বুধবার, ২৯ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

মাস্ক না পরলে শাস্তি

♦ করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ছয় নির্দেশনা ♦ এক মাসে রোগী বেড়েছে ৭৪ গুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

মাস্ক না পরলে শাস্তি

দোকান, শপিং মল, বাজার, ক্রেতা-বিক্রেতা, হোটেল রেস্টুরেন্টে সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। এমনকি সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করাসহ ছয় দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গতকাল এ ছয় দফা নির্দেশনা দিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

নির্দেশনাগুলো হলো- ১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে সব গণমাধ্যমে অনুরোধ জানাতে হবে। ২. সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা। ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতি প্রয়োগ করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম যথাসম্ভব বর্জন করতে হবে। ৩. ধর্মীয় প্রার্থনার স্থানসমূহে (মসজিদ, মন্দির, গির্জা ইত্যাদি) মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ৪. জ্বর, সর্দি, কাশি বা কভিডের উপসর্গ দেখা দিলে কভিড টেস্ট করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ৫. দোকান, শপিংমল, বাজার, ক্রেতা-বিক্রেতা, হোটেল রেস্টুরেন্টে সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। এবং ৬. স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবার সময় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। 

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওই নির্দেশনায় বলা হয়, সাম্প্রতিককালে দেশে কভিড আক্রান্তের হার দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে ও জনসাধারণের মধ্যে মাস্ক পরিধান এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে যথেষ্ট শৈথিল্য পরিলক্ষিত হচ্ছে মর্মে সরকারের উচ্চ মহলে আলোচনা হচ্ছে। কভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ১৪ জুনের সভায় গৃহিত সুপারিশ প্রতিপালনের জন্য এবং কভিড প্রতিরোধকল্পে নির্দেশনা বাস্তবায়নের অনুরোধ করা হলো। চিঠিতে সব মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিব-সিনিয়র সচিব এবং সংশ্লিষ্টদের এসব নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এক মাসে করোনা রোগী শনাক্ত বেড়েছে ৭৪ গুণ : দেশে ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণের লাগাম টানা যাচ্ছে না। এক মাসের ব্যবধানে শনাক্তের হার বেড়েছে ১৮.৬৪ গুণ। দৈনিক রোগী শনাক্ত বেড়েছে ৭৪ গুণ। গত ২৪ ঘণ্টায় টানা দ্বিতীয় দিন ২ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে দেশে। মারা গেছেন তিনজন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১৩ হাজার ৪৮৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৮৭ জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। শনাক্তের হার ১৫.৪৭ শতাংশ। গত ২৮ মে শনাক্ত হয়েছিল মাত্র ২৮ জন করোনা রোগী। শনাক্তের হার ছিল শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ। জুনের শুরু থেকেই হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে করোনা সংক্রমণ। এর মধ্যে যশোরে ওমিক্রণের নতুন ধরন বিএ.৪/৫ শনাক্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন ধরনটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে ঢুকে যেতে পারে শরীরে। ফলে টিকা নেওয়ার পরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। সংক্রমণ এড়াতে মাস্ক ব্যবহার ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মানা জরুরি।

এদিকে সংক্রমণ বাড়লেও বাড়ছে না সুস্থতা। গত ২৮ মে ২৮ জন রোগী শনাক্ত হলেও সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন ১৯১ জন। গতকাল ২ হাজারের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হলেও সুস্থ হয়ে উঠেছেন মাত্র ২০০ জন। গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ১৯ লাখ ৬৯ হাজার ৩৬১ জন কভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৯ লাখ ৭ হাজার ৬৭ জন। প্রাণ হারিয়েছেন ২৯ হাজার ১৪৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে দুজন ছিলেন নারী ও একজন পুরুষ।

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপট কমলে ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হাজারের নিচে নেমে আসে। ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে ২৬ মার্চ তা এক শর নিচে নামে। গত ৫ মে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা নেমেছিল চারজনে। শনাক্তের হার ১ শতাংশের নিচে ছিল অনেক দিন। ২২ মের পর থেকে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। জুনে এসে দ্রুত বাড়তে শুরু করে। ১১ সপ্তাহ পর দৈনিক শনাক্ত কভিড রোগীর সংখ্যা ১২ জুন এক শ ছাড়িয়ে যায়। ১৫ দিনের মাথায় গত সোমবার তা ২ হাজারের ঘর ছাড়ায়। দেশের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসক অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ মহামারির চতুর্থ ঢেউ শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। মাস্কই সংক্রমণ ঠেকানোর অন্যতম অস্ত্র।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর