বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

পথে পথে ভোগান্তি

ঈদযাত্রায় স্বস্তি শুধু পদ্মা সেতুতে, ঢাকা-চট্টগ্রাম ১৫ স্থানে যানজট, ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে দুর্বিষহ গাজীপুর, ঢাকা-নওগাঁ গাড়ির জট

হাসান ইমন

পথে পথে ভোগান্তি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গতকাল তীব্র যানজট -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঈদুল আজহায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের সবচেয়ে বড় স্বস্তি পদ্মা সেতু। ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনা আর নেই। শুধু ঢাকা থেকে বের হতে পারলেই দ্রুত গন্তব্যে যাওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে। ঈদযাত্রা নিয়ে দক্ষিণে স্বস্তি এলেও দুর্ভোগের শঙ্কা রয়ে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। একই অবস্থা ঢাকা থেকে বগুড়া সড়কের। এ সড়কে যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে পরিবহন চালকদের। আর ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে দুর্বিষহ দুর্ভোগ হচ্ছে গাজীপুরে। সব মিলিয়ে পথে পথে ভোগান্তি নিয়েই শুরু হচ্ছে সড়কপথে এবারের ঈদযাত্রা।

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিনুল্লাহ নুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঈদ এলে সড়কে পরিবহনের সংখ্যা একটু বাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। সড়কপথে বাড়ি ফেরা মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এবং পুলিশ মাঠে রয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে। আশা করি সড়কপথে যানজট হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি পর্যন্ত গাড়ির চাপ একটু বেশি থাকে। এর মধ্যে লোকাল বাস ও তিন চাকার গাড়ি বেশি। একই সঙ্গে বাজার ও মহাসড়ক থেকে কিছুটা দূরে পশুর হাট রয়েছে। মূলত এ কারণে পরিবহনের গতি একটু কমে যায়। তবে তিন চাকার গাড়িগুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাজ করছে।’ এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে গাজীপুর পর্যন্ত পরিবহনের চাপ থাকায় ধীরগতিতে চলে। একে যানজট বলা যাবে না। আর সিরাজগঞ্জে চার লেনের কাজ চলায় গাড়ির গতি কম। তবে আগের মতো চন্দ্রা-বাইপাইলে এখন পর্যন্ত যানজট তৈরি হয়নি। মানুষের নির্বিঘ্ন যাতায়াতের জন্য আমরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি।’

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক : সড়কপথে উত্তরবঙ্গের প্রায় ৩২ জেলার মানুষ রাজধানী ঢাকা ছাড়তে ব্যবহার করেন এ পথ। কয়েক বছর ধরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিমানবন্দর থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত সরকারের মেগা প্রকল্প বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) নির্মাণকাজ চলছে। এর মধ্যে গাজীপুরের টঙ্গী ব্রিজ থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খারাপ। সড়কের একদিকে চলছে উন্নয়নকাজ, অন্যদিকে সংকুচিত হয়ে যাওয়া সড়ক দিয়ে চলছে যানবাহন। এ কারণে সারা বছরই সড়কটিতে দিনরাতের অধিকাংশ সময় যানজটে আটকা থাকে মানুষ। ঈদের সময় সে যানজট বেড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এবারের ঈদযাত্রায় এ সড়কটি শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান পরিবহনসংশ্লিষ্টরা। গতকাল মহাখালী বাস টার্মিনালে কথা হয় ময়মনসিংহগামী এনা পরিবহনের চালক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে গাজীপুর পর্যন্ত যেতে কমপক্ষে তিন ঘণ্টা লাগে। কারণ মহাখালী, বনানী, এয়ারপোর্ট, উত্তরা, আবদুল্লাহপুর, টঙ্গী ও গাজীপুর পর্যন্ত প্রতিটি পয়েন্টে যানজটে আটকা পড়তে হয়। বিশেষ করে উত্তরা, টঙ্গী, গাজীপুরে বেশি সময় নষ্ট হয়। গাজীপুরের পর ময়মনসিংহ পর্যন্ত যেতে বেশি সময় লাগে না। সব মিলিয়ে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ পৌঁছতে লাগছে চার থেকে সাত ঘণ্টা পর্যন্ত।’

ঢাকা-নওগাঁ সড়ক : এ সড়কে ঢাকা থেকে বেরোবার পথে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত যানজট তো আছেই। একই সঙ্গে আশুলিয়া, বাইপাইল, চন্দ্রা, এলেঙ্গা পর্যন্ত প্রতিটি পয়েন্টে যানজটে পড়তে হয়। বঙ্গবন্ধু সেতুর পর সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়া সড়কে চার লেনের কাজ চলছে। এ কাজের জন্য ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বলে জানান পরিবহন চালকরা। এ বিষয়ে কথা হয় নওগাঁগামী শাহ ফাতেহ আলী পরিবহনের চালক নুরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মহাখালী থেকে আবদুল্লাহপুর যেতে লাগছে তিন-চার ঘণ্টা। আর আবদুল্লাহপুর থেকে বাইপাইল চার-পাঁচ ঘণ্টা। আর সিরাজগঞ্জ থেকে চার লেনের কাজ চলছে। এ কারণে এখানে বেশি যানজটে পড়তে হয়। সব মিলিয়ে এখন নওগাঁ পৌঁছতে লাগছে আট থেকে ১০ ঘণ্টা। কয়েকদিন আগে লাগত সাত-আট ঘণ্টা। ঈদের কারণে যানজট বেশি হচ্ছে।’

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে যানজটে পড়তে হয়। বিশেষ করে ঢাকা থেকে বের হয়ে কাঁচপুর, মদনপুর, সোনারগাঁ, মোগরাপাড়া পর্যন্ত যানজটে দীর্ঘ সময় আটকে থাকতে হয়। এ ছাড়া গৌরীপুর, ইলিয়টগঞ্জ, মাধাইয়া বাজার, চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড, নিমসার পাইকারি সবজিবাজার, ময়নামতি সেনানিবাস এলাকা, পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড, সুয়াগাজী বাজার, মিয়াবাজার, মিরসানি বাজার ও চৌদ্দগ্রাম বাজারে যানজট হয়। এসব স্থানে সংযোগ সড়ক থেকে আসা তিন চাকার বাহনও যানজট সৃষ্টি করে বলে জানান পরিবহন চালকরা। এ বিষয়ে কুমিল্লাগামী তিশা পরিবহনের চালক সাদেকুল ইসলাম বলেন, ‘একবার যানজট লেগে গেলে সেটা সহজে শেষ হয় না। এতে যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বিশেষ করে ঢাকা-মেঘনা পর্যন্ত যানজটে বেশি আটকে থাকতে হয়। যেখানে ঢাকা থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা, সেখানে যানজট লাগলে তিন-চার ঘণ্টা লেগে যায়। অনেক সময় এ পথ পার হতে ছয় থেকে আট ঘণ্টাও লাগে। কারণ বাজার এলাকায় গাড়ি চালাতে বেগ পেতে হয়। যদি হাইওয়ে পুলিশ বাজারগুলোয় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে, তিন চাকার যান বন্ধ রাখতে পারে এবং সড়ক বিভাগ সংস্কারকাজ বন্ধ রাখে তাহলে যানজটের সৃষ্টি হবে না।’ এদিকে গতকাল নারায়ণগঞ্জের মদনপুর থেকে সোনারগাঁও মোরগাপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৮ কি.মি. যানজট ছিল।

স্বস্তির যাত্রা পদ্মাপারের মানুষের : এবার ঈদযাত্রায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সিংহভাগ মানুষ পদ্মা সেতু ব্যবহার করবে। এ সেতু ব্যবহার করে ২১ জেলার মানুষ নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারবে। তবে ঢাকার প্রবেশ ও বের হওয়ার পথগুলো যানজটপ্রবণ হওয়ায় কিছুটা জনদুর্ভোগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর