মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

খরচ কমানো নিয়ে সতর্ক সরকার

সব ক্ষেত্রে সতর্কতার নির্দেশ কেনাকাটা বন্ধ মিটিংয়ের সম্মানী নেওয়া যাবে না অতি জরুরি ইলেকট্রনিক্স পণ্য কিনতে হবে অর্ধেক

মানিক মুনতাসির

অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সরকার। এজন্য আগের অর্থবছরের মতোই ১ জুলাই শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরেও কৃচ্ছ্রসাধনের পথেই হাঁটছে সরকার।

করোনা মহামারি থেকে বৈশ্বিক অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নতুন এক বৈশ্বিক সংকটের মুখে দাঁড় করিয়েছে বিশ্ববাসীকে। একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও। যদিও বাংলাদেশের বেলায় অভ্যন্তরীণ কৃষিজ উৎপাদনে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় সরকারের আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে বহুগুণ। অন্যদিকে প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি কিছুটা স্তিমিত হয়ে গেছে। একই সঙ্গে ডলারের চাহিদা ও মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে অস্বাভাবিক হারে। সরকারের রাজস্ব আদায়েও বিরাজ করছে ধীরগতি। পরিস্থিতি বিবেচনায় ডলার সংকট মোকাবিলায় সরকার অনেক পদক্ষেপও নিয়েছে। এর মধ্যে অতি জরুরি ব্যতিরেকে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করা হয়েছে আরও আগেই। দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে নতুন বাজেটে।

এ ছাড়া সব ধরনের বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে এলসি মার্জিন বাড়ানো হয়েছে। সব ক্ষেত্রে ব্যয় সংকোচনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারি প্রকল্পের জন্য কিংবা সরকারি দফতরে ব্যবহারের জন্য সব ধরনের গাড়ি কেনা বন্ধ করা হয়েছে। সভা-সেমিনারে যোগ দিলেও কোনো ধরনের সম্মানী নেওয়া যাবে না। সরকারি দফতরের জন্য অতি জরুরি ইলেকট্রনিক্স পণ্য প্রয়োজনের অর্ধেক কেনার নির্দেশনা। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করা হয়েছে আরও আগেই। এদিকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন নীতিতেও কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। কম প্রয়োজনীয় পরিচালন ব্যয় কমানোর কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এডিপিভুক্ত প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ অর্থের ক্ষেত্রে কাটছাঁট করা হয়েছে। গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় সরকারের হাতে থাকা প্রকল্পগুলোকে এ, বি, সি তিন পর্যায়ে ভাগ করে তৃতীয় ধাপের (সি ক্যাটাগরি) প্রকল্পে অর্থ ছাড় আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং অধীনস্থ দফতর/সংস্থার এ ক্যাটাগরিভুক্ত প্রকল্পগুলো যথানিয়মে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের কাজ অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ‘বি’ ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে সরকারি অর্থায়নের ২৫ শতাংশ সংরক্ষিত রেখে অনূর্ধ্ব ৭৫ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। আর ‘সি’ ক্যাটাগরির প্রকল্পগুলোর অর্থ ছাড় আপাতত স্থগিত থাকবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে বাজেট অধিশাখা থেকে জারি করা এ-সংক্রান্ত পরিপত্র ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে। এতে সরকারি অর্থের সাশ্রয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে কৃচ্ছ্রতা সাধনের নীতি গ্রহণ করায় বিপুল পরিমাণ অর্থের সাশ্রয় হয়েছে বলে অর্থবিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এদিকে অর্থবিভাগের জারি করা অপর এক পরিপত্রে বলা হয়, দেশের অভ্যন্তরে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ খাতে (প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ব্যতীত) বরাদ্দকৃত অর্থের ৫০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। এসব বরাদ্দকৃত অর্থ অন্য কোনো খাতে পুনরুপযোজন বা স্থানান্তর করা যাবে না। এ ছাড়া অনিবার্য কারণ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞাও বহাল রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের নেওয়া এসব সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলো বেশ ইতিবাচক, তবে এগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন জরুরি। এ ছাড়া সরকারি অর্থের অপচয় রোধ করা আরও জরুরি বলে তিনি মনে করেন। এজন্য উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মেয়াদ দীর্ঘায়িত না করা এবং বার বার মূল্য সংশোধন না করার পরামর্শ দিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ।

সর্বশেষ খবর