বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা ডেঙ্গু

ঘরে ঘরে জ্বর সর্দি কাশি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে শুরু হয়েছে করোনা মহামারির চতুর্থ ঢেউ। হু হু করে বাড়ছে সংক্রমণ। এই বিপদের মধ্যেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে ২ হাজার ২৪১ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সবশেষ এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি। অন্যদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪০ জন। আগের দিন ভর্তি হয়েছিলেন ৪৭ জন।

চলতি মাসেই হঠাৎ করে বেড়ে গেছে করোনা সংক্রমণ ও ডেঙ্গুর প্রকোপ। গত এক দিনে শনাক্ত হওয়া ২ হাজার ২৪১ জন করোনা রোগীর মধ্যে ঢাকা জেলাতে পাওয়া যায় ১ হাজার ৮১৪ জনকে, যা শনাক্ত রোগীর ৮১ শতাংশ। এই সময়ে মোট নমুনা পরীক্ষার ৭৮.৫৪ ভাগ হয়েছে ঢাকায়। অন্যদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে নতুন করে ভর্তি হওয়া ৪০ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতেই ভর্তি হয়েছেন ৩৮ জন। অপর দুজন ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম ও যশোরে। গতকাল সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে ১২৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিলেন, যার মধ্যে ১২১ জনই ভর্তি ছিলেন ঢাকায়। পয়লা জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৫৬ জন ডেঙ্গু রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। এর মধ্যে ৯২৭ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, একজন মারা গেছেন। গত জানুয়ারিতে ১২৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ফেব্রুয়ারিতে ২০ জন, মার্চে ২০ জন, এপ্রিলে ২৩ জন ও মে মাসে ১৬৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। আর চলতি মাসে ভর্তি হয়েছেন ৭০৪ জন। করোনা সংক্রমণও কমতে কমতে ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হাজারের নিচে নেমে এসেছিল। ২৬ মার্চ তা এক শর নিচে নামে। গত ৫ মে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা নামে চারজনে। ২২ মের পর শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে। জুনে এসে দ্রুত বাড়তে শুরু করে সংক্রমণ।

এদিকে ৪ মাস ১১ দিনের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বাধিক করোনা রোগী শনাক্ত হলেও মৃত্যু হয়নি কারও। আগের দিন তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল। গত এক দিনে ১৪ হাজার ৭১২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। শনাক্তের হার ছিল ১৫.২৩ শতাংশ। অথচ, মাসের শুরুতেও শনাক্তের হার ছিল ১ শতাংশের নিচে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ১৯ লাখ ৭১ হাজার ৬০২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ২৯ হাজার ১৪৫ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৯ লাখ ৭ হাজার ২০১৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৫২ জন।

গত এক দিনে ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৯৬৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩১ জন, রংপুর বিভাগে ২ জন, খুলনা বিভাগে ৩৭ জন, বরিশাল বিভাগে ২৪ জন ও সিলেট বিভাগে ৯ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

ঘরে ঘরে জ্বর সর্দি কাশির রোগী : জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হয়ে ঘরে ঘরে বাড়ছে রোগী। এর মধ্যে টেস্ট করালে অনেকেরই করোনা পজিটিভ আসছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগে বাড়ছে রোগীর চাপ। ফার্মেসি থেকে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ইমেরিটাস অধ্যাপক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন করোনা সংক্রমণ, ডেঙ্গু আক্রান্ত, ভাইরাস কিংবা সাধারণ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। তাই জ্বর এলে করোনা টেস্ট করতে হবে। জ্বর আক্রান্ত অনেক রোগী টেস্ট করালে করোনা পজিটিভ আসছে। তাই অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে টেলিমেডিসিন সেবাও নিতে পারেন। অনেক রোগী করোনার সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্তও হচ্ছেন। তাই ফার্মেসি থেকে নিজের ইচ্ছামতো ওষুধ সেবন করা যাবে না। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’ গত কয়েকদিনে সারা দেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে জ্বর, সর্দি, কাশি ও ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। সঙ্গে বাড়ছে করোনার প্রভাবও। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের হারও ধীরে ধীরে বাড়ছে। এক পরিবারে একজন আক্রান্ত হলে পুরো পরিবারে ছড়িয়ে পড়ছে জ্বর। বর্ষা শুরু হতেই তাপমাত্রার ওঠানামায় সারা দেশে বেড়েছে ভাইরাস জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়ার প্রকোপ। হাসপাতালগুলোয়ও বাড়ছে এমন রোগীর সংখ্যা। তবে এ প্রবণতা সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানী ঢাকায়। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এক পরিবারে একজন জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হলে অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে। সাধারণ জ্বর মনে হলেও এর মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে লুক্কায়িত আছে করোনার জীবাণু। এই বৃষ্টি, এই রোদ। একবার মানুষ বৃষ্টিতে ভিজছে, একবার শরীরে ঘাম শুকিয়ে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটছে। হাসপাতালের আউটডোরে জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।’

সর্বশেষ খবর