শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শেখ হাসিনা

বিএনপির পাচার করা টাকার কিছু এনেছি, তাদের মুখে এত বড় কথা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির পাচার করা টাকার কিছু এনেছি, তাদের মুখে এত বড় কথা

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির আমলে সিদ্দিরগঞ্জ পাওয়ার প্লান্ট এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক নির্মাণে দুর্নীতির কথা তুলে ধরে বলেছেন, বিদেশে তাদের পাচার করা টাকার কিছু অংশ ফেরত এনেছি। তাদের মুখে এত বড় কথা আসে কীভাবে?

গতকাল আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।

পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকে পদ্মা সেতু নিয়ে তারা কথা তুলেছে। সেখানে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল বিশ্বব্যাংক। খালেদা জিয়ার আমলে সিদ্দিরগঞ্জ পাওয়ার প্লান্টে দুর্নীতির দায়ে বিশ্বব্যাংক কিন্তু অর্থ বন্ধ করে দিয়েছিল। পরবর্তীতে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এটা বের করেছিল কোন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে খালেদা জিয়ার ছেলেরা অর্থ ঘুষ নিয়েছিল। ঢাকা-ময়মনসিংহ রোড করার সময় দুর্নীতির দায়ে বিশ্বব্যাংক সড়কে অর্থ বন্ধ করেছিল। তাদের চরিত্রই এই। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনেও দেশের জনগণ নৌকাকে বেছে নেবে। দেশবাসীও জানে নৌকা আওয়ামী লীগের প্রতীক, উন্নয়নের প্রতীক। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে তাই নৌকা ছাড়া তাদের বিকল্প নেই, গতি নেই।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ নৌকায় ভোট দিয়ে বঞ্চিত হয়নি। নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা এসেছে। স্বাধীনতা শুধু এনে দেয়নি, স্বাধীনতার সুফল এখন জনগণের ঘরে ঘরে পৌঁছাচ্ছে। নৌকা ছাড়া তো গতি নেই বাংলাদেশের। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে নিজের ভাগ্য গড়ার জন্য নয়, মানুষের ভাগ্য গড়তে। জন্মলগ্ন থেকেই সেই আদর্শ নিয়েই রাজনীতি করে যাচ্ছে এ দল। নেতৃত্ব শূন্য দল (বিএনপি) নির্বাচন করবে আর জনগণ ভোট দেবে কী দেখে? বাংলাদেশের মানুষ এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন।

বিএনপি দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশটা আমাদের। আমি যতটুকু চিনি জানি, দেশের মানুষের কল্যাণ আওয়ামী লীগ যতটা বুঝবে, অন্যরা তা বোঝে না। বুঝবে কী করে, বিএনপির হৃদয়ে তো থাকে পাকিস্তান। তাদের মনেই আছে পাকিস্তান। ‘দিল মে পেয়ারে পাকিস্তান’। তিনি বলেন, ওদের (বিএনপি) কথা যত না বলা যায় ততই ভালো। কারণ ওরা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকেই বিশ্বাস করে না। বরং এগুলোকে গাট্টি বেঁধে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিলেই ভালো হয়। পাকিস্তানে এখন যে অবস্থা, ওখানেই তারা ভালো থাকবে। তিনি বলেন, এখনো লাহোরে সোনার দোকানে খালেদা জিয়ার বড় ছবি আছে। ওই দোকানের সোনার গয়না তার খুব প্রিয়। তাদের মানসিকতা ওইদিকেই। আমাদের বাংলাদেশের জন্য না। তবে এটাও ঠিক এদের জন্ম তো বাংলাদেশে না। না জিয়ার জন্ম বাংলাদেশ, না খালেদা জিয়ার জন্ম।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি শুনলাম, খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক জিয়া স্লোগান দেয় ‘পঁচাত্তরের পরাজিত শক্তি’। এর মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণ করেছে তার বাপ যে পাকিস্তানের দালাল ছিল, তার মা-ও পাকিস্তানি দালাল হিসেবেই ছিল। এই বাংলাদেশের স্বাধীনতাটাকে সম্পূর্ণরূপে নস্যাৎ করতে চেয়েছিল। আদর্শগুলো একে একে মুছে ফেলে দিয়েছিল। জাতির পিতার নামটাও মুছে ফেলেছিল। তারা তো ওই স্লোগান দেবেই। তিনি বলেন, এরাই যে পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এবং চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত, জিয়া যে জড়িত তা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বক্তব্যের মাধ্যমে তারা প্রমাণ করে দিয়েছে। কারণ এই খুনিদের বিচারের হাত থেকে মুক্ত করেছিল জিয়াউর রহমান এবং তাদের পুরস্কৃত করেছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। জিয়াউর রহমান কিন্তু সেভাবেই নিহত হয়েছিল এবং তার লাশও কিন্তু কেউ পায়নি। খালেদা জিয়া ও তার ছেলেও কখনো বলতে পারবে না তার বাপের লাশ দেখেছে। সে কথা তো বিএনপি নেতারা একবারও স্মরণ করে না। একটা বাক্স এরশাদ সাহেব নিয়ে এসেছিল। কিন্তু সেই বাক্সে কী ছিল? পরবর্তীতে এরশাদ সাহেবের মুখেই তো আছে যে, সেই বাক্সে জিয়ার লাশ ছিল না। জিয়ার লাশ কোথায় গেছে কেউ পায়নি। কিন্তু একটা বাক্স এনে সংসদ ভবনে তারা রেখে দিয়েছে। সেখানে তারা ফুলের মালা দেয়। সেখানে লাশ নেই। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির এক নেতা বলেছেন তারেক জিয়াকে নাকি আসতে দেওয়া হয় না! এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। ২০০৭ সালে তারেক জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়েছিল সে আর রাজনীতি করবে না। এই শর্তে সে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। বিএনপি নেতাদের এটা তো ভুলে যাওয়ার কথা না। কাজেই তাকে কেউ বিতাড়িত করে নাই। স্বেচ্ছায় চলে গিয়ে আর সে ফিরে আসে নাই। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, একজন রাজনৈতিক নেতার যদি ফিরে আসার সাহস না থাকে, সে আবার নেতৃত্ব দেয় কীভাবে? আমাকেও তো বাধা দিয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। মার্ডার কেস দিয়েছিল, ওয়ারেন্ট ইস্যু করেছিল। আমি তা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে দেশে এসেছিলাম। মামলা মোকাবিলা করেছিলাম। আমি জোর করে দেশে ফিরে এসেছি। এরপর আমাকে কারাবন্দি করেছে। আমি জানি রাজনীতি করি কারাবন্দি হতেই হবে। কিন্তু আমাকে তো খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান গ্রেনেড মেরে হত্যাও করতে চেয়েছে। কোটালীপাড়ায় বিশাল বোমা সেটাতেও কি তাদের হাত ছিল না। বারবার হত্যার চেষ্টা এরাই তো করেছে। চলমান সিলেটসহ বিভিন্নস্থানে ভয়াবহ বন্যার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যায় বিএনপির কোনো নেতা কোনো সাহায্য দিয়েছে, দেয়নি। ঢাকায় বসে বসে নানা কথা বলে বেড়াচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অনেক দুর্গম এলাকায় যাচ্ছে। যেখানে যারা কেউ পৌঁছাতে পারছে না সেখানেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ত্রাণ বিতরণ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সমগ্র বিশে^ই খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারপরও আমরা কিন্তু আমাদের অর্থনীতির গতিটা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। বাজেটও দিয়েছি। আমি আবারও বলব, আমাদের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, রাজশাহীর সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ প্রমুখ।

জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ধারাবাহিক গণতন্ত্র আছে বলেই দেশের উন্নতি হচ্ছে। এভাবেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ সংসদের বাজেট অধিবেশনে গতকালের বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

বৈঠকের শুরুতে ২৩ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পয়েন্ট অব অর্ডারে অনির্ধারিত আলোচনার সূত্রপাত করেন অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান তোফায়েল আহমেদ। আলোচনায় আরও অংশ নেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আমির হোসেন আমু।

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট আমরা কেবল জাতির পিতাকে হারাইনি। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনাকেও হারিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি হয়েছিল। জয় বাংলা স্লোগান নির্বাসিত হয়েছিল। ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা হয়েছিল। তিনি বলেন, ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসে। পরবর্তীতে দ্বিতীয়বার সরকারে আসে। সরকারে আসার পর আজকে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। জনগণের সেবা করার সুযোগ পেলে অবশ্যই আগামীতে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

প্রধানমন্ত্রী সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, শুধু উন্নয়নশীল দেশ নয়, আমি ২১০০ সালের ডেল্টাপ্ল্যান করে দিয়েছি। ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ যাতে হয়, সেই পরিকল্পনাও তৈরি করে দিয়েছি। এই ধারাবাহিকতা নিয়ে দেশ চলতে থাকলে তাহলে এদেশের অগ্রযাত্রা আর কেউ থামাতে পারবে না। বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে জনগণের সেবা করার অধিকার পেয়েছি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। আজকে ধারাবাহিক গণতন্ত্র আছে বলেই বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ নিজেদের অর্থায়নে করতে পেরেছি। সেটাও গণমানুষের সমর্থন নিয়ে আমরা করেছি। ঠিক এভাবেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আর কখনো পরমুখাপেক্ষী হবে না। কারও কাছে হাত পেতে চলবে না। চলবে আত্মমর্যাদা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, বাবা-মা-ভাই সব হারিয়ে আমি ফিরে এসেছিলাম। আওয়ামী লীগ আমাকে সভানেত্রী নির্বাচিত করেছিল। পাশাপাশি জনগণের আশ্রয়ই আমি এসেছিলাম। তাদের মাঝে আমি খুঁজে পেয়েছিলাম হারানো বাবা-মায়ের স্নেহ। হারানো ভাইয়ের স্নেহ। কাজেই এদেশের মানুষের জন্য যে কোনো আত্মত্যাগে আমি সবসময় প্রস্তুত।

প্রবীণ সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিভিন্ন স্মৃতির কথা তুলে ধরে বলেন, আজ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ এক অনন্য নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাদের মাঝে ফিরে না আসতেন তাহলে আজ পদ্মা সেতু পেতাম না। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ শেখ হাসিনার মাধ্যমেই করা সম্ভব হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অপর প্রবীণ সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু দলের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিকে এদেশে পুনর্বাসিত করেছে বিএনপি। তারা এদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। নিজেদের অর্থায়নে আজ পদ্মা সেতু তৈরি করা হয়েছে। এই সেতু হচ্চে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন।

সর্বশেষ খবর