চিন্তায়। কৃষি, মৎস্য, গবাদি পশু, ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, গুদামে সংরক্ষিত ধান-চাল সব হারিয়ে বানভাসি মানুষ পড়েছে মহাসংকটে।

সুনামগঞ্জে বন্যার পানি কিছুটা কমলেও এখনো জেলার বেশির ভাগ এলাকায় চরম পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বন্যাদুর্গত অসংখ্য মানুষ দিনযাপন করছে আশ্রয় কেন্দ্র, আত্মীয়স্বজনের বাড়ি। বন্যায় এক তলা প্রায় প্রতিটি ঘরে পানি ঢুকেছে। বহুতল বাড়িগুলো পরিণত হয়েছে এক একটি আশ্রয় কেন্দ্রে। বিপুলসংখ্যক মানুষ দুর্গত হওয়ায় জেলাজুড়ে দেখা দিয়েছে ত্রাণের ব্যাপক চাহিদা। খাবারের সংকটে আছে দুর্গতরা। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয় প্রশাসন ও সামর্থ্যবানদের পক্ষ থেকে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। খাবার পানির তীব্র সংকট রয়েছে জেলায়। বৃষ্টির পানি ধরে রেখে বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাচ্ছে অনেকে। বিপদের সুযোগে বোতলজাত পানির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বেড়েছে চাল, ডাল, তেল, মোমবাতি, চিড়া-মুড়িসহ শুকনো খাবারের দাম।

গতকালও স্বাভাবিক হয়নি জেলার সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা। সিলেট-সুনামগঞ্জ, ছাতক-সিলেট, ছাতক-সুনামগঞ্জ, ছাতক-দোয়ারাবাজার, সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জসহ বিভিন্ন সড়কের অনেক অংশ এখনো ডুবে থাকায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ। শহরের প্রধান সড়কে চার দিন ধরে চলছে নৌকা। ভোগান্তিতে পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ। দুর্গতদের উদ্ধার, সহায়তা ও ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের একটি টিম।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড দুর্গত এলাকাগুলোয় বাড়ি বাড়ি উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিক সুনামগঞ্জের বন্যার্তদের খোঁজখবর রাখছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘জেলায় ৬০০ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে দুর্গতরা। তাদের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। আগে জেলায় ২৬৫ মেট্রিক টন চাল দেওয়া হয়েছিল। নতুন করে প্রতিটি উপজেলায় আরও ১০ মেট্রিক টন চাল বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’

সিলেটে সুরমাসহ কয়েকটি নদীর পানি কমলেও এবার ভয়ংকর হয়ে উঠেছে কুশিয়ারা। ভারতের আসামের পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টিপাত হওয়ায় বেড়েই চলেছে কুশিয়ারার পানি। কুশিয়ারার ডাইকের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন। ভাঙন ও ডাইক উপচে পানি ঢুকে জেলার ছয় উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে। উপজেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে জকিগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর ও গোলাপগঞ্জ। পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারে এখনো সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও বিজিবি কাজ করে যাচ্ছে। দুই দিন ধরে কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছিল ধীরগতিতে। কিন্তু রবিবার অস্বাভাবিক গতিতে পানি বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হয়। ফলে কুশিয়ারা তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। এক মাস আগে বন্যার সময় যেসব স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছিল তার পাশাপাশি নতুন নতুন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে ডাইকের ওপর দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ শুরু করেছে। ফলে কুশিয়ারা তীরবর্তী উপজেলাগুলোয় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। এসব উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। কুশিয়ারা তীরবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার ৩৯ স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে সুলতানপুর ইউনিয়নের ভক্তিপুর, সদর ইউনিয়নের রারাই, বীরশ্রীর সুপ্রাকান্দি, কাজলসারের বড়বন্দে। বর্তমানে উপজেলার লাখো মানুষ পানিবন্দি। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আরও ভাঙনের আশঙ্কা স্থানীয়দের।

ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদী ও তীরবর্তী এলাকা পানিতে একাকার হয়ে গেছে। বন্যার পানিতে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সদরসহ ৬০ শতাংশ প্লাবিত হয়েছে। বালাগঞ্জ উপজেলার অবস্থাও একই। কুশিয়ারার ডাইক ভেঙে ও ওপর দিয়ে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে বাড়িঘর, হাটবাজার, রাস্তাঘাট। বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে বালাগঞ্জ-খছরুপুর ও ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। জেলা সদরের সঙ্গে এখনো বিয়ানীবাজার উপজেলার সড়ক যোগাযোগ টিকে থাকলেও যে কোনো সময় তা বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা।

গতকাল সারা দিন উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকায় পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। চারখাই, আলীনগর, শেওলা, দুবাগ, কুড়ারবাজার, থানাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে। উপেজেলার লাখো মানুষ পানিবন্দি। ওসমানীনগর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতিও ভয়াবহ। গোয়ালাবাজার, তাজপুর, দয়ামীর, বুরঙ্গা, সাদিপুর, পশ্চিম পৈলনপুর, উসমানপুর ও উমরপুর ইউনিয়নের পুরোটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। গোলাপগঞ্জ উপজেলার সুরমা তীরবর্তী বাঘাসহ কয়েকটি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে কুশিয়ারা তীরবর্তী এলাকায় অবনতি হয়েছে। উপজেলার শরীফগঞ্জ, বাদেপাশা, ঢাকাদক্ষিণ, আমুড়া ও ভাদেশ্বর ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির বেশ অবনতি হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে কুশিয়ারা তীরবর্তী ইউনিয়নগুলোর নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সুরমা তীরবর্তী সিলেট মহানগর, সদর, বিশ্বনাথ ও কানাইঘাট উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সিলেট মহানগরের উঁচু এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। নদীতীরবর্তী এলাকায় এখনো লাখো মানুষ পানিবন্দি। বাকি উপজেলায়ও লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। ধলাই, পিয়াইন, সারি ও লোভা নদীর পানি কমায় কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকার পানি কিছুটা কমেছে। তবে পানি কমার গতি খুব ধীর বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ তিন উপজেলার ৯০ ভাগ এলাকা এখনো প্লাবিত। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় কুশিয়ারার পানি আমলসীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৮৬ সেন্টিমিটার, শেওলায় ৬৭ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সুরমার পানি সব পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এখনো আক্রান্ত এলাকার মাটির দেখা মিলছে না। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয় চলছে হাহাকার। দুর্গম এলাকার আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয় ত্রাণ পাঠানো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় নৌকা করেই যেতে হচ্ছে। কিন্তু ইঞ্জিন নৌকার মাঝিরা ১ হাজার টাকা ভাড়া হাঁকছেন ২৫-৩০ হাজার। সিলেটের বাইরে থেকে কেউ ত্রাণ নিয়ে গেলে তাদের কাছে দাবি করছেন ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ফলে বেসরকারি উদ্যোগে যারা ত্রাণ দিতে চাইছেন তারা পৌঁছাতে পারছেন না দুর্গত মানুষের কাছে। আক্রান্ত এলাকাগুলোয় এখনো বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়নি। ফলে মোবাইল নেটওয়ার্কও মিলছে না। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। কিন্তু চিকিৎসা মিলছে না। উপজেলা পর্যায়ের বেশির ভাগ আশ্রয় কেন্দ্রের নিচতলা পানিতে নিমজ্জিত থাকায় স্যানিটারি সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর টয়লেট নিচতলায় হওয়ায় সেগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। এগুলো ব্যবহার করতে পারছে না আশ্রয় গ্রহণকারীরা।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন বন্যা আক্রান্ত এলাকার কৃষক ও গৃহস্থ পরিবারের সদস্যরা। নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসতে না পারায় গবাদি পশু পানিতে ডুবে মারা গেছে। হাওর এলাকায় এখন ভাসছে সারি সারি গবাদি পশুর মরদেহ। বিশেষ করে সিলেটের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের পুরো চিত্র খুবই ভয়াবহ। ঈদুল আজহায় বিক্রির জন্য যারা গবাদি পশু লালনপালন করেছিল তাদের পশুর সিংহভাগই বন্যায় মারা গেছে। এ ছাড়া গত বোরো মৌসুমে তোলা ধান যেসব কৃষক ও গৃহস্থ পরিবার সংরক্ষণ করেছিল, বন্যায় সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। ফসল ও মাছ ভেসে গেছে। যাদের কাঁচা ঘরবাড়ি ছিল দুই দফার বন্যায় সেগুলো ধসে পড়তে শুরু করেছে। সিলেট জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, সিলেট জেলায় (সিটি করপোরেশন বাদে) ৪৯৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৩২ বন্যার্ত। মানুষের পাশাপাশি ঠাঁই হয়েছে প্রায় ৩১ হাজার গবাদি পশুর। বন্যাকবলিত এলাকার লোকজনের চিকিৎসাসেবার জন্য জেলায় ১৪০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। ত্রাণ হিসেবে গতকাল পর্যন্ত ৮১২ মেট্রিক টন চাল, ১৩ হাজার ১১৮ প্যাকেট শুকনো খাবার ও নগদ ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। সিলেট মহানগরে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ৮০টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। কেন্দ্রগুলোয় প্রায় ১০-১২ হাজার বন্যার্ত উঠেছে। কিন্তু সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তাদের খাবার ও চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে কেন্দ্রগুলোয় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার চলছে। কয়েকজন কাউন্সিলর ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় কেন্দ্রগুলোয় পাঠানো হচ্ছে খাবার। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, ৮০টি আশ্রয় কেন্দ্রে যেসব বন্যার্ত উঠেছে তাদের প্রত্যেকের জন্য ১ কেজি চিড়া ও ২৫০ গ্রাম গুড় বরাদ্দ করা হয়েছে। সেগুলো এখনো পাঠানো হচ্ছে। এর বাইরে কাউন্সিলর ও স্থানীয় লোকজন নিজেদের উদ্যোগে কেন্দ্রগুলোয় খাবার দিচ্ছেন। কোথাও এতটুকু শুকনো জায়গা নেই। এখন মানুষ মারা গেলে জানাজা কিংবা দাফন সবকিছুতেই বিপত্তি। খাটিয়া কাঁধে নিয়ে বহনের সুযোগও নেই। ভরসা শুধু কলা গাছের ভেলা। শনিবার রাতে মারা যান মোহনগঞ্জের পানুর গ্রামের বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগ কর্মী মানিক মিয়া (৩৮)। মৃত্যুর পর তার জানাজা পড়ার স্থান নিয়ে বাধে বিপত্তি। কারণ পুরো গ্রামই তলিয়ে আছে পানিতে। পরে গ্রামবাসী সিদ্ধান্ত নেয় উঁচু এলাকার রাস্তায় জানাজা পড়ানো হবে। কিন্তু সেখানে লাশ নিয়ে যাওয়া ছিল আরও দুরূহ।

নেত্রকোনা থেকে আলপনা বেগম জানান, নেত্রকোনায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে মদন ও খালিয়াজুরিতে পানি আরও বাড়ছে। অন্য উপজেলাগুলোয় পানি অপরিবর্তিত আছে। ৩২৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১ লাখ ৬ হাজার ৬৮৮ মানুষ ঠাঁই নিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহনলাল সৈকত জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্টায় বন্যার পানি কমতে শুরু করছে। জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানিয়েছেন, পানি কমলেও এখনো ৩২৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১ লাখের বেশি মানুষ ঠাঁই নিয়েছে।

সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে বন্যার পানি নেমেছে। তবে রানওয়ের দিকনির্দেশনামূলক অ্যাপ্রোচ লাইট এখনো ডুবে আছে। তাই বিমানবন্দর এখনই চালু হচ্ছে না। গতকাল ওসমানী বিমানবন্দর পরিদর্শন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। পরে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, রানওয়ের অ্যাপ্রোচ লাইট জ্বালানো গেলে বিমানবন্দর চালু করা হবে। এর আগে ১৭ জুন রানওয়েতে পানি ওঠায় তিন দিনের জন্য সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে হেলিকপ্টারে সিলেট আসবেন। তিনি বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করবেন। এরপর সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার বন্যাকবলিত এলাকাও পরিদর্শন করবেন।

 

বন্যায় বিপর্যস্ত জনজীবন

বন্যার পানিতে সিলেটে বিপর্যস্ত জনজীবন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সর্বশেষ খবর