শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

বয়স জটিলতায় চলে যেতে হয় অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের

ব্যাংক খাতের জন্য চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক

চাকরিজীবনের শুরু থেকে নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে ব্যাংকারদের কাজ করতে হয়। বেসরকারি ব্যাংকের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে প্রধান নির্বাহী হতে বয়স ৬০ বছর পেরিয়ে যায়। ৬০ বছরের কাছাকাছি সময় যখন একজন ব্যাংকার অভিজ্ঞ হয়ে প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব নেন ততদিনে অবসরের সময় হয়ে যায়। ফলে বয়স  জটিলতার কারণে ব্যাংকে নেতৃত্বে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের পাওয়া যায় না। ব্যাংক পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন অভিজ্ঞ ব্যাংকার পাওয়া যায় না। আইনের কারণে ৬৫ বছর বয়সে চলে যেতে হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যোগ্যতাসম্পন্ন অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের বিকল্প নেই। এখন দেশের গড় আয়ু যেখানে বেড়েছে সেখানে ব্যাংক নির্বাহীদের বয়স ৬৫ থেকে ৬৭ করা উচিত। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করতে প্রতিটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি ব্যাংকের আর্থিক, ব্যবসায়িক, প্রশাসনিক সব কর্তৃত্বই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ওপর ন্যস্ত থাকে। বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী ব্যাংকিং খাতে বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকে প্রাইভেট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিয়োগের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ৬০ বছর বয়সের আগে অধিকাংশ ব্যাংকারের পক্ষে প্রধান নির্বাহী হওয়ার সুযোগ কমই আসে। কিন্তু বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী ৬৫ বা তদূর্ধ্ব বছর বয়সের কারও পক্ষে বাংলাদেশের কোনো প্রাইভেট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী থাকার সুযোগ নেই। অথচ পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রাইভেট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৭০ বছর। বাংলাদেশ ও ভারতের জনগোষ্ঠীর সম্ভাব্য গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে যথাক্রমে ৭৩ ও ৬৯.৬ বছর হয়েছে। ডেনমার্ক, ইতালি, নেদারল্যান্ডস বা পর্তুগালের মতো বিশ্বের অনেক উন্নত দেশেই অবসর বয়সসীমা বাড়ানো হয়েছে। সম্ভাব্য আয়ুষ্কাল বিবেচনায় নিয়ে আমাদের ব্যাংকিং খাতের শীর্ষ নির্বাহীদের অবসর বয়সসীমা দুই বছর বাড়িয়ে সমন্বয় করা যেতে পারে, যা ব্যাংকগুলো নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী শীর্ষ নির্বাহী নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারে। কভিড-১৯ মহামারি পরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি ক্রান্তিলগ্ন অতিক্রম করছে। তার মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এই সংকটকে ঘনীভূত করেছে। সম্প্রতি বিএফআইইউর ২০ বছর শীর্ষক সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর যথার্থই বলেছেন- মূল্যস্ফীতি ও ডলারের বিনিময় হার নিষ্পন্নের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবার সামষ্টিক উদ্যোগ প্রয়োজন।

এ সংকটকে মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে ও ভবিষ্যতে আরও নেবে এই বিশেষ খাত সামনে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তাদের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। কভিড-১৯ পরবর্তী দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনে সরকার ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকার অধিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এ প্রণোদনা সরকারি ও প্রাইভেট ব্যাংকের মাধ্যমে বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন আছে। এসব প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে সব প্রাইভেট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা বিশেষ অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করেছেন। যা দেশের অর্থনীতিকে সংহত ও গতিশীল করতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। কিন্তু এ সময়ে সর্বোচ্চ বয়সসীমার কারণে প্রাইভেট ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহী পদে কোনো পরিবর্তন সরকারের বাস্তবায়নাধীন প্রণোদনা প্যাকেজ ও অন্যান্য ব্যাংকিং কার্যক্রমের স্বাভাবিক গতি বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মূলত অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে সরকারের গৃহীত নীতি, প্রকল্পসহ বিভিন্ন উদ্যোগসমূহের ঝুঁকিমুক্ত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বয়সের সর্বোচ্চসীমা ৬৫ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৬৭ করা হয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রেখে কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল রাখতে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৬৫ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৬৭ বছর করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে ব্যাংকিং খাতের সফলতার সঙ্গে জড়িত আছে তারল্য ও রিজার্ভ পরিস্থিতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং ক্যাপিটাল মার্কেটের সামগ্রিক উন্নত ব্যবস্থাপনা। যা হবে সরকারের চলমান সফলতার চূড়ান্ত রূপ। এ ধরনের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত সরকারের কভিডকালীন এবং কভিড-উত্তর এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমাদের নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সহায়তা করে প্রবৃদ্ধির ধারাকে সমুন্নত রাখতে সহায়ক হবে।

 

সর্বশেষ খবর