বুধবার, ২৯ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

শৃঙ্খলা আসছে পদ্মা সেতুতে

স্পিডগান ও সিসিটিভি বসিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল

নিজস্ব প্রতিবেদক ও মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

সেনাবাহিনী, পুলিশ ও সেতু কর্তৃপক্ষের সমন্বিত তদারকিতে শৃঙ্খলা আসছে পদ্মা সেতুতে। গতকাল সারা দিন সেতুর দুই প্রান্তের টোল প্লাজায় গাড়ির তেমন চাপ দেখা যায়নি। সেতু পার হতে আসা  বাহনগুলো চলাচল করেছে নির্বিঘ্নে। অবৈধ পার্কিং ও গাড়ি থেকে নেমে ছবি তোলা, ভিডিও করা রোধে গতকালও সেতুতে নির্দিষ্ট দূরত্বে সেনা সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। এর মধ্যেও কেউ কেউ সেতুতে গাড়ি থামানোর চেষ্টা করলে  তাদের ঠেকিয়ে দিয়েছে সেনাবাহিনী। ছিল ভ্রাম্যমাণ আদালতের টহলও। এদিকে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় টোল আদায়ে ভাটা পড়েছে। প্রথম দিনের তুলনায় প্রায় পৌনে ১ কোটি টাকা টোল আদায় কম হয়েছে দ্বিতীয় দিনে। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ জানালেন, স্পিড গান ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করার পর পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অন্যদিকে, গতকাল পিকআপে করে পণ্য হিসেবে মোটরসাইকেল পারাপারের সুযোগ দেওয়া হয়েছে সেতু দিয়ে। তবে এ সময় মোটরসাইকেল মালিকদের পিকআপে উঠতে দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন জানান, পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপারে নিষেধাজ্ঞার কারণে টোলপ্লাজা এলাকায় গতকাল (মঙ্গলবার) মোটরসাইকেলের সংখ্যা খুবই কম দেখা গেছে। অন্যান্য যানবাহন নির্বিঘ্নে পদ্মা সেতু পার হতে পারছে।

মোটরসাইকেলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত স্পিড গান সিসিটিভি বসানোর পর : পদ্মা সেতুতে স্পিড গান ও সিসিটিভি স্থাপনের পর মোটরসাইকেল চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। চাহিদা অনুযায়ী ফেরি চলাচল করবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। যাত্রী কম থাকায় লঞ্চ মালিকদের হতাশা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিন দিনেই হতাশা এলে হবে না। আমরা তো আশাবাদী। ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ কেন তৈরি করছি? এটার চাহিদা আছে বলেই করছি। সেজন্য আমাদের শত শত কোটি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে, আমরা তো লক্ষ্য নিয়েই আছি। অপরিকল্পিত দেশ পরিচালনা করছি না। অপ্রয়োজনীয় কিছু প্রধানমন্ত্রী করছেন না। আমি মনে করি লঞ্চযাত্রা সামনে আরও উপভোগ্য হবে।

পণ্য হিসেবে পার হচ্ছে মোটরসাইকেল : শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বিবেচনায় পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকলেও গতকাল থেকে পণ্য হিসেবে পিকআপ বা ট্রাকে করে  মোটরসাইকেল পারাপার করা যাচ্ছে। তবে ওই পিকআপে কোনো যাত্রীকে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। সেতুর মাওয়া টোল প্লাজায় দায়িত্বরত বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মোটরসাইকেল যদি পণ্য হিসেবে পিকআপে করে ঢেকে নিয়ে যায় তাহলে যেতে পারবে। কিন্তু যাত্রী বা আরোহীসহ মোটরসাইকেল নিয়ে পিকআপ যেতে পারবে না। কারণ মোটরসাইকেল ও আরোহীরা একসঙ্গে পিকআপে গেলে তারা সেতুতে নামতে পারে।

কমেছে টোল আদায় : যান চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার প্রথম দিনের চেয়ে দ্বিতীয় দিনে টোল আদায় অনেকটা কমেছে। প্রথম দিনের তুলনায় প্রায় পৌনে ১ কোটি টাকা কম টোল আদায় হয়েছে দ্বিতীয় দিনে। গতকাল দুপুরে সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল হোসেন এসব তথ্য জানান। সেতু কর্তৃপক্ষের ধারণা, মোটরসাইকেল বন্ধ করে দেওয়ায় টোল আদায় কম হয়েছে। আবুল হোসেন বলেন, সোমবার ভোর ৬টা থেকে গতকাল ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সেতু দিয়ে পারাপার হয়েছে ১৫ হাজার ৪২৯টি যানবাহন। এ সময়ে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৯৭ লাখ ৪৫ হাজার ৮২০ টাকা। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ৫১ হাজার ৩১৬টি যানবাহন থেকে টোল আদায় হয়েছিল ২ কোটি ৯ লাখ ৪০ হাজার ৩০০ টাকা। সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, সেতু খুলে দেওয়ার পর প্রথম ২৪ ঘণ্টায় পার হওয়া যানবাহনের ৬০ শতাংশই ছিল মোটরসাইকেল। সোমবার মোটরসাইকেল বন্ধ থাকায় যানবাহন চলাচল কম হয়েছে।

সেতুতে চলবে না রুট পারমিট ছাড়া বাস : রুট পারমিট ছাড়া কোনো বাস পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচল করতে পারবে না বলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির অন্তর্ভুক্ত দক্ষিণাঞ্চলের সব মালিক সমিতিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংগঠনটির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ এ নির্দেশনা দেন। গতকাল বিকালে এক চিঠিতে দক্ষিণাঞ্চলের সব মালিক সমিতির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে এই নির্দেশনা দেন তিনি।

চিঠিতে বলা হয়, গত ১১ জুন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরী পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণবঙ্গের কোনো পরিবহনের গাড়ি রুট পারমিট ছাড়া চলাচল করতে পারবে না। রুট পারমিট আছে কি না তা নিজ নিজ জেলা মালিক সমিতি পর্যবেক্ষণ করবে এবং দূরপাল্লার রুটের গাড়িগুলো শুধু জেলা শহরে থামতে পারবে। এর বাইরে কোথাও বাস থামানো যাবে না। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় মালিক সমিতি ও শ্রমিক ফেডারেশনের নীতিমালার বাইরে কোনো অর্থ আদায় করা যাবে না। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

সর্বশেষ খবর