শনিবার, ২৫ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

একজন জামিলুর রেজা চৌধুরী

জয়শ্রী ভাদুড়ী

একজন জামিলুর রেজা চৌধুরী

প্রকৌশলী, গবেষক, শিক্ষাবিদ জামিলুর রেজা চৌধুরী বাংলাদেশে একজনই। তিনি ছিলেন দেশের সম্পদ। পদ্মা সেতুতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর মেধা, প্রজ্ঞা, দিকনির্দেশনায় মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কথায় ঝরে পড়েছে তাঁর ভূয়সী প্রশংসা।

গত বুধবার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পদ্মা সেতুর নির্মাণ প্রক্রিয়ায় অনেকেই সরে গেছেন, আমাদের সমালোচনা করেছেন। সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী সরে যাননি। পদ্মা সেতুর নির্মাণ প্রক্রিয়ায় তিনি আমাদের পাশে ছিলেন। তিনি বেঁচে নেই। তিনি বেঁচে থাকলে পদ্মা সেতুটা দেখে যেতে পারতেন।’

নির্ধারিত লিখিত বক্তব্য শেষে তিনি পুরনো সংবাদপত্র থেকে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ, অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য পড়ে শোনান। জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, যিনি সবার কাছে জেআরসি নামে পরিচিত। তাঁকে চেনে না এমন মানুষ দেশে খুব কমই আছে। কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে ২০২০ সালের ২৮ এপ্রিল প্রত্যুষে ঘুমের মধ্যে চলে যান। তাঁর মেধা, মননশীলতা, নিরপেক্ষতা ও দায়িত্বশীলতা ছিল অনন্য। জামিলুর রেজা চৌধুরী পদ্মা সেতু প্রকল্পের আন্তর্জাতিক প্যানেল অব এক্সপার্টসের সভাপতি ছিলেন। ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী সিলেটে ১৯৪২ সালের ১৫ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আবিদ রেজা চৌধুরী ও মাতার নাম হায়াতুন্নেছা। পৈতৃক নিবাস আসামের কাছাড় জেলায়। চাকরির সুবাদে আবিদ রেজা চৌধুরী পরিবারসহ সিলেটে অবস্থানকালে জামিলুর রেজা চৌধুরীর জন্ম হয়। দেশভাগের পর আবিদ রেজা চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন এবং স্থায়ী নিবাস গড়েন ৬৮ এলিফেন্ট রোড, ঢাকায়। তিনি সেইন্ট গ্রেগরিজ হাইস্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে মেট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি হন। ১৯৬৩ সালে তিনি পুরকৌশল বিভাগ থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বা পুরকৌশল বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন।

বাংলাদেশের প্রথম বৃহৎ সেতু প্রকল্প যমুনা বহুমুখী সেতু প্রকল্পেরও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের অন্যতম সদস্য ছিলেন ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। ওই সেতুর কাজে সরাসরি যুক্ত থাকার সুবাদে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কাজ শুরু হলে তাঁকে ১১ সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সভাপতি নিযুক্ত করা হয়। এ প্যানেল সেতুর ডিজাইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রকল্প কর্মকর্তা, ডিজাইন পরামর্শক ও উন্নয়ন সহযোগীদের বিশেষজ্ঞ পরামর্শ প্রদান করেছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়া, ষড়যন্ত্রের ঘনঘটা, বিশেষজ্ঞদের নানা মতবিরোধের মধ্যেও অটল ছিলেন জামিলুর রেজা চৌধুরী। ২০১৫ সালে গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেছিলেন, ‘বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে দেখা হয়। তিনি সোজাসুজি প্রশ্ন করেন- নিজেদের টাকায় সেতু বানালে তদারক করতে পারবেন? তাঁকে স্পষ্ট বলি নদী প্রশিক্ষণ (বা নদীশাসন) ও মূল সেতুর কাজ আমরা পারব না। বাকিটা দেশীয়ভাবে সম্ভব। তাঁর সঙ্গে যেদিন চট্টগ্রামে আলোচনা হয়, সেদিনই ঢাকা ফিরে তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেন।’ জামিলুর রেজা চৌধুরী আজ নেই। শত বাধা পেরিয়ে খরস্রোতা পদ্মার বুকে পদ্মা সেতু দাঁড়িয়ে রয়েছে বিজয় নিশান উড়িয়ে।

সর্বশেষ খবর