মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রেস কাউন্সিল পাচ্ছে অর্থদণ্ডের ক্ষমতা

সর্বজনীন পেনশন আইনের খসড়া অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

তিরস্কারের পাশাপাশি অর্থদণ্ডের ক্ষমতা দিয়ে গতকাল ‘দ্য প্রেস কাউন্সিল (সংশোধন) আইন ২০২২’-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বর্তমান আইনে প্রেস কাউন্সিল শুধু ‘তিরস্কার’ করতে পারে। তবে কাউন্সিল কত টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড দিতে পারবে তা চূড়ান্ত হয়নি।

দেশের বেসরকারি পর্যায়ের মানুষকে পেনশনের আওতায় আনার বিধান রেখে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২২’-এর খসড়ায় আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এসব আইনের খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়। মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশ সার্বভৌম সম্পদ তহবিল গঠনের নীতিগত অনুমোদনের বিষয়ে মন্ত্রিসভার ইতিপূর্বে নেওয়া সিদ্ধান্ত বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।

প্রেস কাউন্সিল আইন প্রসঙ্গে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল আইনের পরিপন্থী, বাংলাদেশের বিপক্ষে যায় এবং দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিপক্ষে যায় এমন কিছু হলে এই আইনের আওতায় শাস্তি হবে। সংবাদপত্র এবং সংবাদের মানোন্নয়নই এর উদ্দেশ্য। আইনের খসড়ায় অপসাংবাদিকতার জন্য সংবাদ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে অর্থদণ্ডের কথা রাখা হয়েছে। আগে প্রেস কাউন্সিল শুধু তিরস্কারই করত। এখন চাইলে অর্থদণ্ড করতে পারবে। তবে অর্থদণ্ডের পরিমাণ কত হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। এটা প্রিন্ট ও ডিজিটাল সব সংবাদমাধ্যমের জন্য বলবৎ হবে। অর্থদণ্ড আলোচনার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখনো পর্যন্ত এটা ফাইনাল অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এটা আলাপ-আলোচনার বিষয় আছে, তাই প্রাইমারি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’

খন্দকার আনোয়ার বলেন, ‘আইনটি মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। তাদের প্রস্তাবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, নৈতিকতা ইত্যাদি ক্ষুণ্ন বা ভঙ্গের অপরাধে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের প্রস্তাব করা হলেও মন্ত্রিসভা এ প্রস্তাবে সম্মত হয়নি। আইন মন্ত্রণালয়ের যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রেস কাউন্সিল আইনটি আবারও মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করবে। ১৯৭৪ সালে একটা প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট ছিল। সেটার সংশোধনী নিয়ে আসা হয়েছিল আজ। আগে প্রেস কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা ১৪ জন ছিল, এখন ১৭ জন করা হয়েছে। তথ্য অধিদফতর থেকে প্রেস কাউন্সিলের একজন প্রতিনিধি, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে একজন এবং সামাজিক সংগঠনের একজন নারী সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করে সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। কাউন্সিলের সেক্রেটারিকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা করা হয়েছে।’ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কাউন্সিল কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ সংশ্লিষ্ট পত্রিকায় প্রকাশের বিধান নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে হানিকর বা প্রেস কাউন্সিলের আচরণবিধিমালা পরিপন্থী সংবাদ, প্রতিবেদন, কার্টুন ইত্যাদি প্রকাশের দায়ে কোনো সংবাদপত্র বা সংবাদ সংস্থার বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কাউন্সিল ব্যবস্থা নিতে পারবে। সংবাদ সংস্থা বলতে প্রিন্ট মিডিয়া এবং সব ডিজিটাল মিডিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যে অর্থদণ্ডের কথা প্রেস কাউন্সিল আইনে উল্লেখ করা আছে, সেটি সংশ্লিষ্ট সংস্থা বহন করবে। কার্টুন যদি প্রিন্ট বা ডিজিটাল মিডিয়াতে দেন, সেটা যদি অন্য ধরনের কিছু হয়, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছু হলে, তাহলে তো এটা আপনার অপরাধ হবে। এখন আপনি ম্যাডামের (প্রধানমন্ত্রী) বিরুদ্ধে ব্যঙ্গাত্মক কিছু কার্টুন দিলেন, এখন সেটা অপরাধ হবে না?’

সর্বজনীন পেনশন আইনের খসড়া অনুমোদন : সর্বজনীন পেনশন প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রস্তাবিত এ আইনটির খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে সংসদে পাঠানো হবে। প্রস্তাবিত আইনে একজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে চারজন সদস্য নিয়ে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ থাকবে। দেশের নাগরিকগণের মধ্যে ১৮ বছর থেকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এই প্রিমিয়াম জমা দিলে ৬০ বছরের পর থেকে পেনশন সুবিধা পাবেন সংশ্লিষ্টরা। পেনশনাররা ৬০ বছরের পর যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন প্রিমিয়ামের অনুপাতে পেনশন পেতে থাকবেন। পেনশন পেতে কমপক্ষে ১০ বছর নিয়মিত চাঁদা দিতে হবে। তাই পেনশন কার্যক্রম শুরুর প্রথমদিকে ৫০ বছরের অধিক বয়সী ও ৬০ বছর বয়সের কম বয়সীরাও কীভাবে পেনশনের আওতায় আসতে পারেন তা আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হলে বিধি দ্বারা নির্ধারণ করা হবে। নাগরিকদের মধ্যে যাদের পেনশনের প্রিমিয়াম দেওয়ার ক্ষমতা নেই তাদের জন্যও বিশেষ বিবেচনায় বিধান রাখা হবে। এটাও নির্ধারণ হবে বিধির মাধ্যমে। এ ব্যবস্থায় সরকারি চাকরিজীবীরা থাকবেন না। কারণ তাদের চাকরিতেই পেনশনের ব্যবস্থা আছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে পেনশনের ভাণ্ডারে ১৮ বছর থেকে ৬০ বছর বয়সের সব বাংলাদেশি নাগরিক পেনশনে অংশ নিতে পারবেন। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিরাও পেনশনে অংশ নিতে পারবেন। যে ব্যক্তি ১৮ বছর থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত প্রিমিয়াম দেবে তার পেমেন্টে একরকম হবে, যে ৪০ বছর পর্যন্ত দেবে তারটা একরকম হবে। প্রিমিয়ামের একাধিক স্তর থাকবে। যিনি বেশি স্কেলের প্রিমিয়াম দেবে তার পেনশন বেশি হবে। পেনশনারদের কেউ ৬০ বছর পর্যন্ত প্রিমিয়াম দেওয়ার পরপরই মারা গেলে তার নমিনি প্রয়াত পেনশনারের ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত পেনশন পাবেন। আইনের মধ্যে প্রিমিয়াম উল্লেখ থাকছে না। বিধি দিয়ে নির্ধারণ করা হবে। যাতে সময়ের প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করা যায়। কারণ আজকে ২ হাজার টাকা ঠিক করা হলো, ২০ বছর পর ২ হাজার টাকার মান একই থাকবে না। একজন নাগরিক ১৮ বছর থেকে পেনশনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর সরকারি চাকরিতে ঢুকলে তিনি সর্বজনীন পেনশন তহবিলের টাকা এককালীন পেয়ে যাবেন। এরপর সরকারি চাকরির পেনশন নিয়মে ঢুকে যাবেন। কেউ ৬০ বছরের আগে মারা গেলে তার নমিনিরাও নির্ধারিত হিসাব অনুযায়ী এককালীন  টাকা পাবেন।

এত বড় একটি উদ্যোগ পাইলটিং ছাড়াই কেন শুরু করতে যাচ্ছে সরকার জানতে চাইলে খন্দকার আনোয়ার বলেন, ১৪-১৫টা দেশের অভিজ্ঞতা নেওয়া হয়েছে। একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই হয়েছে। তাই সমস্যা হবে না। আগামী অর্থবছরে এটা চালু হবে কি না- এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইনটা পাস হোক তারপর দেখা যাবে। পদ্মা সেতু উদ্বোধন প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অনুষ্ঠান দেশের ৬৪ জেলায় একসঙ্গে উদযাপনের সিদ্ধান্ত থাকলেও বন্যার কারণে সিলেটের অনুষ্ঠানের বিষয়টি ‘রিভিউ’ করতে বলেছে মন্ত্রিসভা। কাল বুধবার পদ্মা সেতুর বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সবকিছু বলবেন প্রধানমন্ত্রী।

সর্বশেষ খবর