বুধবার, ২২ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

এ বন্যা কিছুটা হলেও প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট

জিন্নাতুন নূর

এ বন্যা কিছুটা হলেও প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট

ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল

সিলেটের বন্যা কিছুটা হলেও প্রাকৃতিক এবং কিছুটা মানবসৃষ্ট। অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ ও রাস্তাঘাট     তৈরির ফলে অল্প সময়ে পানি সরে যাওয়ার সুযোগকে আমরা বাধা দিয়েছি। এতে বন্যার পানির স্থায়িত্ব ও গভীরতা দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (শিক্ষা) এবং দুর্যোগবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব বলেন। তিনি বলেন, বন্যা পরিস্থিতি সামাল বা বন্যা দূরীকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর দক্ষতা আছে। যেহেতু হঠাৎ বৃষ্টিতে এ বন্যার সূত্রপাত, এ জন্য এটি সামাল দেওয়া দুরূহ কাজ। ফলে মানুষের ভোগান্তিও বেশি হয়েছে। আবার হাওরাঞ্চলে যে রাস্তাঘাট তৈরি করা হয়েছে সেখানে পানি সরে যাওয়ার ব্যবস্থা যদি থাকত তাহলে বন্যা এভাবে দীর্ঘস্থায়ী হতো না। বন্যার পানির উচ্চতাও এত বৃদ্ধি পেত না। ভবিষ্যতে অবকাঠামো তৈরির সময় ডিজাস্টার ইমপ্যাক্ট এসেসমেন্ট করে তা তৈরি করতে হবে। এতে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

মাকসুদ কামাল বলেন, সিলেটের এ বন্যাকে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হিসেবে দেখছি। আমাদের ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জে বলাই ছিল যে, পৃথিবীসহ আমাদের এখানে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভয়ানক প্রভাব পড়বে। এ জন্য বড় বন্যা ও সাইক্লোনের মতো বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ হবে যা বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার সঙ্গে জড়িত। এগুলোকে আমরা হাইড্রোক্লাইমেটিক ডিজাস্টার বলে থাকি। এগুলোর প্রভাব পৃথিবীব্যাপী বৃদ্ধি পাবে। আমাদের এটি যেহেতু বন্যা ও সাইক্লোনপ্রবণ অঞ্চল, এ জন্য এসব দুর্যোগের ভয়াবহতাও বৃদ্ধি পাবে। ১২২ বছরের ইতিহাসে মেঘালয় ও আসাম অঞ্চলে যে বৃষ্টি হয়েছে তার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। আসাম, মেঘালয়ের পরেই সিলেটে ডিপ্রেশন আছে। আসাম, মেঘালয় উঁচু অঞ্চলে আর সিলেট নিচু অঞ্চলে। আসাম, মেঘালয়ে বৃষ্টি হলে তা স্বল্প সময়ের মধ্যে সুরমা, কুশিয়ারা নদী দিয়ে সিলেট এলাকায় চলে আসে। আর বৃষ্টিপাত যেখানে বেশি হবে সেখানে মাটির ক্ষয় ও নদী ভরাট বেশি হবে। আমরা ধারণা করছি, সিলেটে নদীগুলো ভরাট হয়ে গেছে। ফলে নদীর পানি ধারণক্ষমতাও কমে গেছে। অল্প সময়ে যখন অধিক বৃষ্টিপাত হয় তখন এ ধরনের বন্যা হয়। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অল্প সময়ে অধিক বৃষ্টিপাত হয়েছে একে আমরা এক্সট্রিম ইভেন্ট বলি। আর এর প্রভাব সিলেট অঞ্চলে পড়েছে।

তিনি বলেন, পৃথিবীতে যেসব সংগঠন বন্যা নিয়ে পূর্বাভাস দেয় তার মধ্যে আমাদের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র অন্যতম। তারা ৫ থেকে ১০ দিন আগে বন্যা নিয়ে সতর্কতা দেয়। কিন্তু এটি বের করার জন্য উজানে কি পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে তার তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজন। এ উপাত্ত তাৎক্ষণিকভাবে পেয়ে গেলে দ্রুত বন্যা নিয়ে সতর্ক করা সম্ভব। উজানে অল্প সময়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে ধারণা করছি বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রে এ তথ্য পরে এসেছে। এ জন্য সঠিক সময়ে উজানের তথ্য আসতে হবে। আর সিলেটের বন্যা নিয়মিত বন্যা না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে লোকালয়ের পর লোকালয় বন্যায় তলিয়ে যায়। আর এ ধরনের বৃষ্টি হলে আমরা যে মডেল পূর্বাভাসের জন্য ব্যবহার করি তা কাজ করে না।

মাকসুদ কামাল বলেন, মেঘালয় ও আসামে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে তা এখন সরে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার দিকে যাচ্ছে। এতে করে দেশের মধ্য ও উত্তরাঞ্চল, উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে ইতোমধ্যে বন্যা শুরু হয়ে গেছে। নীলফামারি, কুড়িগ্রামে এরই মধ্যে বন্যা শুরু হয়ে গেছে। দেশের মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোয়ও আগামী দু-একদিনের মধ্যে বন্যা শুরু হবে। বৃষ্টিপাতের প্রভাব দেশের পশ্চিমাঞ্চলে পড়েছে। শিগগিরই দেশের মধ্য ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এর প্রভাব পড়বে। আশঙ্কা করছি, দেশের একটি বড় অংশ বন্যায় প্লাবিত হবে। তবে এবারের বন্যা ১৯৮৮ বা ১৯৯৮ সালের মতো হবে কি না তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর